ফরাক্কায় শূন্যে গুলি, মেনে নিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী

পুলিশ ‘নার্ভাস’ হয়ে গিয়েছিল। আর, তাই ছুটেছিল গুলি। রবিবার দুপুরে, বিদ্যুতের দাবিতে, ফরাক্কায় জাতীয় সড়ক অবরোধ তুলতে তাদের গুলি চালানোর ঘটনায় পুলিশের পাশেই দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

বিমান হাজরা

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৬ ০৪:১৭
Share:

ধুলিয়ানে বিডিও অফিসের সামনে বন্‌ধ সমর্থকেরা। — নিজস্ব চিত্র

পুলিশ ‘নার্ভাস’ হয়ে গিয়েছিল। আর, তাই ছুটেছিল গুলি।

Advertisement

রবিবার দুপুরে, বিদ্যুতের দাবিতে, ফরাক্কায় জাতীয় সড়ক অবরোধ তুলতে তাদের গুলি চালানোর ঘটনায় পুলিশের পাশেই দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী।

ফরাক্কার ওই ঘটনা নিয়ে, রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইন শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা রবিবারই জানিয়েছিলেন, পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত ছিল যে, তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে শূন্যে তিন রাউন্ড গুলি ছুড়তে হয়েছিল।

Advertisement

সোমবার, বিধানসভায় প্রেস কর্নারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ফরাক্কায় কিছু লোক জমায়েত হয়েছিল। সঙ্গে কংগ্রেসের আরও কিছু লোক যোগ দিয়েছিল। আমি পুলিশকে গুলি চালাতে বলি না। আমি গুলি চালাতে বলার লোক নই। কিন্তু ওরা হামলা করেছিল। আগুন লাগিয়েছিল। বাধ্য হয়েই নার্ভাস হয়ে পুলিশ দু’রাউন্ড গুলি চালিয়েছে।’’

তার জেরেই মারা গিয়েছিলেন নিতান্তই আটপৌরে এক গ্রামবাসী, জামাল শেখ। এ দিন সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ‘‘একটা ছেলের দেহ পাওয়া গিয়েছে। তবে, ঘটনাস্থল থেকে দু’শো মিটার দূরে। কোনও মৃত্যুই কাম্য নয়। সে যে দলই হোক। আমি ওর পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা সাহায্য করব।’’

মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যে যারপরনাই ক্ষুব্ধ ফরাক্কার বিধায়ক কংগ্রেসের মইনুল হক। তিনি বলেন, ‘‘একটা সাধারন গ্রামবাসীর মৃত্যুতেও রাজনীতি দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী। সন্দেহ পোষণ করছেন, কোন দলের বলে। ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার ঘোষণা করছেন এমন ভাবে যেন দয়া করছেন!’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যও মনে করছেন, ‘‘পুলিশের পাশে দাঁড়াতে তাদের সব কথাতেই মান্যতা দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। মৃত মানুষকে সৌজন্য দেখাতেও ভুলে গিয়েছেন তিনি।’’

অভিযোগ, রবিবার, পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। অভিযোগ, পুলিশের গুলিতে নিহত হন স্থানীয় এক যুবক। জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধে জখম হন ন’জন পুলিশকর্মী ও আট জন বাসিন্দা। তার জেরেই সোমবার জঙ্গিপুর মহকুমা জুড়ে বারো ঘণ্টার বনধ ডাকে বাম-কংগ্রেস।

যা শুনে রীতিমতো অস্বস্তিতে জেলা পুলিশের একাংশ। কারণ, রবিবার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অংশুমান সাহা জানিয়েছিলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল। পাল্টা গুলি ও বোমা ছোড়ে অবরোধকারীরাও। কার গুলিতে জামালের মৃত্যু হয়েছে তা অবশ্য খোলসা করেনি পুলিশ।

তবে, বিকেলে অবরোধ উঠে গেলেও গ্রামবাসীদের অভিযোগ, রবিবার রাত থেকে ফরাক্কার জিগরি এলাকায় তল্লাশির নামে শুরু হয়েছিল পুলিশি তাণ্ডব। তাঁরা জানান, পুলিশের ভয়ে বেশিরভাগ পুরুষ গ্রামছাড়া। যাঁরা ছিলেন তাঁদের ব্যাপক মারধর করার পাশাপাশি ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করে পুলিশ। তবে, অভিযোগ মানতে চাননি জেলা পুলিশের কোনও কর্তাই। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘তল্লাসি চলাতে গেলে একটু-আধটু হইচই তো হয়েই। ওই রাতে পুলিশ ২৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার ধৃতদের জঙ্গিপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ১৭ জনকে জেল হেফাজত ও ৬ জনকে দশ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

অন্য দিকে, বলিদাপুরের বাসিন্দা, নিহত জামালের বাবা সামেদ শেখের অভিযোগ, ছেলের দেহ পড়েছিল জঙ্গিপুর হাসপাতালে। অথচ তাঁদের দেখতে দেওয়া হয়নি। সোমবার ময়নাতদন্তের পরেও পরিবারের হাতে জামালের দেহ না দিয়ে তড়িঘড়ি পুলিশ কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করে। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘দেহ নিয়ে এলাকায় যাতে কেউ বিক্ষোভ দেখাতে না পারে সেই কারণেই এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন