Girl Child Killed

আবার কন্যা সন্তান! ডোমকলে সদ্যোজাতকে আছড়ে খুন, পুলিশি জেরায় হত্যার কথা কবুল বাবা-মায়ের

প্রচারের সঙ্গে কন্যাসন্তান নিয়ে সচেতনতা কি নিচুতলা পর্যন্ত পৌঁছেছে? বাস্তব যে অনেক ক্ষেত্রেই তা বলছে না, সেটা ডোমকলের ভাতশালার এই ঘটনায় আরও এক বার প্রমাণ হয়ে গেল বলে অনেকের অভিমত।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

ডোমকল শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:৫৬
Share:

অভিযুক্ত বাবা-মা। —নিজস্ব চিত্র।

পিছনে পড়ে রইল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মেয়েদের নিয়ে যাবতীয় কর্মসূচি, ঘোষণা এব‌ং প্রকল্প। মুর্শিদাবাদের ডোমকলের ভাতশালায় বেঘোরে মারা পড়ল তিন মাসের শিশুকন্যা। তাকে ‘আছড়ে খুনের’ দায়ে গ্রেফতার করা হল বাবা-মাকে!

Advertisement

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রের খবর, ভাতশালার রিন্টু শেখ কাজ করে কেরলে। মাস তিনেক আগে সে তার তৃতীয় কন্যাসন্তান জন্মের খবর পায়। সপ্তাহখানেক আগে গ্রামে ফেরে ওই পরিযায়ী শ্রমিক। অভিযোগ, ফের মেয়ে হওয়ায় স্ত্রীকে উঠতে-বসতে খোঁটা দিচ্ছিল সে। এরই মধ্যে রবিবার তিন মাসের শিশুটির দেহ রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। শিশুটির দাদু দবির শেখের অভিযোগ, তাঁর ছেলে রিন্টু আছড়ে খুন করেছে ছোট নাতনিকে। খুনে জড়িত পুত্রবধূও। দু’জনের বিরুদ্ধেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি। পুলিশ রিন্টু এবং তার স্ত্রী বেলুয়ারা বিবিকে এ দিন দুপুরে আটক করে। ডোমকল থানার পুলিশের দাবি, প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ভেঙে পড়ে তারা সন্তানকে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছে। রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

নারীর ক্ষমতায়নে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকার এবং রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার একগুচ্ছ প্রকল্প এনেছে। মেয়েদের সার্বিক অগ্রগতির লক্ষ্যে কেন্দ্রের ‘বেটি বচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্প রয়েছে। সংসদে এক-তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে সংসদে বিল পাশ করা হয়েছে সম্প্রতি। পিছিয়ে নেই রাজ্য সরকারও। নারী উন্নয়নে তাদের ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’ ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প রয়েছে। বহু মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে এ রাজ্যে। সেই গোষ্ঠীগুলিকে কাছে টানতে কেন্দ্রও সক্রিয় হয়েছে সম্প্রতি। কিন্তু এই সব প্রচারের সঙ্গে কন্যাসন্তান নিয়ে সচেতনতা কি নিচুতলা পর্যন্ত পৌঁছেছে? বাস্তব যে অনেক ক্ষেত্রেই তা বলছে না, সেটা ডোমকলের ভাতশালার এই ঘটনায় আরও এক বার প্রমাণ হয়ে গেল বলে অনেকের অভিমত। তাঁদের মতে, হয়তো একটি ঘটনা দিয়েই সরকারি প্রকল্পের সাফল্য বা ব্যর্থতা জরিপ করা অনুচিত। কিন্তু, বহু ক্ষেত্রেই কন্যাসন্তানের প্রতি অনীহা, তাদের পড়াশোনা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে অবহেলা জানান দেয় যে, সরকারি প্রকল্প ও প্রচার সত্ত্বেও এই বিষয়ে সচেতনতা এখনও সমাজের এক বড় অংশের মধ্যে অনুপস্থিত।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর সাতেক আগে রিন্টুর বিয়ে হয়েছিল ডোমকলের কামুড়দিয়াড়ের বাসিন্দা বেলুয়ারার সঙ্গে। চার বছর আগে তাঁদের প্রথম সন্তান জন্মায়। মেয়ে। পরের সন্তানটিও মেয়েই। তিন মাস আগে তৃতীয় বার কন্যার জন্ম দেন বেলুয়ারা। পড়শিদের একাংশের দাবি, দুই মেয়েকে নানা অজুহাতে মারধর করত রিন্টু। কিছু দিন আগে সে মেরে বড় মেয়ের হাত ভেঙে দিয়েছিল বলে পড়শিদের অভিযোগ। তার মারে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিল মেজো মেয়েও। বড় জনের চার বছর। মেজো জনের আরও কম।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুরে তিন মাসের শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বাড়ির লোকজন দেখেন, ঘরে লেপের তলায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে সে। বেলুয়ারাকে চেপে ধরা হলে সে বলতে থাকে, ‘‘মেয়েকে খাটে শুইয়ে আমি দাওয়ায় রান্না করছিলাম। কী হয়েছে, জানি না।’’ রিন্টুর বাবা যদিও বারবারই দাবি করেন, ‘‘তৃতীয় বার মেয়ে হওয়ার পর থেকে ছেলে-বৌমার ঝামেলা লেগেই থাকত। ছেলে নিয়মিত নেশা করে। ছেলেই ছোট নাতনিকে খুন করেছে। পুত্রবধূ সব জেনেও ওকে আড়াল করছে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, রিন্টু নিয়মিত মাদক নেয়। চুরির অভিযোগে সে আগে গ্রেফতারও হয়েছে। ডোমকলের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক শুভম বাজাজ বলেন, ‘‘মামলা রুজু
হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।’’ এ প্রসঙ্গে ডোমকল গার্লস কলেজের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক প্রিয়ঙ্কর দাস বলেন, ‘‘আর্থিক ভাবে দুর্বল এবং শিক্ষার অভাব যেখানে আছে, সেখানেই কন্যাসন্তান হত্যা, ভ্রূণ হত্যা ঘটছে। আর্থিক উন্নয়ন এবং সচেতনতাই একমাত্র এটা বন্ধ
করতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন