Coronavirus

১১৪৬ কিমি ঘুরেও ‘মিলল না’ জরুরি চিকিৎসা!

দশ দিন রাখার পরে মেডিক্যাল ওই রোগীকে কোভিড নেগেটিভ হিসেবে ছুটি দিলেও বাঙুর ইনস্টিটিউট আর তাঁকে ভর্তি নিতেই চায়নি বলে অভিযোগ।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২০ ০২:৫৪
Share:

কোভিড নেগেটিভ লেখা (চিহ্নিত) এই ডিসচার্জ সার্টিফিকেট দেখালেও হাসপাতাল ভর্তি নিতে চায়নি বলে অভিযোগ।

একটি পরিবারের ৪৩ দিনের অভিজ্ঞতা:

Advertisement

রোগীকে নিয়ে পেরোতে হয়েছে: যাতায়াতে প্রায় ১১৪৬ কিলোমিটার রাস্তা।

ঘুরতে হয়েছে: এক সরকারি হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালের অন্তত আটটি ওয়ার্ড।

Advertisement

খরচ হয়েছে: অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া-সহ লক্ষাধিক টাকা।

চিকিৎসা: অস্ত্রোপচার করানো যায়নি। বরং কোভিড সংক্রমিত হয়েছেন রোগী।

শিলিগুড়ির আমবাড়ি থেকে কলকাতায় আসা পূর্ণিমা সরকার নামে বছর ছেচল্লিশের এক ব্রেন টিউমারের রোগীর এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে অভিযোগ। তাঁর পরিবারের দাবি, দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন জানিয়ে এসএসকেএম হাসপাতাল ওই রোগীকে ভর্তি নিলেও পরের ৪৮ দিনে চিকিৎসার কিছুই হয়নি। শেষে বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস থেকে কোভিড রোগী হিসেবে ওই মহিলাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দশ দিন রাখার পরে মেডিক্যাল ওই রোগীকে কোভিড নেগেটিভ হিসেবে ছুটি দিলেও বাঙুর ইনস্টিটিউট আর তাঁকে ভর্তি নিতেই চায়নি বলে অভিযোগ। দু’দিন হাসপাতাল চত্বরে রোগীকে ফেলে রাখার পরে শনিবার গভীর রাতে অ্যাম্বুল্যান্সে রোগীকে নিয়ে শিলিগুড়ি ফিরে গিয়েছে তাঁর পরিবার।

পূর্ণিমাদেবীর মেয়ে রিয়া রবিবার সকালে বলেন, ‘‘শনিবার ইদ আর রবিবারের ছুটির পরেও কবে মাকে ভর্তি নেওয়া সম্ভব, বলা যাবে না জানিয়ে দেয় এসএসকেএম। যে হোটেলে এত দিন ছিলাম, সেখানকার মালিক মাকে করোনা রোগী ভেবে হোটেলে ঢুকতে দিতে রাজি হননি। সঙ্গের টাকাও শেষ হয়ে গিয়েছিল। শেষে বাড়ি ফিরে আসা ছাড়া আর উপায় ছিল না।’’

আরও পড়ুন: ‘বাক্সের ভিতর কঙ্কালের সংখ্যা আরও বাড়বে’! ফের খোঁচা রাজ্যপালের

পূর্ণিমাদেবীর পরিবার সূত্রের খবর, ১৯ জুন এসএসকেএম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। তখন তাঁর কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তবে সেখানে কয়েক জন রোগীর করোনা ধরা পড়ায় ৪ জুলাই অন্যদের সঙ্গে পূর্ণিমাদেবীকেও ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। কয়েক দিন তাঁকে হোটেলে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়। ১৪ জুলাই এসএসকেএমের জরুরি বিভাগ থেকে বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেসে তাঁকে পাঠানো হলে ভর্তি নেওয়া হয়। ১৭ জুলাই সেখানেই তাঁর অস্ত্রোপচারের দিন দেওয়া হয়। ওই দিন সকালে পূর্ণিমাদেবীর পরিবারকে জানানো হয়, রোগীর করোনা পজ়িটিভ। তাঁকে মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হচ্ছে।

১৭ থেকে ৩১ জুলাই— ১৪ দিন ভর্তি থাকার পরে কোভিড নেগেটিভ হিসেবে পূর্ণিমাদেবীকে ছুটি দেয় মেডিক্যাল। কিন্তু সেই রিপোর্ট দেখেও বাঙুর ইনস্টিটিউট রোগীকে আর ভর্তি নিতে চায়নি বলে অভিযোগ রোগীর পরিবারের। তারা জানাচ্ছে, ৩১ জুলাই শুক্রবার বাঙুর ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে গেলে বলা হয়, রোগী যে করোনা নেগেটিভ তা মেডিক্যালের চিকিৎসককে দিয়ে লিখিয়ে আনতে হবে। সেই মতো ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে রোগী কোভিড নেগেটিভ লিখিয়ে নিয়ে গেলে বলা হয়, ‘‘এই লেখায় হবে না। মেডিক্যালের স্ট্যাম্প দিয়ে আনতে হবে।’’ রিয়ার বক্তব্য, ‘‘মেডিক্যালের করোনা জ়োনের চার-পাঁচটি বিল্ডিং ঘুরে কোনও মতে স্ট্যাম্প করিয়ে নিয়ে গেলে আমাদের বলা হয়, বহির্বিভাগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শনিবার আসুন। শনিবার জানানো হয়, ইদের জন্য বহির্বিভাগ বন্ধ। সামনের সপ্তাহে আসুন।’’

রিয়া জানান, তাঁরা যে হোটেলে উঠেছিলেন, সেখানকার মালিক ওই রাতে আর তাঁর মাকে ঢুকতে দিতে রাজি হননি। হাসপাতাল চত্বরেই রোগীকে নিয়ে রাত কাটান তাঁরা। রোগীর পরিবারের অভিযোগ, শনিবার এসএসকেএমের সুপারের সঙ্গে কথা বললে, তিনিও মঙ্গলবারের আগে কিছুই করা সম্ভব নয় বলে জানান।

এসএসকেএমে সুপার রঘুনাথ মিশ্রের দাবি, ‘‘ওই রোগীর পরিবারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কিন্তু বহির্বিভাগে দেখাতে বলা ছাড়া তাঁকে ভর্তি করানোর উপায় আমার ছিল না।’’ একাধিক বার ঘোরানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কেন ঘোরানো হয়েছে সেটা তদন্ত করে দেখা হবে।’’

আরও পড়ুন: এক দিনে মৃত্যু-আক্রান্ত সর্বাধিক, আশা জাগাচ্ছে সুস্থতার হার

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন