উধাও মনপসন্দ চ্যানেল, বিপাকে কেব্‌ল অপারেটররা

এখনও পাড়ার গ্রাহকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় আছে তাই রক্ষে! কিন্তু এ অবস্থা আরও কিছু দিন চললে কী হবে ভেবে দুশ্চিন্তায় অনিল বদলানি। দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুর এলাকার কম-বেশি ৬০০ লোকের টিভি-র কেব্‌ল অপারেটর তিনি। কয়েক দিন ধরে গ্রাহকদের বিস্তর অভিযোগ শুনতে হচ্ছে তাঁকে। অনিল বলছেন, ‘‘টাকা দিয়েও পছন্দের চ্যানেলে সিরিয়াল দেখতে না পেয়ে পাড়ার লোক আমায় মারধর না করে। কবে যে সমস্যা মিটবে, জানি না।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০০
Share:

এখনও পাড়ার গ্রাহকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় আছে তাই রক্ষে! কিন্তু এ অবস্থা আরও কিছু দিন চললে কী হবে ভেবে দুশ্চিন্তায় অনিল বদলানি।

Advertisement

দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুর এলাকার কম-বেশি ৬০০ লোকের টিভি-র কেব্‌ল অপারেটর তিনি। কয়েক দিন ধরে গ্রাহকদের বিস্তর অভিযোগ শুনতে হচ্ছে তাঁকে। অনিল বলছেন, ‘‘টাকা দিয়েও পছন্দের চ্যানেলে সিরিয়াল দেখতে না পেয়ে পাড়ার লোক আমায় মারধর না করে। কবে যে সমস্যা মিটবে, জানি না।’’

আসানসোলের সত্যভূষণ গরাই রোড এলাকার এক কেব্‌ল অপারেটর এই পরিস্থিতিতে ‘য পলায়তি, স জীবতি’ নীতি বেছে নিয়েছেন। বুধবার দুপুর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ। পারতপক্ষে বাড়ি ঢুকছেন না। বহু কষ্টে সন্ধের দিকে এক পরিচিতের মাধ্যমে তাঁকে ফোনে ধরা গেল। তিনি জানালেন, স্রেফ একটি গোষ্ঠীর চ্যানেল নয়, যাদের মাধ্যমে বিভিন্ন চ্যানেল দেখানো হয় সেই মাল্টি সার্ভিস অপারেটর (এমএসও)-এর সিগন্যালটাই গায়েব।

Advertisement

গোলমালের সূত্রপাত কিছু পছন্দের টিভি চ্যানেল দেখতে না-পাওয়া নিয়ে। ৬ জানুয়ারি থেকে হঠাৎ অনেকের টিভি-র পর্দা থেকে অদৃশ্য হয়েছে স্টার-এর বিভিন্ন চ্যানেল। যাঁদের মাধ্যমে চ্যানেলগুলি দেখানো হয়, সেই মাল্টি-সার্ভিস অপারেটর (এমএসও)-দের অন্যতম মন্থন ব্রডব্যান্ড সার্ভিসেস-এর গ্রাহক কেব্‌ল অপারেটররা কেউই চ্যানেলগুলি দেখাতে পারছেন না। কেব্‌ল অপারেটরদের অনেকেরই অভিযোগ, গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মন্থনকে তা দেওয়া হলেও সম্প্রচারে ব্যাঘাত ঘটছে কিংবা বেশ কিছু জনপ্রিয় চ্যানেল দেখা যাচ্ছে না। তাঁরা জানাচ্ছেন, গোটা রাজ্যে মন্থনের গ্রাহক প্রায় হাজার দেড়েক কেব্‌ল অপারেটর। স্রেফ কলকাতার আশপাশে অন্তত ৫-৬ লক্ষ লোক মন্থনের মাধ্যমে টিভি দেখেন। তাঁদের অনেকেই পছন্দের চ্যানেল দেখতে না পেয়ে ক্ষুব্ধ।

স্টার-এর তরফে বিবৃতিতে প্রকাশ, বকেয়া টাকা না মেটানোয় মন্থন-এর সিগন্যাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ রাজ্যে স্টারের বিভিন্ন চ্যানেলের কর্তারা বিষয়টি নিয়ে
মুখ খুলতে চাননি। মন্থন-এর ডিরেক্টর সুদীপ ঘোষ অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, দিন কয়েকের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে।

কিন্তু কেন এমন পরিস্থিতি হল?

জবাবে সুদীপবাবু বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকের মাধ্যমে ডিজিটাল সম্প্রচার পরিষেবা রূপায়ণ নিয়ে অনেক দিনই টালবাহানা চলছে। এই কাজ পুরোটা সারা না-হলে গ্রাহকদের সংখ্যা কত তা ঠিকঠাক বোঝা মুশকিল। ব্রডকাস্টার চ্যানেলকে টাকা মেটানোর আগে আমাদেরও বিষয়টা বুঝতে হবে। এই নিয়ে একটু বিভ্রান্তি রয়েছে।’’

কিন্তু সুদীপবাবুর আশ্বাসে কেব্‌ল অপারেটরদের সমস্যা মিটছে না। কয়েকটি এলাকায় গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে চোরাপথে স্টার-এর চ্যানেল দেখানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ। শহরতলির একটি থানায় কয়েক জন কেব্‌ল অপারেটরের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। রাজ্যে কেব্‌ল অপারেটরদের সংগ্রাম অ্যাসোসিয়েশন-এর কর্তা অপূর্ব ভট্টাচার্যও ঘোর দুশ্চিন্তায়। শিলিগুড়ি ও রিষড়ায় কয়েক জন পরিচিত কেব্‌ল অপারেটরকে সকাল থেকে ফোনে না-পেয়ে জেরবার তিনি। তিনি বললেন, ‘‘কিছু করার নেই। লোকের অভিযোগ থেকে বাঁচতেই বোধহয় বেচারিরা ফোন বন্ধ রেখেছে।’’

স্টার-এর চ্যানেলে বাংলা, হিন্দিতে একাধিক জনপ্রিয় সিরিয়াল দেখানো হয়। তাছাড়া দিন কয়েকের মধ্যে শুরু হবে ভারত-ইংল্যান্ড ওয়ান ডে সিরিজ। এই পরিস্থিতিতে কলকাতায় স্টারের আঞ্চলিক অফিসে ধর্না দেওয়ার কথা ভাবছেন কেব্‌ল অপারেটররা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন