দু’জনেই জঙ্গি! অবাক লায়েকপাড়া

লালবাজারের খবর, ধৃত চার জনের মধ্যে মহম্মদ জিয়াউর রহমান ওরফে মহসিন, মামুনুর রশিদ, মহম্মদ শাহিন আলম ওরফে আলামিন বাংলাদেশের বাসিন্দা এবং রবিউল ইসলামের বাড়ি বীরভূমের নয়াগ্রামে।

Advertisement

নুরুল আবসার ও সুব্রত জানা

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৯ ০১:৫৫
Share:

আস্তানা: এই মার্কেটর পিছনের তিনটি ঘর ভাড়া নিয়েছিল মামুনুর রশিদ ও মহম্মদ শাহিন। নিজস্ব চিত্র

সকলের সঙ্গেই তারা ভাল ব্যবহার করত। সকাল থেকে গৃহস্থালির জিনিস ফেরি করে সন্ধ্যায় ফিরত। তারাই জঙ্গি! এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না উলুবেড়িয়ার তেহট্ট লায়েকপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা।

Advertisement

মঙ্গলবার শিয়ালদহ এবং হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি-র চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। তাদের মধ্যে মামুনুর রশিদ এবং মহম্মদ শাহিন আলম ওরফে আল‌ামিন ওই লায়েকপাড়া গ্রামেরই মল্লিক জয়প্রিয় সুপার মার্কেটের পিছন দিকের তিনটি ঘর ভাড়া নিয়ে মাসখানেক ধরে থাকছিল। এলাকায় যে জঙ্গিরা ডেরা বেঁধেছে, টের পাননি লায়েকপাড়ার বাসিন্দারা।

এক মহিলা বলেন, ‘‘ওদের একজনের থেকে কত টুকিটাকি জিনিস কিনেছি। কী করে জানব এই কাণ্ড!’’ আর এক মহিলার কথায়, ‘‘আমরা বিকেলে যখন রাস্তার কলে জল নিতাম, নিজের ভ্যানরিকশা নিয়ে ফিরত মামুনুর। ভদ্র ভাবে আমাদের সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করত। যাতে ভ্যানরিকশা যাওয়ার পথ পায়। ও কিনা জঙ্গি!’’ মামুনুর ভ্যানরিকশায় এবং শাহিন সাইকেলে জিনিসপত্র ফেরি করত।

Advertisement

নামে সুপার মার্কেট হলেও লায়েকপাড়ার ওই জায়গাটি নির্জন। পিছনে বাঁশবন। আশপাশে দু’একটি বাড়ি থাকলেও এলাকায় আর কোনও দোকান নেই। একতলা সুপার মার্কেটে পর পর পাঁচটি দোকানঘর। তারমধ্যে একটিতে মুদিখানার দোকান চলে। সেটির মালিক সিরাজুল মল্লিক সুপার মার্কেটের মালিক। বাকি চারটি দোকানঘর ভাড়ায় দেওয়া আছে। পিছনের তি‌নটি ছোট ঘরের জন্য মামুনুররা মাসে ২৪০০ টাকা ভাড়া দিত বলে সিরাজুল জানান।

সিরাজুল অবশ্য এখানে থাকেন না। প্রায় এক কিলোমিটার দূরে রাজখোলা গ্রামে তাঁর বাড়ি। সিরাজুল বলেন, ‘‘পাঁচ সপ্তাহ আগে ওরা এসে ঘর ভাড়া চায়। বলে ওরা ফেরিওয়ালা। ওরা আমাকে ভোটার কার্ড দেখিয়েছিল। ফলে, আপত্তি করিনি। এর মধ্যে তারা ইদের সময়ে বাড়ি চলে যায়। ফিরে আসার কয়েকদিনের মধ্যে ধরা পড়ল। ওরা যে জঙ্গি হতে পারে, আমার কোনও সন্দেহ হয়নি। তবে অন্যায় যেহেতু করেছে, সাজা নিশ্চয় পাবে।’’

লালবাজারের খবর, ধৃত চার জনের মধ্যে মহম্মদ জিয়াউর রহমান ওরফে মহসিন, মামুনুর রশিদ, মহম্মদ শাহিন আলম ওরফে আলামিন বাংলাদেশের বাসিন্দা এবং রবিউল ইসলামের বাড়ি বীরভূমের নয়াগ্রামে। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, ধৃতদের প্রত্যেকেরই ফেসবুকে পাঁচ-ছ’টি করে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সেগুলি থেকেই নতুন নতুন যুবকের মগজ ধোলাই করা হত। এর জন্য ফেসবুকে কয়েকটি গ্রুপও তৈরি করা হয়েছিল।

কিন্তু সে সব কিছুই বুঝতে পারেনি লায়েকপাড়া। দু’দিন আগে পুলিশ মামুনুর এবং শাহিনকে লায়েকপাড়ায় এনে তাদের তিনটি ঘরে তল্লাশি চালায়। তাদের ভোটার কার্ড বাজেয়াপ্ত করে। পুল‌িশের সন্দেহ, ভোটার কার্ড জাল। তিনটি ঘর পুলিশ ‘সিল’ করে দেয়। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে এরা জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে জড়িত। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। তাই ধৃতেরা ভারতে পালিয়ে এসে গা ঢাকা দেয়। ফের বাংলাদেশে পালানোর ছক কষেছিল তারা। কিন্তু তার আগেই পুলিশের জালে ধরা পড়ে।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন