থইথই: জলের তলায় পথঘাট। সোমবার ঝাড়গ্রামের রঘুনাথপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
রাতভর টানা বৃষ্টিতে জল থইথই অরণ্যশহর টের পেল বিক্ষোভের আঁচ। চলল ভাঙচুর। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের ঠিক দু’দিন আগে।
রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত প্রায় দশ ঘণ্টা নাগাড়ে বৃষ্টিতে ঝাড়গ্রাম পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের প্রায় সবক’টিতে জল জমেছিল। ডুবেছিল রেললাইন। কিছু বাড়িতেও জল ঢুকে যায়। এমন অবস্থায় পুরনো ঝাড়গ্রামের জলবন্দি বাসিন্দাদের একাংশ এ দিন ভাঙচুর চালান পর্যটন দফতরের রাজবাড়ি ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সে। ঝাড়গ্রামে এলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অতিথিশালায় থাকেন। সেখানেই ইট-পাথর ছুড়ে, বাঁশের লাঠির ঘায়ে ভাঙচুর চলে। রেহাই পায়নি মুখ্যমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ‘সুবর্ণরেখা’ কটেজও। পুলিশের সামনেও ভাঙচুর চলে। ভাঙা হয় অতিথিশালার রিসেপশনের দরজা-জানলার কাচ, ডাইনিং হলের বাহারি কাচের দেওয়াল।
আগামী বুধবার ঝাড়গ্রামে পৌঁছনোর কথা মমতার। বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক সভা। তার আগে জলবন্দিদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তপন সিংহ এবং ঝাড়গ্রামের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান সুকমার হাঁসদাও।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, রাজবাড়ি লাগোয়া কাঁচা নিকাশি নালার (ডুমুর নালা) কিছুটা অংশ ঢালাই করে তার উপরেই তৈরি হয়েছে ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স। ফলে, জল যেতে পারছে না। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে অতিথিশালা চালুর পরে পুরসভা নালা সংস্কারও করেনি। পুরনো ঝাড়গ্রামের বাসিন্দারা দাবি তোলেন, সরকারি অতিথিশালার পাঁচিল ও গার্ডওয়াল ভেঙে ডুমুর নালার জল যাতায়াত সহজ করতে হবে। পে লোডার এলেও শেষমেশ কিছু ভাঙা হয়নি। জেলাশাসক আয়েষা রানি ও পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌর আসার পরে নালা কিছুটা পরিষ্কার করা হয়। বেলায় বৃষ্টিও ধরে যায়। ক্রমে নেমে যায় জল। পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেবের দাবি, ‘‘টানা বৃষ্টিতেই কিছু এলাকায় জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।’’ তবে বিধায়ক সুকুমার বলেন, “শহরের নিকাশি সমস্যা মেটাতে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মানুষের দুর্ভোগের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।” নিকাশি সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসকও।
প্রবল বৃষ্টিতে ঝাড়গ্রামে দু’জনের মৃত্যুও হয়েছে। সোমবার সাঁকরাইল ব্লকের খামারমহুলি গ্রামে খালে ডুবে মৃত্যু হয় রবীন্দ্রনাথ মুর্মু (৪১)-র। রবিবার বেলিয়াবেড়া এলাকায় দেওয়াল চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন সুধীর পাইকিরা (৫০)। তাঁর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপরের বেলদার সোহাগপুরে।