ফাইল চিত্র।
তথ্য চেপে না রেখে ডেঙ্গি দমনে রাজ্য সরকার নাগরিকদের সচেতন করে তাঁদেরও কেন কাজে লাগাচ্ছে না, কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের করা জনস্বার্থের মামলায় সেই প্রশ্ন তোলা হল। চাওয়া হয়েছে ক্ষতিপূরণও।
বুধবার হাইকোর্ট মামলা করার অনুমতি দেওয়ার পরে এ দিন তিনটি জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। দেবর্ষি চক্রবর্তী নামে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের এক গবেষকের হয়ে তাঁর আইনজীবী সুভাষ ভট্টাচার্য ও শুভাশিস চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার একটি জনস্বার্থ মামলা করেন। সেই মামলার আবেদনেই বলা হয়েছে, রোগ মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থ— এমন অভিযোগ কেউ করছেন না। তবে নাগরিকদের সঠিক তথ্য জানালে তাঁরা যেমন সচেতন হতে পারবেন, ডেঙ্গি মোকাবিলায় সরকারও তাঁদের সামিল করতেও পারবে।
হাইকোর্টে দেবর্ষির আবেদন— পুরসভা-পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সরকারকে প্রচার করতে বলা হোক। প্রচার করা হোক, জ্বর এলে কোন ধরনের রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। সেই পরীক্ষায় যদি প্রমাণ হয় ডেঙ্গি হয়েছে, তা হলে তা গোপন না-করে যা করণীয়, তার পরামর্শ দেওয়া হোক। তাতে মানুষের আস্থা ফিরবে, আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।
এ ছাড়াও এ দিন ডেঙ্গি নিয়ে সঠিক তথ্য সরবরাহ, দ্রুত চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে আরও দু’টি জনস্বার্থের মামলা দায়ের হয়েছে হাইকোর্টে। একটি মামলার আবেদনকারী আইনজীবী রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। তৃতীয়টি করেছেন শুভঙ্কর চক্রবর্তী নামে এক জন।
দেবর্ষিবাবু তাঁর আবেদনে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ২৯ অক্টোবরের রিপোর্টটি জুড়ে দেন। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যে ওই দিন পর্যন্ত দশ হাজারেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। সাত বছরে রাজ্যে ডেঙ্গিতে কত জনের মৃত্যু হয়েছে, সেই পরিসংখ্যানও দিয়েছেন দেবর্ষিবাবু। বলা হয়েছে, ডেঙ্গিকে ‘অজানা জ্বর’ অ্যাখ্যা দেওয়াটা চিকিৎসা বিজ্ঞানকে অসম্মানের সামিল। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে। ভাল চিকিৎসকেরও অভাব নেই। চিকিৎসকেরা যেন যাবতীয় চাপ অগ্রাহ্য করে চিকিৎসায় মনোযোগী হন, সেই ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।
ওই গবেষকের আবেদন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে দিয়ে রক্তদান শিবির করিয়ে প্লেটলেট সরবরাহ বাড়াতে সরকারকে নির্দেশ দিক আদালত। গ্রামে রক্ত পরীক্ষার ভ্রাম্যমাণ গাড়ি পাঠানো হোক। সেখানে প্লেটলেট সরবরাহ বাড়ানো হোক। ডেঙ্গির চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আলাদা শয্যার আবেদনও করেন তিনি।
আর একটি মামলার আবেদনকারী আইনজীবী রবিশঙ্করবাবু জানান, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশিকা মেনে রাজ্যকে ডেঙ্গির সঠিক চিকিৎসার নির্দেশ দিতে বলা হয়েছে আদালতকে। কেন সরকার ডেঙ্গি আক্রান্ত ও মৃতের সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে না, সেই প্রশ্ন তুলে রাজ্যকে হলফনামা পেশের নির্দেশ দিতেও আর্জি জানানো হয়েছে।
তৃতীয় আবেদনকারী শুভঙ্কর চক্রবর্তীর আইনজীবী পার্থ ঘোষ জানান, তাঁর মক্কেল মামলার আবেদনে ডেঙ্গি আক্রান্তদের পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, চিকিৎসার জন্য কমবেশি ওই টাকা খরচ হচ্ছে। এ ছাড়া রাজ্যকে মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করে দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা
করতে নির্দেশ দেওযার আবেদনও করা হয়েছে।