মধ্য কলকাতার একটি হোটেল থেকে কোকেন-সহ এক নাইজেরীয়কে গ্রেফতারের পরে শহরে ফের ‘রেভ পার্টি’র ছায়া দেখছে পুলিশ। ওই নাইজেরীয় গিরিশ পার্কের এক যুবকের কাছে রেভ পার্টির জন্য মাদক পৌঁছে দিতে কলকাতায় এসেছিল বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। ওই যুবকের সন্ধান পেলেই শহরে মাদকের নতুন চক্রের হদিস মিলবে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
গত ৫ মে গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের একটি হোটেল থেকে অ্যানিতি উকিম নামে ওই নাইজেরীয়কে গ্রেফতার করে বৌবাজার থানার পুলিশ। তার কাছ থেকে ২৫ গ্রাম কোকেন উদ্ধার হয়। যার আন্তর্জাতিক বাজারদর ২০ লক্ষ টাকার বেশি বলে পুলিশের দাবি।
বছর তিনেক আগে শহরে কোকেন-চক্রের হদিস পেয়েছিল লালবাজার। সেই সূত্র ধরে একের পর এক জায়গায় হানা দিয়ে কলকাতায় একাধিক রেভ পার্টির সন্ধান পেয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের নার্কোটিক শাখার অফিসারেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ওই সব রেভ পার্টির সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাদক-চক্রেরও যোগসাজশ সামনে এসেছিল। গ্রেফতার করা হয়েছিল তিন নাইজেরীয়কে। সেই তল্লাশি-হানার পরেই শহরে কোকেনের সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে পুলিশের দাবি। আগে ধৃত বিদেশি মাদক পাচারকারীদের সঙ্গে অ্যানিতির কাজকর্মের মিল রয়েছে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। বছর তিনেক আগে ধৃত ওই নাইজেরীয়রা দিল্লিতেই প্রথমে ঘাঁটি গেড়েছিল। সেখান থেকে জুতোয় বা পায়ুতে লুকিয়ে মাদক ট্রেনে করে কলকাতায় নিয়ে এসে বিভিন্ন খদ্দেরদের পাচার করত। অ্যানিতিও জুতোয় লুকিয়ে কলকাতায় মাদক নিয়ে আসে।
পুলিশের অনুমান, মূলত ই এম বাইপাস সংলগ্ন এলাকা এবং আলিপুরে ওই রেভ পার্টি চলছে। তবে তার চেহারা কিছুটা বদলে গিয়েছে। তল্লাশি শুরু হওয়ার পরে এখন আর ২০-২৫ জনকে সঙ্গে নিয়ে ওই পার্টি হচ্ছে না। পরিবর্তে কোনও নৈশ পার্টির শেষে ঘনিষ্ঠ সাত-আট জন কোনও ফাঁকা ফ্ল্যাটে জড়ো হচ্ছেন। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘আগে থেকে ওই পার্টির স্থান ঠিক থাকে না। নৈশ পার্টির মধ্যেই কথা বলে ঠিক করে নেওয়া হয়। তাই পুলিশের পক্ষে ওই পার্টির সন্ধান পাওয়া কঠিন হয়ে উঠছে। এই ধরনের পার্টিতেই কোকেনের মতো চড়া দামের মাদক ব্যবহার করা হয়।’’ এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘অ্যানিতির দেওয়া তথ্য মতো ওই যুবকের সন্ধান পেলেই শহরের কোথায় কোথায় রেভ পার্টি শুরু হয়েছে তার সন্ধান মিলবে।’’
পুলিশের দাবি, জেরায় অ্যানিতি জানিয়েছে, সে দিল্লিতে আশ্রমনগরে আরও কয়েক জন নাইজেরীয়র সঙ্গে থাকত বেশ কয়েক বছর ধরে। মূলত পড়াশোনা করতেই তাদের এ দেশে আসা বলে তার দাবি। ধৃত অ্যানিতি পুলিশকে জানিয়েছে, সে দিল্লিতে একটি বেসরকারি সংস্থায় অ্যানিমেশনের ছাত্র ছিল। তবে তার কোনও প্রমাণ সে দেখাতে পারেনি বলেই পুলিশ সূত্রের খবর। পুলিশের দাবি, এর আগেও বেশ কয়েক বার কলকাতায় এসেছিল অ্যানিতি। এপ্রিল মাসেও সে মাদক নিয়ে ট্রেনে করে এই শহরে আসে।