কোর্টই সংগঠন ফিরিয়ে দেবে, আশায় পুলিশ

তৃণমূল সরকার ২০১২ সালের জানুয়ারিতে পুলিশকর্মীদের বিভিন্ন সংগঠন বাতিল করে দেয়। ওই বছরেই রাজ্যের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য এবং কলকাতা পুলিশের তিনটি সংগঠন— পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন, নন-গেজেটেড পুলিশ কর্মচারী সমিতি এবং কলকাতা পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৯ ০৩:৫৭
Share:

—ফাইল চিত্র।

কলকাতা হাইকোর্টে স্থায়ী প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হওয়ায় আশার আলো দেখছেন ‘সংগঠন’ করার অধিকার খোয়ানো পুলিশকর্মীরা। পুলিশকর্মীদের একাংশের আশা, প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল ভাস্করন নায়ার রাধাকৃষ্ণনের ডিভিশন বেঞ্চ সংগঠন সংক্রান্ত মামলার দ্রুত শুনানি করে দ্রুত তাঁদের সংগঠন করার অধিকার ফিরিয়ে দেবে। গরমের ছুটির পরে, জুনে ওই মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা।

Advertisement

তৃণমূল সরকার ২০১২ সালের জানুয়ারিতে পুলিশকর্মীদের বিভিন্ন সংগঠন বাতিল করে দেয়। ওই বছরেই রাজ্যের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য এবং কলকাতা পুলিশের তিনটি সংগঠন— পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন, নন-গেজেটেড পুলিশ কর্মচারী সমিতি এবং কলকাতা পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। মূল মামলাটি করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। পরে সেই মামলায় যুক্ত হয় অন্য দুই সংগঠন। তাদের আবেদনের ভিত্তিতে ২০১৩ সালে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত রাজ্যের নির্দেশ খারিজ করে দেন। সরকার সেই রায়ের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করে। পুলিশকর্মীরা জানান, বিচারপতি দত্তের রায়ের উপরে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি।

সংগঠনগুলির কর্তারা জানান, ২০১৪ সাল থেকে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলার শুনানি হচ্ছে। কিন্তু তা নিয়মিত না-হওয়ায় তাঁরা সংগঠন করার অধিকার ফিরে পাচ্ছেন না। একটি সংগঠনের এক কর্তা জানান, মামলাটি প্রথমে হয়েছিল প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে। ২০১৫ সালের জুনে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের তিনটি সংগঠনের কাজকর্মের উপরে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সরকার সেই নির্দেশ মানেনি বলে অভিযোগ। সংগঠন করার প্রয়োজন কী, বিচারপতি চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চ পুলিশকর্মীদের সংগঠনগুলির কাছে জানতে চেয়েছিল। সরকার আদালতে প্রস্তাব দিয়েছিল, পুলিশকর্মীরা পদমর্যাদা অনুযায়ী বিভিন্ন স্তরে আলাদা সংগঠন করতে পারেন।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবী সোমনাথ বসু সোমবার বলেন, ‘‘রাজ্যের ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করা হয়। কারণ, প্রতিটি র‌্যাঙ্ক (স্তর বা পদমর্যাদা)-এ পৃথক সংগঠন গড়া হলে আসল উদ্দেশ্য নষ্ট হবে।’’

সংগঠনগুলির তরফে জানানো হয়েছে, এপ্রিলে হাইকোর্টে স্থায়ী প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হয়েছেন। আইনজীবীদের কর্মবিরতি শুরু হওয়ার আগে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির জন্য মামলাটি তালিকাভুক্ত হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি গরমের ছুটির পরে মামলাটি শুনবেন বলে জানিয়েছেন। নন-গেজেটেড পুলিশ কর্মচারী সমিতি এবং কলকাতা পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, গরমের ছুটির পরে আদালত খুললেই দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন করা হবে।

পুলিশ সংগঠনগুলির অভিযোগ, সংগঠনের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে নিচু তলার কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা, অভাব-অভিযোগ নিয়ে প্রশাসনের শীর্ষ মহলে বলার কেউ নেই। দ্রুত শুনানির পরে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলা খারিজ হয়ে গেলে পাছে পুলিশকর্মীরা সংগঠন করার অধিকার ফিরে পান, সেই আশঙ্কায় সরকারি কৌঁসুলিরা দ্রুত শুনানির জন্য উদ্যোগী হচ্ছেন না বলে অভিযোগ। তবে সরকারি কৌঁসুলিরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন