শ্রীনু খুনে ‘বড় মাথা’র খোঁজে পুলিশ ভিন্‌ রাজ্যেও

ঘটনার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ৮ জন গ্রেফতার হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে মূল চক্রী এবং যার বাড়িতে খুনের চূড়ান্ত ছক কষা হয়েছিল সেই ব্যক্তিও রয়েছে বলেই পুলিশের দাবি। এ বার সেই শঙ্কর রাও এবং জন ফ্রান্সিসকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ‘বড় মাথা’র হদিস পাওয়ার চেষ্টা হবে বলেই পুলিশ সূত্রে খবর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৪:১৫
Share:

রেলমাফিয়া শ্রীনু নায়ডু খুনে ‘বড় মাথা’র খোঁজ পেতে এখন মরিয়া পুলিশ।

Advertisement

ঘটনার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ৮ জন গ্রেফতার হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে মূল চক্রী এবং যার বাড়িতে খুনের চূড়ান্ত ছক কষা হয়েছিল সেই ব্যক্তিও রয়েছে বলেই পুলিশের দাবি। এ বার সেই শঙ্কর রাও এবং জন ফ্রান্সিসকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ‘বড় মাথা’র হদিস পাওয়ার চেষ্টা হবে বলেই পুলিশ সূত্রে খবর। ‘বড় মাথা’র খোঁজে জেলা পুলিশের একটি দল এ দিন ভিন্‌ রাজ্যে রওনা দিয়েছে বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “কোথায় আমাদের পুলিশের দল যাচ্ছে এখনই বলা যাবে না। তবে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয়, বড় মাফিয়াকে ধরতেই পুলিশ যাচ্ছে।”

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন। রবিবার তিনি বলেন, “তদন্তের ব্যাপারে কিছু বলব না।” তবে জেলার অন্য এক পুলিশ কর্তা বলেন, “পুলিশ হেফাজতে থাকা একাধিক অভিযুক্তকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে নানা জরুরি তথ্য সামনে আসে। তাই শঙ্কর ও
ফ্রান্সিসকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হতে পারে।”

Advertisement

শ্রীনু নায়ডু খুনে এখনও পর্যন্ত ৮ জনকে ধরেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার হয় মূলচক্রী শঙ্কর রাও-সহ ৭ জন। শুক্রবার রাতে গ্রেফতার হয় জন ফ্রান্সিস। পুলিশের এক সূত্রে খবর, ধৃতদের মধ্যে একাধিকজনের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হতে পারে। আজ, সোমবার ধৃতদের একজন মেদিনীপুর আদালতে গোপন জবানবন্দি দিতে পারে।

এ দিন আবার শ্রীনু মামলার সরকারি আইনজীবীর কাছে হুমকি ফোন এসেছে বলে অভিযোগ ওঠে। মেদিনীপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী সৈয়দ নাজিম হাবিবের অভিযোগ, তাঁর স্ত্রীর মোবাইলে বিকেল সওয়া চারটে নাগাদ ফোন করে কেউ বলে, ‘শ্রীনু খুনে ধৃতদের বিরুদ্ধে সওয়াল করলে ফল ভাল হবে না।’ এই ফোনের কথা পুলিশকে জানালে ‘ফল আরও খারাপ হবে’ বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই আইনজীবী। তদন্ত শুরু হয়েছে।

এ দিকে, রেলমাফিয়া খুনে ‘বড় মাথা’টা কে— গত বুধবার ঘটনার পর থেকেই উত্তর খুঁজছে রেলশহর। এই খুনে শহরের বিধায়ক, বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জড়িত বলে অভিযোগ তৃণমূলের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের। এ দিনও প্রদীপবাবু বলেন, “দিলীপ ঘোষ বারবার খড়্গপুরে এসে শহর উত্তপ্ত করেছেন। শ্রীনুকেও হুমকি দিয়েছিলেন। তাই মনে হয় খুনের পিছনে দিলীপ ঘোষের উস্কানি কাজ করেছে।”

শ্রীনুর স্ত্রী পূজা যদিও প্রথমে খড়্গপুরের পুরনো ‘ত্রাস’ বাসব রামবাবুর নাম করেছিলেন। পরে শহরের তৃণমূল কাউন্সিলর পূজা অভিযোগ করেন, রামবাবু ও দিলীপ ঘোষ দু’জনই ঘটনায় জড়িত। এ দিন অবশ্য কিছুটা সুর বদলে পূজা বলেন, “দিলীপ ঘোষ হুমকি দিয়েছিলেন। তবে এই খুনে তিনি বা রামবাবু যুক্ত কি না সেটা এখনই বলতে পারব না। তদন্তে দিলীপ ঘোষের নাম উঠে এলে আমি নিজে ওঁর নামে অভিযোগ করব।” পূজার আরও সংযোজন, “তৃণমূল কার্যালয়ের মধ্যেই আমার স্বামীকে খুন করা হয়েছে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন, দ্রুত মূল খুনিকে ধরে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা হোক।” তবে শ্রীনুর মা রাবণাম্মা বলেন, “দিলীপ ঘোষ ও রামবাবু এই খুনে জড়িত বলে আমার ধারণা।”

এ দিন আসানসোলে দিলীপবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘ভারতী ঘোষের খাস লোক ছিল শ্রীনু। ভারতী ভয় দেখিয়ে ওর মাকে দিয়ে মিথ্যে অভিযোগ করাচ্ছে।’’

দিলীপবাবুর আশঙ্কা, এই খুনের মামলায় ফাঁসিয়ে তাঁকেও গ্রেফতার করা হতে পারে। খড়্গপুরের তৃণমূল পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি। ইতিমধ্যে পুরপ্রধান প্রদীপবাবুর নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে। রক্ষীর সংখ্যা দুই থেকে বেড়ে হয়েছে চার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন