NRS Medical College and Hospital

Job Application: ‘কিছু তো করতেই হবে, ডোম-পদে দিলাম পরীক্ষা!’

ডিসেম্বরে হাসপাতালের ডোম-পদে নিয়োগের জন্য আবেদন চেয়ে বিজ্ঞাপন দেন এনআরএস-কর্তৃপক্ষ। শূন্য পদ ছ’টি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২১ ০৫:৩৪
Share:

পরীক্ষার জন্য লাইন এনআরএসের সামনে। রবিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

‘‘পড়াশোনা শেষ করার পরে তো চার-চারটে বছর কেটে গেল। বিভিন্ন সংস্থার দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ইন্টারভিউ দিয়েও লাভ হয়নি। যা দু’-একটা চাকরি জুটছে, তা-ও বাংলার বাইরে। বেতন যে খুব বেশি, তা-ও নয়! কী করব! কিছু তো করতে হবে! তাই ডোমের পদে পরীক্ষা দিলাম।’’ রবিবার দুপুরে নীলরতন সরকার (এনআরএস) মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডোম নিয়োগের পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে বলছিলেন বছর আঠাশের স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এক পড়ুয়া। সঙ্গী বন্ধুও হতাশার সঙ্গেই তাঁর সঙ্গে গলা মেলালেন। তাঁদের নৈরাশ্যের সুরেই ফুটে উঠল দেশের বেকারত্বের জ্বলন্ত ছবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়েও ডোম-পদের চাকরির জন্য প্রাণপাত কেন, প্রাঞ্জল হয়ে গেল সেই ব্যাখ্যাও।

Advertisement

ডিসেম্বরে হাসপাতালের ডোম-পদে নিয়োগের জন্য আবেদন চেয়ে বিজ্ঞাপন দেন এনআরএস-কর্তৃপক্ষ। শূন্য পদ ছ’টি। অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণেরা আবেদন করার যোগ্য। এই কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলেও জানানো হয় বিজ্ঞাপনে। কিন্তু দেখা যায়, এই চাকরির জন্য আবেদন এসেছে দু’হাজারেরও বেশি। বেশ কয়েক জন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ পড়ুয়া, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ ছেলেমেয়েরাও এই পদের প্রার্থী।

ঝাড়াই-বাছাই করে, ৭৮৪ জনকে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়েছিল। রবিবার দুপুর ১২টায় শুরু হয় পরীক্ষা। বেশ কিছু ইঞ্জিনিয়ারের পাশাপাশি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ পড়ুয়ারাও এক ঘণ্টার এই পরীক্ষায় বসেন। তবে অ্যাডমিট কার্ড নিলেও অনেকে এ দিন পরীক্ষা দিতে আসেননি বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। বেশ কয়েক জন সময়মতো আসতে না-পারায় তাঁদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়নি।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ৭৮৪ জনকে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হলেও এ দিন পরীক্ষায় বসেন ২৮৪ জন। বিভিন্ন হাসপাতালে ডোমের অস্থায়ী পদে কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কয়েক জন যুবকও পরীক্ষা দিয়েছেন। দুর্গাপুর থেকে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন তন্ময় সরকার নামে এক যুবক। তিনি বলেন, ‘‘কাজ করি একটি বেসরকারি সংস্থায়। চাকরির কোনও নিশ্চয়তা নেই। করোনার দরুন অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে। তাই এই সরকারি পরীক্ষায় বসার জন্য আবেদন করেছিলাম।’’ পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে বছর পঁচিশের এক যুবক (নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘‘ই়ঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছি। ভেবেছিলাম, ডোমের চাকরিতে প্রতিযোগী কম হবে। তাই আবেদন করি। তা দেখছি, এখানেও প্রচুর লোক পরীক্ষা দিলেন।’’

ক্যানিংয়ের বাসিন্দা রাজেশ মণ্ডল পরীক্ষা শেষে বললেন, ‘‘বাবা দিনমজুরি করেন। সেটাও ঠিকমতো হয় না। বাংলায় অনার্স পাশ করে আর পড়তে পারিনি। চাকরির পোস্ট দেখে, বাছাই করে আবেদন করতে বসলে আর নিজের পায়ে দাঁড়ানো হবে না। তাই ঠিক করেছি, যা বিজ্ঞাপন বেরোবে, সব পরীক্ষা দেব।’’

দেরিতে পৌঁছনোয় পরীক্ষা দিতে পারেননি রীনা কুমারী। ‘‘ভোরে বেরিয়েও কোনও লাভ হল না। রাস্তায় গাড়ি না-পেলে সময়মতো আসব কী করে? করোনার মধ্যে ট্রেন-বাস ঠিকমতো না-চালিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হল কেন,’’ প্রশ্ন ওই তরুণীর।

ডোমের চাকরির পরীক্ষায় উচ্চশিক্ষিতদের এ ভাবে আবেদন ও অংশগ্রহণে দেশের বেকারত্বের হতাশার দিকটিই যে প্রকট হচ্ছে, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশও তা মেনে নিচ্ছেন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য কেউই কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন