এর আগে দু’-দু’বার রাস্তাতেই গর্ভবতী হয়েছেন তিনি। প্রসবও হয়েছে রাস্তাতেই। এলাকার মানুষজন, পুলিশ-প্রশাসন কারোরই সেটা অজানা ছিল না। কিন্তু তার পরেও মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মহিলার নিরাপদ আশ্রয় জোটেনি। তৃতীয় বার সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে পুলিশে। আসন্ন প্রসবা মহিলাকে পাঠানো হয়েছে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
হাসনাবাদ থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে হিঙ্গলগঞ্জ বাজারের এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েই। প্রশ্ন, কেন প্রথম বারের ঘটনার পরে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হল না? কেন ওই মহিলাকে পাঠানো হল না কোনও নিরাপদ সরকারি হোমে? আর কেনই বা তাঁকে সুস্থ করার কোনও চেষ্টা হল না? এ বিষয়ে প্রশাসনিক স্তরে যে গাফিলতি হয়েছিল, তা স্বীকার করে হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘আগে কী হয়েছে, জানা নেই। তবে এ বার খবর পেয়েই পুলিশে অভিযোগ দায়েরের ব্যবস্থা করেছি। মহিলার নিরাপদ প্রসবের ব্যবস্থা হয়েছে। ’’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ১২ বছর আগে এক দিন হঠাৎই বছর তিরিশের এক মহিলাকে উত্তর ২৪ পরগনার বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া হিঙ্গলগঞ্জ বাজারে ঘুরতে দেখা যায়। উসকো-খুসকো চুল, মলিন পোশাক। কেউ খেতে দিলে খাচ্ছেন, না হলে দোকানে গিয়ে হাত পাতছেন। আচরণ দেখে তাঁকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলেই ধরে নিয়েছিলেন তাঁরা। তার পর থেকে ওই বাজারেই থাকতেন মহিলা। ২০১২ সালে হঠাৎই স্থানীয়রা বুঝতে পারেন, ওই মহিলা সন্তানসম্ভবা। কে বা কারা এই পরিণতির জন্য দায়ী, তা অবশ্য জানা যায়নি। প্রশাসনও তা জানার চেষ্টা করেনি বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন:কুপ্রস্তাবে সাড়া মেলেনি, বধূর ছবি দিয়ে পর্ন ভিডিও ছড়াল দুই প্রতিবেশী!
হাসনাবাদ চাইল্ডলাইন সূত্রের খবর, ২০১২ সালে মহিলার সন্তান হওয়ার পরে বাজারের সম্পাদক শিশুটিকে এক দম্পতির হাতে তুলে দেন। পরে চাইল্ডলাইন সেই শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে এনে আইনি পদ্ধতি মেনে দত্তকের ব্যবস্থা করে। ২০১৫ সালে ফের ওই মহিলার একটি সন্তান জন্মানোর পরে শিশুটিকে প্রথমে হোমে পাঠানো হয়। সেখান থেকে সে যায় দত্তক পিতা-মাতার কাছে। মহিলা কিন্তু রাস্তাতেই পড়ে ছিলেন। এ বার গত ২১ এপ্রিল চাইল্ডলাইন-এর কাছে খবর আসে, ওই মহিলা ফের গর্ভবতী হয়েছেন।
এ বার চাইল্ডলাইন কোনও দেরি না করে স্থানীয় বিডিও এবং জেলার শিশু কল্যাণ সমিতিকে বিষয়টি জানায়। পুলিশেও অভিযোগ দায়ের করে। হিঙ্গলগঞ্জ চাইল্ডলাইনের কো-অর্ডিনেটর আবদুল্লা গাজির কথায়, ‘‘এই প্রথম ওই মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে হিঙ্গলগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের হল। থানার অফিসার ইনচার্জই দায়িত্ব নিয়ে ওই গর্ভবতী মহিলাকে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করিয়েছেন। দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আশা-কর্মীদের।’’
উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক অন্তরা আচার্য জানিয়েছেন, তাঁর কাছে এ বিষয়ে কোনও খবরই ছিল না। তিনি বলেন, ‘‘এ তো সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার! অবিলম্বে খোঁজ করছি।’’