১০০ দিনের কাজ প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব তিন সঙ্ঘকেও

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস ছ’য়েক আগে মহম্মদবাজারের দু’টি এবং দুবরাজপুর ব্লকের একটি মিলিয়ে তিনটি মহিলা সঙ্ঘ সমবায়কে ১০০ দিনের কাজে পিআইএ-র (প্রোজেক্ট ইমপ্লেমেনটিং এজেন্সি) মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৭
Share:

পঞ্চায়েতের বাইরে মহিলা সঙ্ঘ সমবায়গুলিকে ১০০ দিনের কাজের পিআইএ করা হল। —ফাইল চিত্র।

এত দিন শুধুমাত্র জেলার গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিই ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে বিভিন্ন কর্মসূচি রূপয়ণের দায়িত্বে ছিল। এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হল মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের তৈরি সঙ্ঘ সমবায় বা ‘সেল্ফ হেল্ফ কো-অপারেটিভ সোসাইটি’।

Advertisement

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস ছ’য়েক আগে মহম্মদবাজারের দু’টি এবং দুবরাজপুর ব্লকের একটি মিলিয়ে তিনটি মহিলা সঙ্ঘ সমবায়কে ১০০ দিনের কাজে পিআইএ-র (প্রোজেক্ট ইমপ্লেমেনটিং এজেন্সি) মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে মহম্মদবাজারের কপিষ্ঠা গ্রাম পঞ্চায়েতের মিতালি সঙ্ঘ, ভূতুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের পণ্ডিত রঘুনাথ সঙ্ঘ এবং দুবরাজপুরের সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আত্মসম্মান সঙ্ঘ (মহিলা এসএইচজি কো-অপারেটিভ সোসাইটি)। জেলা এমজিএনআরইজিএ সেলে প্রকল্প জমা দিয়ে অনুমোদন পাওয়ার পরে কাজেও হাতও দিয়েছে দু-একটি সঙ্ঘ সমবায়।

কেন পঞ্চায়েতের বাইরে মহিলা সঙ্ঘ সমবায়গুলিকে ১০০ দিনের কাজের পিআইএ করা হল?

Advertisement

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এমজিএনআরইজিএ এবং পঞ্চায়েত গ্রামোন্নয়ন দফতর চাইছিল, পঞ্চায়েত ছাড়াও আরও কিছু সংগঠন এগিয়ে আসুক যারা প্রোজেক্ট ইমপ্লেমেন্টিং এজেন্সি হিসেবে কাজ করতে পারে। তাতে যেমন কর্মদিবস বাড়বে, তেমনই সম্পদ সৃষ্টির সম্ভাবনাও বাড়বে। তখনই আলোচনায় উঠে আসে মহিলা সঙ্ঘ সমবায়ের কথা।

এমজিএনআরইজিএ প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসার প্রদীপ্ত বিশ্বাস জানান, জেলায় এই সঙ্ঘ সমবায়গুলি অগ্রগণ্য। ১০০দিনের প্রকল্পে বিভিন্ন কাজও করেছে। সঙ্ঘগুলি যদি পিআইএ হিসেবে নিজেরাই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব পায়, তাদের লাভের অঙ্কও বেশি হবে। প্রদীপ্তবাবুর সংযোজন, বৃক্ষপাট্টা বা যে কোনও ধরণের ‘অ্যাসেট ইন্ডিভিজুয়াল বেনিফিট স্কিমের’ একটা লাভের অঙ্কের অনুপাত নির্দিষ্ট থাকে। তাতে ৭৫ শতাংশ ব্যক্তি বা উপভোক্তা বাকি ২৫ শতাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত পেয়ে থাকে। সঙ্ঘের জবকার্ডধারী মহিলা সদস্যরা সেই কাজ করলে পুরো লাভই পবে সঙ্ঘ ও তার সদস্যরা।

প্রশাসন ও জেলা সমবায় দফতর সূত্রে খবর, ২০১৪ সালের পর থেকেই রাজ্যের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে নিয়ে সঙ্ঘ তৈরির ভাবনা। পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ জীবিকা মিশন বা আনন্দধারা প্রকল্পের অধীনে এই সব সঙ্ঘ তৈরি হয়েছে। উদ্দেশ্য, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সহয়তায় সঙ্ঘগুলির আওতায় থাকা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করা। এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকরী করে গড়ে তোলা।

সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে জেলার তিনটি সঙ্ঘ সমবায়ের ক্ষেত্রেই— এমনই বলছেন আনন্দধারা প্রকল্পের মহম্মদবাজারের ব্লক প্রকল্প আধিকারিক সংহিতা মজুমদার, ও দুবরাজপুর ব্লক প্রকল্প আধিকারিক সোমেন দত্ত। তাঁদের বক্তব্য, স্বচ্ছ ভারত অভিযান বা বাংলা সংস্করণ মিশন নির্মল বাংলার জন্য অনেক শৌচাগার গড়েছে ওই সঙ্ঘগুলি। এ ছাড়া সামাজিক বনসৃজন থেকে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারেও এগিয়ে তারা। ওই সব সঙ্ঘের নিজেদের ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু রয়েছে। ১০০ দিনের বিভিন্ন উদ্ভাবনী কাজের সঙ্গেও জুড়ে। তাঁরা আরও জানান, আত্মসম্মান দেশের সেরা সঙ্ঘের সম্মান পেয়েছে। ভাল কাজ করেছে মহম্মদবাজারেরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা অন্য দু’টি সঙ্ঘও। সরকারি সহায়ক মূল্য ধানও কিনছে তিনটি সঙ্ঘ। সেই কাজের তালিকায় এবার যুক্ত হল ১০০ দিনের কাজের পিআইএ-র তকমা।

কাপিষ্ঠার পণ্ডিত রঘুনাথ সঙ্ঘের সম্পাদিকা সাগরিকা বাগদি বলছেন, ‘‘আমাদের সঙ্ঘের আওতায় রয়েছে ২০০টি দল। প্রতি দলে ১০ জন করে মহিলা সদস্য হলে সংখ্যাটা ২ হাজার। জবকার্ড রয়েছে সকলের। পোলট্রি শেড, জমি সমতল করা সহ বেশ কিছু কাজ ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে করা যাবে।’’ তিনি জানান, এ ছাড়াও ১৪ বিঘা জমিতে রেশম চাষ করার প্রকল্পও জমা দেওয়া হয়েছে। আত্মসম্মান সঙ্ঘের কো-অর্ডিনেটর মর্জিনা বিবিও পোলট্রি, জৈব সার তৈরি সহ ১২ লক্ষ টাকার প্রকল্প জমা দিয়েছেন। প্রায় একই বক্তব্য মিতালি সঙ্ঘের সম্পাদিকা কল্পনা আচার্যের। তিনি বলছেন, ‘‘পোলট্রি, গোটারি শেড ছাড়া বাড়ি বাড়ি কেঁচো সারের পিট তৈরি ভাবনা রয়েছে। অনুমোদন পেয়ে জিও ট্যাগিংও হয়ে গিয়েছে। কাজে হাত পড়বে দ্রুত।’’ নতুন দায়িত্ব হাতে পড়লেও তাঁরা যে সফল হবেন সে ব্যপারে আশাবাদী তিন সঙ্ঘের নেত্রীই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন