ফসলের জমিতে তাণ্ডব চালাচ্ছে হাতির দল —নিজস্ব চিত্র।
মাস পাঁচেক আগেই প্রায় ৮০টি হাতির দল বাঁকুড়া ছেড়ে চলে গিয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরে। চার মাস যেতে না যেতেই সেই হাতির দলের একাংশ ফের ফিরে গেল বাঁকুড়ায়। রবিবার গভীর রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের সীমানা পেরিয়ে ২৫টি হাতির একটি দল বিষ্ণুপুর বনবিভাগের বাঁকাদহ রেঞ্জে প্রবেশ করে। এ দিকে আমনের ভরা মরসুমে হাতির দল বাঁকুড়ায় প্রবেশ করে কার্যত তাণ্ডব শুরু করেছে। রাতভর হাতির দলের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিঘের পর বিঘে জমির আমন ধান। মাথায় হাত পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের।
মাস পাঁচেক আগে শীত শেষ হতেই বাঁকুড়ার বিভিন্ন জঙ্গলে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা হাতির দলগুলি দফায় দফায় ফিরে যায় পশ্চিম মেদিনীপুরে। মাত্র ৩টি রেসিডেন্সিয়াল দলছুট হাতি থেকে যায় বাঁকুড়ার জঙ্গলে। এ বার সেই দলছুট ৩টি হাতির সঙ্গে যুক্ত হল রবিবার গভীর রাতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সীমানা টপকে বাঁকুড়ার বাঁকাদহ রেঞ্জের বনাঞ্চলে আসা ২৫টি হাতির দল। জানা গিয়েছে, হাতিগুলি গত দু’দিন আগেই দুই জেলার সীমানা লাগোয়া এলাকায় এসে পৌঁছোয়। তার পর রবিবার গভীর রাতে আস্থাশোল এলাকা হয়ে হাতির দলটি বাঁকুড়ায় প্রবেশ করে। রাতভর হাতির দলটি স্থানীয় আস্থাশোল, বারিশোল, ফুলবনি হয়ে সোমবার সকালে সটান হাজির হয় গড়ুরবাসার জঙ্গলে। রাতভর এই হাতির দলের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় আস্থাশোল, বারিশোল ও ফুলবনি মৌজায়। বিঘের পর বিঘে জমির আমন ধান খেয়ে ও মাড়িয়ে নষ্ট করে দেয় হাতির দলটি। এ দিকে হাতির দল এলাকায় প্রবেশ করছে এই খবর পেয়ে রাতভর নিজেদের জমি পাহারা দেন স্থানীয় কৃষকেরা। কিন্তু তার পরেও হাতির দলের থেকে নিজেদের কষ্টে ফলানো ফসল রক্ষা করতে না পারায় মাথায় হাত পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।
কৃষক বীরেন প্রতিহার বলেন, ‘‘গত মরসুমে হাতির দল ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করেছিল। ক্ষতিপূরণের জন্য বন দফতরে আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু সেই ক্ষতিপূরণ এখনও মেলেনি। বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে এ বার আমন ধান চাষ করেছিলাম। তার মাঝেই রবিবার রাতে হাতির দল এসে সব মাড়িয়ে দিয়েছে। এ বার আমরা কোথায় যাব?’’ এলাকারই অপর এক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক তারাপদ দাস বলেন, ‘‘বন দফতর চাইলে আমাদের কষ্টে ফলানো ফসল বাঁচাতে পারত। হাতির দল যখন ক্ষয়ক্ষতি চালাচ্ছে, তখন বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে হাজিরও ছিলেন। কিন্তু তাঁরা নিস্ক্রিয় থাকার ফলেই আমাদের এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেল।’’
বন দফতরের বাঁকাদহ রেঞ্জের আধিকারিক তপোব্রত রায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতির কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘হাতির দলের গতিবিধির উপর সর্বক্ষণ নজর রেখেছেন বনকর্মীরা। ফসলের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে দেওয়া হবে।’’