উদ্ধার-কাজ: ময়ূরাক্ষীর রাইপুর ঘাটে নিখোঁজ ছাত্রের খোঁজে তল্লাশি। বুধবার বিকেলে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
বন্ধুদের সঙ্গে স্নান করতে নেমে বালির গর্তে তলিয়ে গেলেন উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ এক পড়ুয়া। বুধবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে সিউড়ির খটঙ্গা পঞ্চায়েতের ময়ূরাক্ষী নদীর রাইপুর ঘাটে।
নিখোঁজ পড়ুয়ার নাম মনোজিৎ মণ্ডল (১৯)। বাড়ি সিউড়ির কড়িধ্যায়। দুর্ঘটনার পর থেকেই মনোজিতের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন এলাকাবাসী, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের লোকজন। রয়েছে দমকল, পুলিশও। তবে রাত পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি। স্থানীয়দের দাবি, ওই পড়ুয়া যে গর্তে তলিয়ে গিয়েছেন সেখানে নদীর গভীরতা প্রায় ৩০-৪০ ফুট। অবৈধ ভাবে বালি তোলার জন্যেই ওই অংশের নদী অত গভীর বলে তাঁদের অভিযোগ। প্রশাসনের নজরদারি এড়িয়ে যন্ত্র ব্যবহার করে বালি তোলার কারবার কবে বন্ধ হবে, এই ঘটনায় ফের উঠেছে সে প্রশ্নও।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) নীলকমল বিশ্বাস বলেন, ‘‘আইনত, তিন মিটার অর্থাৎ ১০ ফুটের বেশি গর্ত করে কোথাও বালি তোলা যায় না। ওখানে এত গভীর গর্ত করে বালি তোলার খবর আমাদের কাছে ছিল না। খবর নেই এ দিনের দুর্ঘটনা সম্পর্কেও। তবে এমনটা হয়ে থাকলে বিষয়টি দেখব।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মনোজিতেরা পাঁচ জন ছিল। এক জন বাদে সকলেই কড়িধ্যা এলাকার বাসিন্দা। মনোজিতদের বাড়ি কড়িধ্যার সৎসঙ্গ কলোনিতে। প্রথমে ভাণ্ডীরবনে ঘুরে সকলে ঠিক করে আমজোড়া ঘাটে গিয়ে স্নান সারবে। কিন্তু, অতটা দূরে না গিয়ে তিনটি মোটরবাইক থামিয়ে রাইপুর ঘাটে নেমে পড়েন সকলে। নদীতে তেমন জল না থাকায় সকলে জল-ভর্তি বালির গর্তে নামেন। কিন্তু গর্তের গভীরতা সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না কারও।
শুভদীপ বিশ্বাস নামে এক সঙ্গীর কথায়, ‘‘আমরা সকলেই গভীরতার জন্য হাবুডুবু খাচ্ছিলাম। সাঁতার জানা ছিল না মনোজিতের। তলিয়ে যেতে থাকে ও। আমাদের চিৎকার শুনে স্থানীয়েরা চার জনকে উদ্ধার করে।’’ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) আনন্দ সরকার, সিউড়ি থানার আইসি দেবাশিস পাণ্ডা-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের দিয়ে কাঁটা জাল ও নৌকা নিয়ে খুঁজলেও মনোজিতকে পাওয়া যায়নি।
একমাত্র ছেলের এমন পরিণতিতে ভেঙে পড়েছেন জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী মনোজিতের বাবা মন্মথনাথ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘প্রায়ই বন্ধুদের সঙ্গে এই দিকটায় আসত ছেলে। কিন্তু এ ভাবে ও যে দুর্ঘটনার মধ্যে পড়তে পারে, কল্পনাও করিনি।’’