আদিবাসীদের ভোটই কি লক্ষ্য, জেলায় অভিষেক
পাড়া, বাঘমুণ্ডির পরে এ বার কাশীপুর। পুরুলিয়ায় ফের সভা করতে আসছেন তৃণমূলের যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, সোমবার দুপুরে কাশীপুরে পঞ্চায়েত কার্যালয়ের পাশে সেবাব্রতী সঙ্ঘের মাঠে সভা করার কথা যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ অভিষেকের।
দলের তরফে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ার পরেই দুই জেলার জঙ্গলমহলের যে সমস্ত বিধানসভা কেন্দ্র বিরোধীদের দখলে রয়েছে, সেগুলি এ বার নিজেদের দখলে আনতে মরিয়া তৃণমূল। সেই লক্ষ্যে একাধিক কর্মসূচিতে এই দুই জেলায় আসতে দেখা যাচ্ছে অভিষেককে। গত মাসে সিপিএমের দখলে থাকা বান্দোয়ানে প্রশাসনিক সভা করে গেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার কয়েক দিন পরেই কংগ্রেসের দখলে থাকা বাঘমুণ্ডিতে জনসভা করেছেন অভিষেক। এ বার কাশীপুরে জনসভা করতে আসছেন তিনি। জেলা তৃণমূলের দাবি, সভায় রেকর্ড সংখ্যায় ভিড় হবে। সেই লক্ষ্যে রবিবার দিনভর কাশীপুর বিধানসভা এলাকায় প্রচার চালিয়েছেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা।
কিন্তু, জঙ্গলমহলের এলাকা না হওয়া সত্ত্বেও কাশীপুরে কেন সভা করতে আসছেন অভিষেক, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। গত লোকসভা নির্বাচনে এই বিধানসভা কেন্দ্রে বাম প্রার্থীর চাইতে ২৬ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। কাশীপুরের ১৩টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১২টি শাসকদলের দখলে। পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের দুই সদস্যও তৃণমূলের। শাসকদলের এমন শক্ত ঘাঁটি হওয়ার পরেও বিধানসভা ভোটের মাস তিনেক আগে জনসভা করতে কাশীপুরকে বেছে নেওয়ার পিছনে কি ‘বিশেষ’ কারণ রয়েছে?
দলেরই সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, কাশীপুর বিধানসভা এলাকায় কয়েকটি বিষয়কে কেন্দ্র করে সম্প্রতি শাসকদলের সঙ্গে আদিবাসী সম্প্রদায়ের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। স্থানীয় বড়রা পঞ্চায়েতের পাহাড়পুর এলাকায় ধনারডি গ্রামের পাহাড় কেটে পাথর বের করার সরকারি প্রকল্পকে ঘিরে স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছিল শাসকদল (আরও নির্দিষ্ট করে বললে কাশীপুরের তৃণমূল বিধায়ক)। বিশেষ করে ওই সরকারি প্রকল্পে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়া এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের দাবিতে বিধায়কের বিরুদ্ধে আদিবাসী সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে শুরু হওয়া পাহাড় বাঁচাও আন্দোলন জেলা তৃণমূল এবং প্রশাসনের কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পাহাড় কাটা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে সম্প্রতি এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের একাংশকে বিধায়কের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সরব হতেও দেখা গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ‘পাহাড় বাঁচাও কমিটি’র কর্মকর্তাদের নবান্নে ডেকে আলোচনায় বসে সমস্যা মিটিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতেও যে সমস্যা পুরো মেটেনি, তার প্রমাণ মেলে গত ডিসেম্বরে কাশীপুরের আদিবাসী অধ্যুষিত একাধিক এলাকায় বিধায়কের নামেই পোস্টার পড়ার ঘটনায়। ওই সব পোস্টারে বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছিল।
এই সুযোগে আসরে নামে সিপিএম। ধনারডির ঘটনার পরেই ‘আদিবাসী অধিকার রক্ষা মঞ্চ’-এর ব্যানারে কাশীপুরের সেবাব্রতী সঙ্ঘের মাঠেই বড়মাপের সভা করেছিল সিপিএম।
জেলা তৃণমূলের একটি সূত্র থেকেই জানা যাচ্ছে, আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ নজর রয়েছে। কিন্তু কাশীপুর বিধানসভায় আদিবাসীদের সঙ্গে শাসকদলের দূরত্ব তৈরি হওয়ার ঘটনা বিধানসভা নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তা, ছাড়া এই বিধানসভায় কমবেশি ২৩ শতাংশ আদিবাসী ভোট রয়েছে। এই অবস্থায় কাশীপুরের মতো ‘নিশ্চিত’ আসনে যাতে কোনও ভাবেই বিরোধী সিপিএম রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সে জন্যই কাশীপুরে সভা করবেন স্বয়ং অভিষেক।
জেলা তৃণমূলের শান্তিরাম মাহাতো অবশ্য এই যুক্তির কথা মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কাশীপুরে আদিবাসীদের সঙ্গে আমাদের দলের দূরত্ব তৈরি হয়েছে, এ কথা মোটেও ঠিক নয়। পুরুলিয়ার পর্যবেক্ষক হিসাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জেলার প্রতিটি বিধানসভা এলাকাতেই সভা করবেন। সেই হিসাবেই তিনি কাশীপুরে আসছেন।’’