WB Municipal Election

WB Municipal election 2022: ‘বহিরাগত’ আনাগোনার নালিশে তাতল সোনামুখী

শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু বাসিন্দা অভিযোগ করেন, এ দিন সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর সময়েই মোটরবাইকে কিছু যুবক হাজির হয়।

Advertisement

অভিজিৎ অধিকারী

সোনামুখী শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৩৭
Share:

লাঠি হাতে রাস্তায়। নিজস্ব চিত্র

মুখে মাস্ক ও মাথায় কাপড় বেঁধে ঘোরাফেরা করছে বহিরাগত যুবকেরা, ভোট শুরুর পরেই এমন অভিযোগ উঠেছিল বাঁকুড়ার সোনামুখীতে। শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু মহিলা লাঠি হাতে রাস্তায় নেমে তাড়া করলে, ওই যুবকেরা পালিয়ে যায় বলে দাবি বাসিন্দাদের একাংশের। বেলা গড়ানোর পরে, ফের বহিরাগত ঢোকার অভিযোগে তেতে ওঠে সোনামুখীর ১১ নম্বর ওয়ার্ড। কিছু বাসিন্দার তাড়া খেয়ে একটি গাড়ি পালানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। দ্রুত গতিতে যাওয়ার সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিদ্যুতের পোস্টে ধাক্কা দেয় সেটি। তবে কাউকে ধরা যায়নি।

Advertisement

শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু বাসিন্দা অভিযোগ করেন, এ দিন সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর সময়েই মোটরবাইকে কিছু যুবক হাজির হয়। ব্যোমশঙ্কর হাইস্কুলের বুথের সামনে কিছু ভোটারকে তারা ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। এর পরেই এলাকার বেশ কিছু মহিলা-সহ জনা চল্লিশ বাসিন্দা লাঠি হাতে রাস্তায় নেমে তাড়া করেন ওই যুবকদের। তারা এলাকা ছেড়ে পালায়। কিছু ক্ষণ পরে ফের কয়েক জন যুবক এলে, তাদেরও তাড়া করা হয় বলে জানান বাসিন্দারা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কয়েক জন মহিলার অভিযোগ, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দিতে চাই। কিন্তু কিছু বাইরের লোক সকাল থেকে এসে গোলমাল করার চেষ্টা করছিল। পুলিশ দেখেও কিছু করেনি। বাধ্য হয়ে আমরাই লাঠি হাতে তাড়া করি।’’

ওই ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী শুভ্রা রায়ের অভিযোগ, ‘‘আমি সকালে নির্বাচনী এজেন্টকে নিয়ে এলাকায় ঢোকার সময়ে মোটরবাইকে আসা কিছু যুবক আটকায়। তাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। ওদের মুখে তৃণমূল প্রার্থীর নামও শোনা যায়।’’ বহিরাগত আনার অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল প্রার্থী বাবলি গোস্বামীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘যদি তেমন লোকজন এসে থাকে, কাউকে আটকে রাখা হল না কেন!’’

Advertisement

দুপুরে শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ফের গোলমাল বাধে। এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, একটি গাড়িতে বহিরাগত জনা পাঁচেক সাঁকোপাড়া এলাকায় ঢুকছিল। স্থানীয় মানুষজনের সন্দেহ হয়, বুথে গোলমাল পাকাতে এসেছে তারা। কিছু লোকজন গাড়িটি ধাওয়া করতেই, সেটি পালানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। দ্রুত বেগে খানিকটা গিয়ে রাস্তার পাশে বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা মারে গাড়িটি। খুঁটিটি ভেঙে পড়ে। গাড়িটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এলাকাবাসীর দাবি, ওই যুবকেরা গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, গাড়িটির ধাক্কায় স্থানীয় এক বাসিন্দা আহত হন। তাঁকে সোনামুখী গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ‘বহিরাগতেরা’ পালানোর সময়ে গুলি ছোড়ার আওয়াজ মিলেছে বলে এলাকাবাসীর একাংশের দাবি।

সোনামুখীর সিপিএম নেতা মনোজ চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘কয়েক দিন ধরেই বহিরাগতেরা সোনামুখীতে ঘোরাফেরা করছিল। আমরা পুলিশকে তা জানিয়েছিলাম। খবর ছিল, এ দিন একটি বাড়িতে তিরিশ জন বহিরাগতকে এনে রাখা হয়েছে। এ সব ঘটনা তারই প্রমাণ দিল। মানুষ রুখে দাঁড়ানোয় ওরা পালিয়েছে।’’ ১১ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘স্বাভাবিক ভাবে ভোট হলে হেরে যাবে বুঝেই বহিরাগতদের এনেছিল তৃণমূল। কিন্তু স্থানীয় মানুষ প্রতিরোধ করেছেন।’’ পাত্রসায়র থেকে ওই গাড়িটি এসেছিলে বলে তাঁরা জেনেছেন, দাবি তাঁর। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অভিজিৎ পালের যদিও দাবি, ‘‘বহিরাগত নয়, দলের এক পর্যবেক্ষকের সঙ্গে তিন-চার জন এসেছিলেন। তাঁরা হোটেলে খেতে যাচ্ছিলেন। তখনই কিছু লোকজনকে উস্কে এই ঘটনা ঘটিয়েছে বিরোধীরা। ঝামেলা পাকাতে এলে মাত্র তিন-চার জন আসতেন না।’’

এ দিন ঘটনাস্থলে যান এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) কুতুবউদ্দিন খান। তাঁর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘গুলির কোনও চিহ্ন মেলেনি। গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করে তদন্ত চলছে।’’ বহিরাগত আটকাতে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘পুলিশ বাইরের কাউকে বুথে ঢুকতে দেয়নি। সর্বত্র কড়া নজর রাখা হয়েছে।’’ এ দিন সোনামুখীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডে কিছু বহিরাগত ঢুকেছে খবর পেয়ে পুলিশের বড় বাহিনী এলাকায় যায়। সেখানে জড়ো হওয়া বেশ কিছু লোকজনকে বুথের কাছ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিল্লেশ্বর সিংহের দাবি, ‘‘মানুষের উপরে শাসক দলের আস্থা নেই। সে কারণে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক এনেছিল। তবে সাধারণ মানুষ প্রতিহত করছেন।’’ তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায়ের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। বিরোধীরা যে বহিরাগত-তত্ত্ব আমদানি করছে, তা একেবারে মিথ্যা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন