আড়শা-কাণ্ড

গ্রেফতার চাই, ক্ষোভ গড়াল এ বার থানায়

শিবানির দাবি, ‘‘যাত্রাপালার কাছেই একটি দোকানে স্বামী যখন খাবার কিনতে যায়, তখনই কয়েকজন যুবক আপত্তিকর কথা বলে। স্বামী ফিরে এলে তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডাও হয়। সেই সময় এক সিভিক ভলান্টিয়ারও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আড়শা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০৭
Share:

গণপিটুনিতে ধরণী সিং সর্দারের স্ত্রী। (ইনসেটে) ধরনী সিং সর্দার। —ফাইল ছবি

আড়শায় গনপিটুনিতে যুবক খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের সময়সীমা বেঁধে দিলেন বাসিন্দারা। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে মঙ্গলবার বাসিন্দারা আড়শা থানার সামনে জমায়েত করে বিক্ষোভ দেখালেন। পরে থানার সামনে রাস্তাও অবরোধ করা হয়। বিক্ষোভে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়।

Advertisement

এ দিকে, সোমবার সন্ধ্যায় থানায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সময় ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী তথা নিহত যুবক ধরণী সিং সর্দারের স্ত্রী শিবানি অচেতন হয়ে পড়েন। পুলিশই তাঁকে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন। এ দিন দুপুরে তিনি সেখান থেকে ছাড়া পান। তাঁর সঙ্গেই ঘটনার আর এক প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের বোন গঙ্গা সিং সর্দারকেও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেন। যদিও পুলিশ অভিযুক্তদের মঙ্গলবার পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি। শিবানির দাবি, ‘‘পুলিশ আগেই আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তারপরেও সোমবার বিকেলে থানায় ডেকে পাঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে জেরা করে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে কি না, জানতে চাইছিলেন পুলিশকর্মীরা। অথচ আমার সম্ভ্রণ বাঁচাতে গিয়ে স্বামী যে দুষ্কৃতীদের হাতে মার খেয়ে পরে মারা যায়, তা আগেই পুলিশকে জানিয়েছিলাম।’’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা অজ্ঞাতপরিচয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তাই তাদের চিহ্নিত করতে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন ছিল। দুষ্কৃতীদের সন্ধান পেতে সবরকম সূত্রের খোঁজ করা হচ্ছে।’’

শনিবার একাদশীর রাতে আড়শায় যাত্রা দেখে বোন ও স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন কেন্দুয়াডি গ্রামের বছর তেইশের ওই যুবক। শিবানির দাবি, ‘‘যাত্রাপালার কাছেই একটি দোকানে স্বামী যখন খাবার কিনতে যায়, তখনই কয়েকজন যুবক আপত্তিকর কথা বলে। স্বামী ফিরে এলে তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডাও হয়। সেই সময় এক সিভিক ভলান্টিয়ারও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল।’’

Advertisement

তাঁরা মোটরবাইকে কিছুদূর যাওয়ার পরে দু’টি মোটরবাইকে পিছু নিয়ে দুষ্কৃতীরা তাদের থামায়। অভিযোগ, তারা শিবানির শাড়ির আঁচল ধরে টানার চেষ্টা করে। শিবানি বাধা দেওয়ায় তাকে চড় মেরে ফেলে দেয়। তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। ননদ গঙ্গা তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে দুষ্কৃতীরা ধরণীকে মারধর করতে শুরু করে। অন্ধকারে তারা দূরে সরে যায়। পরে গ্রামবাসী ধরণীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু, রাস্তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। সোমবার খুনের অভিযোগ দায়ের হয়। এরপরেই এলাকায় মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠে বিভিন্ন মহলে।

এ দিন এসইউসি-র মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠনের জেলা সম্পাদক রানি মাহাতো ও সংগঠনের কর্মীরা আড়শায় শিবানির সঙ্গে দেখা করেন। পরে রানি বলেন, ‘‘ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের কাছেই পুলিশ হামলাকারীদের সম্পর্কে সূত্র পাবে। তাঁকে কি জেরা করা হয়েছে? এই ঘটনাটি নিয়ে আমরা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করব।’’

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কেন্দুয়াডির বাসিন্দা পবন সিং, মনোহর সিং লায়া প্রমুখ দাবি করেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা এতটা পথ ধাওয়া করে এক মহিলার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করল, প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাঁর স্বামী খুন হয়ে গেলেন, অথচ পুলিশ দুষ্কৃতীদের নাগাল পেল না! আমরা পুলিশকে ৪৮ ঘণ্টা গ্রেফতারের সময় বেঁধে দিয়েছি।’’ আড়শা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি উজ্জ্বল কুমার বলেন, ‘‘আমরাও চাই প্রকৃত সত্য সামনে আসুক।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো এ দিনও বলেন, ‘‘পুলিশকে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে হবে। এই ঘটনা কোনও ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন