প্রতীকী ছবি।
এ বার বীরভূমের বেশ কিছু সমবায় সমিতিতে মিলবে ব্যাঙ্কের আধুনিক পরিষেবা। উদ্দেশ্য, গ্রামীণ মানুষের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সমকক্ষ পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া।
সমবায় দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা নেই, এমন এলাকায় সমবায় সমিতিগুলিতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের ব্যাঙ্ক পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়তে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। এ জন্য বিভিন্ন জেলার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কগুলিকে ওই সব এলাকায় তাদের ‘কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট’ বা গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বীরভূমে এমন গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র হতে চলেছে ৭৩টি।
জেলা সমবায় সমিতি সমূহের উপ নিয়ামক কৃষ্ণকান্ত সরকার বলেন, ‘‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা না-থাকা এলাকায় গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র খোলা হচ্ছেই। সঙ্গে বাড়তি আরও বেশ কিছু সমবায় সমিতিতে গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র খোলা হবে। যাতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ ব্যাঙ্কিংয়ের সুবিধা পান।’’ ওই আধিকারিক আরও জানান, জেলায় তিনশোরও বেশি সমবায় সমিতির মধ্যে এমন ১২৯টি সমিতি রয়েছে, যেখানে ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্কিং সিস্টেম চালু রয়েছে। সেগুলির মধ্যে বাছাই করা ৭৩টি সমবায় সমিতির পরিকাঠামো আরও উন্নত করে গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র খোলা হবে।
ব্যাঙ্ক মারফত বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা ও পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় অন্তত একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল কয়েক বছর আগে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। যদিও জেলা লিড ব্যাঙ্কের (ইউকো ব্যাঙ্ক) দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকা অনুযায়ী বীরভূমের পাঁচ হাজারের বেশি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে ব্যাঙ্ক বা ব্যাঙ্কিং পরিষেবা কেন্দ্র নেই, এমন এলাকা নেই। অন্য দিকে সমবায় দফতর সূত্রে খবর, জেলার মোট ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে ৫৪টিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কোনও শাখা নেই।
সমবায় দফতর জানিয়েছে, ব্যাঙ্কিং সিস্টেম চালু রয়েছে, এমন বাছাই করা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিগুলিকেই উপযুক্ত মানে পরিবর্তিত করা হবে। যেমন কোর ব্যাঙ্কিং পদ্ধতিতে নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা, টাকা জমা দেওয়া-তোলা, ব্যাঙ্ক চেক জমা দেওয়ার পরে দ্রুত টাকা পাওয়া, আরটিজিএস পদ্ধতিতে অন্যত্র টাকা পাঠানো এবং দ্রুত ঋণ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া, গ্রাহকদের সমবায় ব্যাঙ্কের এটিএম কার্ডও দেওয়া হবে। থাকবে সুন্দর বসার জায়াগা, সিসি ক্যামেরা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সমিতির কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ইত্যাদি। সে জন্য প্রতিটি সমবায় ব্যাঙ্ককে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হচ্ছে। এই টাকার ২০ শতাংশ করে মিলবে সরকারি শেয়ার ও ভর্তুকি হিসাবে। ৪০ শতাংশ দেওয়া হবে ঋণ হিসাবে। বাকি ২০ শতাংশ টাকা দিতে হবে সমবায় সমিতির নিজস্ব তহবিল থেকে। বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘চলতি বছরেই কয়েকটি সমবায় সমিতিতে ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র চালু করা হবে বলে শুনেছি।’’
কিন্তু প্রশ্ন হল, ‘দুর্বল’ কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের উপরে কতটা নির্ভরশীল হতে হবে সমবায় সমতিগুলিকে। কারণ বিপুল খেলাপি ঋণের জন্য টানা দু’বছর বন্ধ ছিল বীরভূমের কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের ১৭টি শাখা। বাতিল হয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লাইসেন্স। ব্যাঙ্ক বাঁচাতে রাজ্য, কেন্দ্র ও নাবার্ডের অর্থ সাহায্যে লাইসেন্স ফিরে পেয়ে পুনরুজ্জীবিত হলেও আর্থিক স্বাস্থ্য এখন কি ততটা সবল?
কৃষ্ণকান্তবাবুর কথায়, ‘‘কোর ব্যাঙ্কিং সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য নির্ভর তো করতেই হবে। তবে জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক স্বাস্থ্য মোটেও খারাপ নয়। নতুন গ্রাহক কম আসায় তহবিলের একটু সমস্যা আপাতত থাকলেও ৭৩টি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র খুললে গ্রাহক সংখ্যা বাড়বে। তখন লাভবান হবে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কও। মানুষও ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পাবেন।’’ এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানও।