ফাইল চিত্র।
আদালতের নির্দেশে মনোনয়নের একটা দিন তো বাড়ল। কিন্তু, ওই দিন প্রশাসনিক ভবনে ঢুকতে পারবেন তো প্রার্থীরা?
শুক্রবার পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরে বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতাদের আলোচনায় সেই প্রশ্নই ঘুরে ফিরে এল। মনোনয়ন জমার দিনে নিরাপত্তা নিয়ে কী পদক্ষেপ হয়, সে দিকেও তাকিয়ে জেলার বিরোধী শিবির। হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁদের নৈতিক জয় হয়েছে বলেও মনে করছেন বিরোধীরা।
জেলার বিরোধী দলের নেতারা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘উন্নয়ন’ এর বাধা ঠেলে সামান্য কিছু আসনেই মনোনয়ন জমা করা গিয়েছিল। ১০ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন মনোনয়নের দিন বাড়িয়ে ফের তা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় হতাশা তৈরি হয়েছিল। এখন বাকি আসনগুলিতে কী ভাবে মনোনয়ন করা যায় তারই কৌশল ঠিক করা হচ্ছে। তবে কোন পথ ধরে শাসকদলের উন্নয়ন ঠেলে সেটা করা যাবে তা স্পষ্ট করতে রাজি হয়নি বিজেপি ও সিপিএম কোনও শিবিরই।
বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলছেন, ‘‘এটুকুই বলব, উপযুক্ত প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও শাসকদলের সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের বাধা টপকে মনোনয়ন জমা করতে পারিনি। তবে এ বার একবার শেষ চেষ্টা করতে চাই।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলছেন, ‘‘শাসকদল ও নির্বাচন কমিশন মিলিত ভাবে গণতন্ত্রকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছিল। আদালতের রায়েই তা প্রমাণিত হয়েছে। কমিশন আগে দিন ধার্য করুক। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাকি আসনগুলিতে মনোনয়ন জমার চেষ্টা করব।’’
বীরভূম জেলা পরিষদের ৪২টি আসনের একটিতেও বিরোধী নেই। জেলার ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২২৪৭টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ২৩২২টি প্রার্থী দিলেও, দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিজেপি মনোনয়ন দাখিল করেছে মাত্র ৩২৩টিতে, বাম ২১৪টি, কংগ্রেস ৪৯টি আসনে। পঞ্চায়েত সমিতির অবস্থাও তথৈবচ। মোট ৪৬৫টি আসনের পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূল প্রার্থী দিয়েছে ৪৯৪টি আসনে। সেখানে বিজেপি ৭৭, বাম ৭০, কংগ্রেস ১৩টিতে। বিরোধী নেতাদের দাবি, জেলার প্রতিটি ব্লকে শাসকদলের বাধায় মনোনয়ন হয় দাখিল করা যায়নি, নতুবা বিরোধীদের আক্রান্ত। ব্যতিক্রম রাজনগর ও মহম্মদবাজার। ওই দুটি ব্লকের বাইরে ভোট হবে মযূরেশ্বর ১, ২ ও নলহাটিতে। বাকি ১৪টি ব্লকে বিরোধী প্রার্থী না থাকায় ভোটই হওয়ার কথা ছিল না। শুক্রবারের রায়ের পরে বিরোধীরা একটা সুযোগ পেয়ে গিয়েছে। এখন দেখার বিরোধীরা সেই সুযোগ কাজ লাগাতে পারে কিনা।
৯ এপ্রিল মনোনয়নের পরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ধরেই নিয়েছিলেন বিনা যুদ্ধে ৮০ শতাংশ জয় নিশ্চিত। সঙ্গে হুমকি ছিল, ‘১৬ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, তার আগে কেউ অসুস্থ হবে। কেউ যাবেন পিজি, কেউ যাবেন সিউড়ি হাসপাতাল।’ অনুব্রত বলেছিলেন, ‘দু’এক জায়গা যেখানে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে, সেখানে প্রচণ্ড মশার উৎপাত। মশারি টাঙানো থাকবে। মশা ঢুকবে না।’
ফের মনোনয়ন জমার সুযোগ পেয়েছে বিরোধীরা। এখন কী বলবেন? অনুব্রত বলছেন, ‘‘তৃণমূল সব পরিস্থিতি মোকবিলার জন্য প্রস্তুত আছে। দেখুন না কী হয়।’