সম্বল: বরাত কমছে। নিজস্ব চিত্র
বাঙালির কাছে নববর্ষ মানেই হালখাতা, নতুন বাংলা ক্যালেন্ডার আর মিষ্টির প্যাকেট। সেই নস্টালজিয়া ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে ক্যালেন্ডার আর ততটা আকর্ষণীয় নয়। এমনই মত ক্যালেন্ডার শিল্পের সঙ্গে জড়িত লোকজনের।
শহরের কয়েকটি পুরনো ছাপাখানা বা ক্যালেন্ডারের দোকান ঘুরে দেখা গিয়েছে, নববর্ষের আগের দিন ক্যালেন্ডার জোগান দিতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতেন দোকানদারেরা। কিন্তু এ বার তেমন বরাত আসেনি। পুরুলিয়া শহরের চাঁইবাসা রোডের তিন পুরুষের ছাপাখানার ব্যবসায়ী পার্থ সরকারের কথায়, ‘‘এ বার ক্যালেন্ডারের অর্ডার একেবারেই নেই। পরিচিত কয়েকজন কিছু অর্ডার দিয়েছেন। কিন্তু তা খুবই সামান্য।’’ এই প্রেসের বছর চল্লিশের কর্মী শেখ নাজির বলেন, ‘‘আমি এতটুকু বয়স থেকে এখানে কাজ করছি। নববর্ষের অনেক আগে থেকে ক্যালেন্ডার তৈরির চাপে নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকত না। আর এখন অর্ডারই নেই ক্যালেন্ডারের!’’
শহরের আর একটি ছাপাখানার মালিক রাকেশ অগ্রবালের কথায়, ‘‘এ বছরই হঠাৎ করে ক্যালেন্ডারের অর্ডার কমে গিয়েছে, এমনটা নয়। আগে থেকেই কমছিল। এ বছর আমি একটাও বরাত পাইনি।’’ কাশীপুরের মুদ্রণ ব্যবসায়ী প্রশান্ত ঘোষাল জানাচ্ছেন, বছর দশ-পনেরো আগেও ছবিটা এ রকম ছিল না। তাঁর আক্ষেপ, এ বার খুব অল্পই তিনি অর্ডার পেয়েছেন। একই কথা পুরুলিয়া শহরের ক্যালেন্ডার ব্যবসায়ী শেখ আনোয়ারেরও।
কেন এই অবস্থা?
পুরুলিয়ার নামোপাড়া এলাকার গয়না ব্যবসায়ী শুভেন্দু পাণ্ডব থেকে হুড়ার লালপুরের ব্যবসায়ী নয়ন দত্তদের কথায়, ‘‘আসলে ক্যালেন্ডারের আকর্ষণই কমে গিয়েছে।’’ ব্যবসায়ীদের কথায়, বাংলার তারিখের প্রয়োজনীয়তা কমে গিয়েছে। তাই ক্যালেন্ডার দিলেও অনেকে দেওয়ালে না টাঙিয়ে ঘরের কোণে ফেলে রাখেন।
আকর্ষণ কমেছে পঞ্জিকারও। জেলার ইতিহাস গবেষক দিলীপকুমার গোস্বামীর কথায়, ‘‘একটা সময়ে নতুন বাংলা পঞ্জিকা ছাড়া পারিবারিক কোনও অনুষ্ঠান ঠিক করা যেত না। এখন প্রয়োজন হলে পুরোহিতকে ফোন করে শুভদিন খুঁজে নেন তাঁরা।’’ পুরুলিয়ার বাসস্ট্যান্ড এলাকার দীর্ঘদিনের পঞ্জিকা বিক্রেতা শেখ তাজ বলেন, ‘‘পঞ্জিকার আর আগের মতো কাটতি নেই।’’
তবে এখনও কেউ কেউ নববর্ষ এলে নতুন ক্যালেন্ডারের অপেক্ষায় থাকেন। পঞ্জিকাও কিনে বাড়ি ফেরেন। তেমনই একজন পুরুলিয়ার বাসিন্দা কবি নির্মল হালদার বলেন, ‘‘একটা সময় ছিল নববর্ষের দিনে দোকানে দোকানে ঘুরে ক্যালেন্ডার জোগাড় করতাম। কে কতগুলো ক্যালেন্ডার সংগ্রহ করতে পারলাম, তা নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে অলিখিত প্রতিযোগিতা চলত। এখনও ক্যালেন্ডার হাতে পেলে ভাল লাগে। কাঁচা রঙের গন্ধে ছেলেবেলাটা যেন দেখতে পাই।’’