প্রণবের হাতে উঠল ভারতরত্ন, খুশি মিরিটি

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন প্রণববাবু প্রায় প্রতি বছরই বাড়ির দুর্গাপুজোয় যোগ দিতে হেলিকপ্টারে আসতেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা    

লাভপুর শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৯ ০২:৩৯
Share:

রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

মাসআটেক আগে গ্রামের ছেলের পুরস্কারপ্রাপ্তির খবর পৌঁছতেই অকাল দীপাবলিতে মেতেছিল লাভপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম মিরিটি। বৃহস্পতিবারও একই কারণে আবেগে ভাসলেন গ্রামের মানুষ। এ দিনই গ্রামের ভূমিপুত্র তথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দেওয়া হল ‘ভারতরত্ন’। প্রণববাবুর সৌজন্যে লাভপুরের ওই প্রত্যন্ত গ্রামের নাম ছড়িয়েছে। এই গ্রামেই প্রণববাবুর ছেলেবেলা কেটেছে। কীর্ণাহার শিবচন্দ্র হাইস্কুলে তিনি পড়াশোনা করেছেন। বিভিন্ন সময় প্রণববাবুর স্মৃতিচারণাতেও উঠে এসেছে সে সব কথা। তাঁর দান করা বিভিন্ন স্মারক নিয়ে কীর্ণাহার হাইস্কুলে গড়ে তোলা হয়েছে প্রদর্শনশালাও।

Advertisement

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন প্রণববাবু প্রায় প্রতি বছরই বাড়ির দুর্গাপুজোয় যোগ দিতে হেলিকপ্টারে আসতেন। কীর্ণাহার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মাঠে হেলিপ্যাডের পাশে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতেন হাজার হাজার মানুষ। সেখান থেকে প্রণববাবুর কনভয় পৌঁছত কীর্ণাহার লাগোয়া পরোটা গ্রামে দিদি অন্নপূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে গ্রামের উচ্ছ্বাস আরও বেড়ে যায়। সেই সময় প্রণববাবুর সঙ্গে আসত বায়ুসেনার তিনটি হেলিকপ্টার। দিদির বাড়ির সামনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে ‘গার্ড অফ অনার’ দেওয়া হতো। সে সব দেখতে ভিড় জমাতেন গ্রামবাসী।

গত জানুয়ারি মাসে প্রণববাবুকে ভারতরত্ন দেওয়ার ঘোষণার খবর পৌঁছেছিল মিরিটিতে। তখনও উচ্ছ্বাস ছড়ায় গ্রামে। প্রণববাবুর স্নেহভাজন হিসেবে পরিচিত মিরিটির ৬২ বছরের প্রিয়রঞ্জন ঘোষ, সাধন ঘোষের কথায়, ‘‘প্রণববাবুর দৌলতে এই গ্রামের নাম চার পাশে ছড়িয়েছে। তাঁর জন্য গ্রামবাসীরা গর্বিত। এ বার সেই গর্বের মুকুটে আরও একটি পালক যোগ হল। যিনি ভারতের রত্ন তিনি তো এই গ্রামেরও রত্ন।’’

Advertisement

একই প্রতিক্রিয়া প্রণববাবুর বাল্যবন্ধু হিসেবে পরিচিত কীর্ণাহারের বলদেব রায় এবং নীহাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘বন্ধু হিসেবে দীর্ঘদিন আগেই আমরা গর্বের জায়গায় পৌঁছে গিয়েছি। তা আরও বেড়ে গেল।’’ গর্বিত নীহারবাবুর মেয়ে স্বাস্থ্যকর্মী তৃপ্তি বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বাবার বন্ধুত্বের সুবাদে তিনি প্রণববাবুকে ‘কাকু’ বলে সম্বোধন করেন। ২০১৫ সালে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রণববাবুর হাত থেকেই ‘ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেল অ্যাওয়ার্ড ফর লাইফটাইম অ্যাচিভমেণ্ট’ পুরস্কার নিয়েছেন তৃপ্তিদেবী। তিনি বলেন, ‘‘ভাবতেই ভাল লাগছে উনি আজ দেশের সেরা পুরস্কার পাচ্ছেন।’’

অসুস্থতার জেরে শয্যাশায়ী প্রণববাবুর দিদি অন্নপূর্ণাদেবী এ দিন কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। তাঁর পুত্রবধু লিপিদেবী বলেন, ‘‘মা অসুস্থ। পরশু মামার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে ওঁর।’’ জানুয়ারি মাসে ভাইয়ের ভারতরত্ন পাওয়ার খবর শুনে অন্নপূর্ণাদেবী বলেছিলেন, ‘‘এত আনন্দ হচ্ছে যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। ওঁর যোগ্য সম্মানই ও পেয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন