কোপাইয়ের পাড় দখলের নালিশ, তদন্ত 

উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত একশো দশ কিলোমিটার গতিপথে অনেক জায়গাতেই গজিয়ে উঠেছে বেআইনি ইটভাটা আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে যথেচ্ছ পরিমাণে বালি তোলা।

Advertisement

বাসুদেব ঘোষ 

বোলপুর শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৯ ০১:০৬
Share:

অনিয়ম: ইটের স্তূপ ফেলে এ ভাবেই ‘ভরাট’ করা হচ্ছে কোপাইয়ের পাড়। বোলপুরে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

নদীর চর থেকে বেআইনি ভাবে বালি চুরির অভিযোগ উঠেছে বারবার। একাধিক জায়গায় নদীর বুক থেকে মাটি চুরি করে নেওয়ারও অভিযোগ কম নয়। এ বার নদীর পাড় দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠল।

Advertisement

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখায় কোপাই নদীর নাম এসেছে অসংখ্যবার। ময়ূরাক্ষীর উপনদী কোপাইয়ের উৎস ঝাড়খণ্ডের খাজুরি গ্রামে। উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত একশো দশ কিলোমিটার গতিপথে অনেক জায়গাতেই গজিয়ে উঠেছে বেআইনি ইটভাটা আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে যথেচ্ছ পরিমাণে বালি তোলা। আর এর ফলে কোপাই তার চলার স্বাভাবিক ছন্দ হারাচ্ছে। নদীও তার গতিপথ বদলাচ্ছে বাধ্য হয়েই। উৎস স্থল খাজুরি থেকে লোকপুর, বীরভূমের বিনুরিয়া এমনকি মোহনায় হাঁসুলী বাঁকের কাছেও ইটভাটা গজিয়ে উঠেছে অবৈধ ভাবে। সেচ দফতরও বাঁধ দিয়ে খাল কেটেছে। ক্রমশ চেনা গতিপথ হারাচ্ছে এই নদী। বিশ্বভারতীর নদী বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই কোপাই নিয়ে একটি সমীক্ষায় এই সমস্যাগুলির কথা তুলে ধরেছেন।

এ বিষয়ে নদী গবেষক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নদীরও প্রাণ আছে। কিন্তু আজ কোপাইয়ের উপরে বিভিন্ন অত্যাচার চলছে।’’ তিনি জানান, শুধু বীরভূম জুড়ে কোপাই নদীর উপরে ২৮টি ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে। নদীকে বাঁচাতে অবিলম্বে নদী সংলগ্ন ইটভাটাগুলিকে বন্ধ করতে হবে। ইটভাটার বর্জ্য পদার্থ কোনও ভাবেই নদীতে ফেললে চলবে না। এ ভাবে চললে নদীকে আর তার পুরনো গতিপথে ফেরানো যাবে না।

Advertisement

বোলপুরের কঙ্কালীতলার পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে কোপাই নদী। কঙ্কালীতলা শ্মশানের ঠিক উল্টোদিকে কোপাই নদীর গায়েই রয়েছে একটি ইটভাটা। অভিযোগ, ওই ইটভাটার ময়লা, আবর্জনা, বর্জ্য পদার্থ নদীতে ফেলে নদীকে শুধু দূষিত করছে তাই নয়, নদীর পাড় দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে। বছর সাতেক ধরে একটু একটু করে ভাটার পোড়া ইটের টুকরো দিয়ে দিনের পর দিন চলেছে নদীর পাড় দখল। স্থানীয়েরা জানান, কঙ্কালীতলা শ্মশান সংলগ্ন নদীর এক দিকের পাড় ইট ফেলে দখল করে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনের দীর্ঘদিনের উদাসীনতায় এই প্রবণতা আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই জায়গায় গিয়ে দেখা গেল, সত্যিই পাড়ে ফেলে রাখা হয়েছে অসংখ্য ইট। কঙ্কালীতলা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মহম্মদ ওহিদউদ্দিন বলেন, ‘‘নদী আমাদের সম্পদ। সত্যিই এমন হয়ে থাকলে ওই ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ বোলপুর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সঞ্জয় রায় বলেন, ‘‘ইটভাটার একটি নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত বাঁধা রয়েছে। তার বাইরে তারা যেতে পারে না। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। সত্যিই পাড় দখল হয়ে থাকলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তিনি জানান, ওই ইটভাটা মালিকের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। কঙ্কালীতলার ওই ইটভাটা মালিকের যদিও দাবি, ‘‘নদীর পাড় খেয়ে যাচ্ছিল, তাই ইটের টুকরো দিয়ে বাঁধ দিয়েছিলাম। ভরাট করিনি। সে-ও অনেকদিন আগের কথা। তখন আর বিএলএলআরও-র দফতর থেকে কোনও অনুমতিও নেওয়া হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন