দলনেত্রী যতই বকাঝকা করুন, বাঁকুড়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থামার লক্ষণ নেই। সোমবার সকালে দলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদের জেরে বোমাবাজির ঘটনা ঘটল মেজিয়ার জেমুয়া এলাকায়। ঘটনায় কেউ জখম না হলেও এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দিনভর পুলিশ টহল চলে ওই গ্রামে। যদিও সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও পক্ষই থানায় অভিযোগ জানায়নি।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনই মেজিয়ার কালিকাপুরে একটি সভার আয়োজন করেছিলেন শালতোড়ার বিধায়ক স্বপন বাউরি। ওই সভাকে কেন্দ্র করেই কিছু দিন ধরে মেজিয়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় ও বিধায়ক স্বপনবাবুর শিবিরের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। স্বপনবাবুর বিরুদ্ধে দলের জেলা সভাপতি ও রাজ্য নেতাদের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন মলয়বাবু। তাঁর অভিযোগ, স্বপনবাবু ব্লক নেতৃত্বের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করেই ওই সভার আয়োজন করেছেন। এমনকী, দলীয় কর্মীদের বাদ দিয়ে এলাকার সিপিএম ও বিজেপি কর্মীদের নিয়েই ওই সভা করছেন।
বোমাবাজির ঘটনাকে ঘিরে ওই দুই নেতার কাজিয়া প্রকাশ্যে এসেছে। এ দিনের বোমাবাজির জন্য বিধায়ককেই দায়ী করে ব্লক সভাপতির দাবি, “স্বপনবাবুর আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই আমাদের কর্মীদের দিকে বোমা ছোড়ে। এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছেন স্বপনবাবু। তাঁর এই কাজকর্মের জন্য দলের উপর থেকে মানুষের আস্থা চলে যাচ্ছে।’’ সমস্ত কিছু দলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন বলেও মলয়বাবুর দাবি। যদিও এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্বপনবাবু। তাঁর মন্তব্য, “রাজনৈতিক বোধের অভাব রয়েছে বলেই এই সব ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে মলয়। এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।’’ তাঁর সংযোজন, “বোমাবাজির সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। এলাকার কিছু লোকজনের মধ্যে ব্যক্তিগত ঝামেলার জেরেই ওই ঘটনা ঘটেছে।’’
এ দিকে মেজিয়ার পরিস্থিতি বিবেচনা করেই এ দিন স্বপনবাবুকে সভা স্থগিত করতে নির্দেশ দেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই নির্দেশ মেনে স্বপনবাবু সভা করেননি। দ্বন্দ্ব মেটাতে আজ, মঙ্গলবার বিধায়ক ও ব্লক সভাপতিকে নিয়ে আলোচনায় বসতে চলেছেন জেলা নেতৃত্ব। মলয়বাবু ও স্বপনবাবু দু’জনেই সে কথা মেনেছেন। যদিও গোটা ঘটনাটি নিয়ে নির্দিষ্ট মন্তব্য করতে রাজি হননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ। তিনি বলেন, “এ সব দলের ব্যাপার। মলয় কোনও অভিযোগ জানিয়েছে কিনা তা খোঁজ নিয়ে দেখব। মেজিয়ায় কী কারণে বোমাবাজি হয়েছে আমার জানা নেই।’’
ঘটনা হল, রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই বাঁকুড়া জেলার ব্লকে ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলছেই। গত বিধানসভা নির্বাচনে গোটা রাজ্যের তুলনায় এই জেলায় শাসকদলের খারাপ ফলাফলের জন্য এই অন্তর্দ্বন্দ্বই অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করেন রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্বও। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে জেলায় এসে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে কড়া নির্দেশ দিলেও সমস্যা মেটাতে ব্যর্থ জেলা নেতৃত্ব। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের এই কোন্দল ফের ভোগাতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে।