সিপিএমকর্মীকে মারেও অভিযুক্ত তৃণমূল

ছেলে কংগ্রেস নেতা, দোকান বন্ধের নালিশ

ছেলে কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি। ভোটে দলীয় প্রার্থীর হয়ে কাজও করেছিলেন। তাঁর বুথেই কংগ্রেস প্রার্থীর ‘লিড’ সবচেয়ে বেশি। সেই ‘অপরাধে’ ভোটের ফল বেরোনোর পর দিন থেকেই ওই যুবকের বাবার দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। বলরামপুরের ওই ঘটনায় অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। পাশের জেলা বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ে আবার এক সিপিএম কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৬ ০১:৫৪
Share:

ছেলে কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি। ভোটে দলীয় প্রার্থীর হয়ে কাজও করেছিলেন। তাঁর বুথেই কংগ্রেস প্রার্থীর ‘লিড’ সবচেয়ে বেশি।

Advertisement

সেই ‘অপরাধে’ ভোটের ফল বেরোনোর পর দিন থেকেই ওই যুবকের বাবার দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। বলরামপুরের ওই ঘটনায় অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। পাশের জেলা বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ে আবার এক সিপিএম কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে।

পুরুলিয়া-জামশেদপুর ৩২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বলরামপুর পোস্টঅফিস মোড়ের কাছে একটি চা-তেলেভাজার দোকান চালান বিদেশি নাগ। তাঁর ছেলে শুভজিৎ কংগ্রেসের বলরামপুর অঞ্চল সভাপতি। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো এই কেন্দ্রে ১০ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়েছেন জোট প্রার্থী কংগ্রেসের জগদীশ মাহাতোকে। ফল প্রকাশের পরে দেখা যায়, বলরামপুরের ১৯টি বুথের মধ্যে ১০টিতে ‘লিড’ রয়েছে কংগ্রেস প্রার্থীর। সেগুলির মধ্যে চুটকিডি এলাকায় সবচেয়ে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। বাকি ৯টিতে বেশি ভোট পেয়ে জেতেন শান্তিরামবাবু। জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর খাসতালুক বলরামপুরে এই ফল মেনে নিতে পারেননি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

শুভজিতের বাড়ি চুটকিডি এলাকাতেই। এই বুথে তৃণমূল পেয়েছে ৩২২ ভোট। সেখানে কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছেন ৫০৪টি ভোট। তার পরেই বন্ধ করে দেওয়া হয় শুভজিতের বাবা বিদেশি নাগের খাবারের দোকানটি। বিদেশিবাবুর অভিযোগ, ‘‘১৯ তারিখ, ফল প্রকাশের দিন সন্ধ্যায় কয়েক জন এসে দোকান বন্ধ করার নির্দেশ দিল। ওরা সবাই তৃণমূল করে। কারণ জানতে চাইলে ওই যুবকেরা বলল, আমার ছেলে কংগ্রেসের নেতা, তাই। সেদিন থেকেই আমার দোকান বন্ধ। খোলার সাহসও পাচ্ছি না।’’ বিদেশিবাবু তাঁর বড় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এই দোকান চালান। দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়ছেন সংসার চালাতে।

বিদেশিবাবুর আরও দাবি, এই ‘ফতোয়া’র দু-একদিন পর থেকে স্থানীয় তৃণমূলের নেতাদের কাছে গিয়েছেন দোকান খোলার অনুমতি চাইতে। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দোকান খুলতে পারেনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তৃণমূল নেতাদের বলেছি, আমি তো কোনও দল করি না। আমার ছোট ছেলে কংগ্রেস করে। সে দোকানে থাকেও না।’’ শুভজিৎ বলেন, ‘‘আমি যে এলাকায় থাকি, সেই বুথেই কংগ্রেস সবচেয়ে বেশি লিড পেয়েছে। কিন্তু তার জন্য বাবার দোকান বন্ধ করে দেওয়া হল কেন? ওই দোকান আমার নয়। বাবা আর দাদা চালায়।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, তৃণমূলের তরফে তাঁকে কংগ্রেসের সঙ্গ ছাড়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। ফলে একটা আতঙ্ক কাজ করছে তাঁদের পরিবারে।

অভিযোগ মানতে চাননি বলরামপুরের তৃণমূল নেতা হলধর গরাঁই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই দোকান বন্ধ হয়েছে বটে। কিন্তু আমরা করিনি। তা ছাড়া, আমার সঙ্গে ওই দোকানের কোনও সম্পর্ক নেই। ওই দোকানে যাইও না।’’ সভাধিপতি তথা তৃণমূলের বলরামপুর ব্লক সভাপতি সৃষ্টিধর মাহাতোরও দাবি, তৃণমূল বন্ধ করে দিয়েছে বলে খবর তাঁর কাছে নেই। বরং বিদেশিবাবু যাঁর জমিতে দোকান চালাচ্ছেন, তিনি জমি ছাড়ছেন না বলেই তাঁরা শুনেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিরোধী রাজনীতি করছেন বলেই কারও দোকান বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষপাতী আমরা নই। ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ যদিও বিদেশিবাবুর দাবি, ‘‘আমার দোকান কারও ব্যক্তিগত জমিতে নয়। সরকারি জমি। সেখানে ৩৩ বছর দোকান চালাচ্ছি।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোও এমন ঘটনার কথা শোনেনি। খোঁজ নেবেন বলে জানিয়েছেন।

অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে বেলিয়াতোড়ের ভট্টপাড়া এলাকায় তৃণমূলের একটি বিজয় মিছিল থেকে সিপিএম কর্মী উমাশঙ্কর আইচের উপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে লিখিত ভাবে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী দুলাল ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। উমাশঙ্করবাবুর অভিযোগ, তৃণমূলের বিজয় মিছিল তাঁর বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দুলালবাবুর নেতৃত্বে কয়েক জন তাঁর বাড়িতে ঢুকে হামলা চালায়। লোহার রড দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জখম সিপিএম কর্মীকে বেলিয়াতোড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করানো হয়। তাঁর অভিযোগ, “হামলাকারীরা মারতে মারতে বলছিল, সিপিএম করলে জানে মেরে ফেলবে। ওরা ভোটে বড়জোড়ায় হেরে যাওয়ার পর থেকেই আমাকে হুমকি দিচ্ছিল। এ দিন সত্যি সত্যিই হামলা চালাল।’’ সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরী বলেন, “আসলে নির্বাচনে পরাজয় তৃণমূল কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। তাই রেজাল্ট বের হওয়ার পর থেকেই বড়জোড়া কেন্দ্রে আমাদের কর্মীদের উপর একাধিক হামলা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পুলিশ গ্রেফতার না করলে বড় আন্দোলনে নামব।’’

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে। দুলালবাবুর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। যদিও গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের তৃণমূল সভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমাদের মিছিল চলাকালীন সিপিএম কর্মীরা ইট-পাটকেল ছুড়ছিল। নিজেদের ছোড়া ইটের ঘায়েই ওই সিপিএম কর্মীর মাথা ফেটেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement