কোয়রান্টিনে ক্ষোভ
Coronavirus

আড়ালে কি আরও, উঠছে প্রশ্ন

জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, হোম কোয়রান্টিনে রয়েছেন ১৪০০ জন। কিন্তু স্থানীয় সূত্রে খবর, বাস্তবে এর বাইরেও এমন অনেকে রয়ে গিয়েছেন, যাঁরা প্রশাসনের নজরেই আসেননি।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত 

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২০ ০২:১৮
Share:

রামপুরহাট ১ ব্লকের কিসান মান্ডিতে রবিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেরল, গয়া থেকে আসা শ্রমিক, তীর্থযাত্রী মিলিয়ে মোট ৬২ জনকে কোয়রান্টাইনে রাখা হয়। শ্রমিকদের অভিযোগ, কিসান মান্ডিতে একটি গুদামে তারপুলিন বিছিয়ে রাখা হয়েছে। পানীয় জলের ব্যবস্থা নাই। খাবার সরবরাহ করা হয়নি। রামপুরহাট মহকুমাশাসক শ্বেতা আগরওয়াল অবশ্য জানান, মহকুমায় রবিবার রাত পর্যন্ত ৩৪৫ জনকে মহকুমা এলাকায় বিভিন্ন প্রান্তে কোয়রান্টাইনে রাখা হয়েছে। ওঁরা মিথ্যে অভিযোগ এনে গুজব ছড়াচ্ছে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

বিদেশ থেকে বা করোনা সংক্রমিত দেশের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে যাঁরাই জেলায় ফিরেছেন, প্রথমে উপসর্গ না থাকলেও বাধ্যতামূলক ভাবে তাঁদের হোম কোয়রান্টিনে বা কোয়রান্টিন কেন্দ্রে থাকতে হবে। উপসর্গ দেখা দিলেই পাঠানো হবে আইসোলেশনে। করোনা সংক্রমণ রুখতে এটাই সরকারি নির্দেশিকা। কিন্তু জেলায় যাঁরা ফিরেছেন, তাঁদের সকলকে চিহ্নিত করা গিয়েছে কি না, বা হোম কোয়রান্টিনে আনা গিয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই।

Advertisement

জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু অবশ্য জানিয়েছেন, বাইরে থেকে আসা বাসিন্দাদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, হোম কোয়রান্টিনে রয়েছেন ১৪০০ জন। কিন্তু স্থানীয় সূত্রে খবর, বাস্তবে এর বাইরেও এমন অনেকে রয়ে গিয়েছেন, যাঁরা প্রশাসনের নজরেই আসেননি। এই পরিস্থিতিতে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নয়, ভয় বাড়াচ্ছে পুরশহরগুলিই।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর, জেলার খয়রাশোলের পাঁচড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিদেশ থেকে এবং দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ফিরেছেন প্রায় শখানেক মানুষ। বাসিন্দারা অনেকেই বলছেন, একটি পঞ্চায়েত এলাকার ছবিটা যদি এমন হয় তাহলে গোটা জেলায় ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতে সংখ্যাটি আরও বাড়বে।

প্রশাসনেরই একটা সূত্র বলছে, গ্রামে প্রত্যেকে প্রত্যেককে চেনেন। কেউ বাইরে থেকে ফিরলে সে খবর দ্রুত ছড়ায়। করোনা নিয়ে আতঙ্কের জন্য এই খবর রাখার প্রবণতাও বেড়েছে। সেই সঙ্গে গ্রামে গ্রামে আশাকর্মী, স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য, জেলা পুলিশের তরফে এলাকাভিত্তিক সিভিক ভলান্টিয়ারদের নজরদারি জন্য বাইরে থেকে কেউ এলেই খবর পাচ্ছে প্রশাসন।

শহরে অবশ্য এত সহজে খবর পাওয়া সম্ভব নয় বলেই জানাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা। শহরে সাধারণত একটি পরিবার আশপাশের পরিবারের বিষয়ে তেমন খোঁজ রাখেন না। তাই এলাকার কে কোথায় গিয়েছে ফিরেছেন কি না সে খবরও সেভাবে রাখেন না প্রতিবেশীরা। এই সুযোগে বাইরে থেকে জেলায় ফিরেও অনেকে চুপচাপই থেকে গিয়েছেন বলে অভিযোগ।

কেবল অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিক নয়, শহর এলাকায় সেই তালিকায় রয়েছেন অনেক উচ্চপদস্থ কর্মী বা পড়ুয়ারাও। তাঁরাই ভবিষ্যতে সংক্রমণের কারণ হবেন কি না সেই আশঙ্কাও রয়েছে।

সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা সেই উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। জার্মানি থেকে দিল্লি হয়ে ১১ তারিখ এক যুবক কলকাতা নেমে কলেজ সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিয়ে ১৩ তারিখে সিউড়ি এসেছিলেন। হোম কোয়রান্টিনে থাকার কথা থাকলেও তিনি শহরে ঘুরেছেন বলে অভিযোগ। ১৯ তারিখ তিনি মহম্মদবাজার এলাকার একটি গ্রামে তাঁর বাড়িতে পৌঁছলে ঘটনা আশাকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ার মারফত স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের কানে এলে তাঁকে হোম কোয়রান্টিনে রাখা হয়।

আমেরিকা থেকে ১৫ দিন আগে ফিরে একইভাবে সিউড়ি সংলগ্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন আরেক ব্যক্তি। তিনি অসুস্থ শিশুকে ডাক্তার দেখাতে এলে সে কথা জানতে পারেন স্বাস্থ্য কর্তারা। শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ ২৪ পরগণায় তাঁকে চিহ্নিত করে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা হয়। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাই বলছেন, কয়েকটি ঘটনা জানা গেলেও এমন একাধিক ঘটনা এখনও না জানা থাকতে পারে।

সিউড়ির পুর কাউন্সিলরদের একটা অংশ বলছেন, সিউড়ির জনসংখ্যা ৮০ হাজার। বিদেশ থেকে তো বটেই চাকরি, পড়াশুনো এবং কাজের জন্য বহু মানুষ অন্য রাজ্যে বা দেশে থাকেন। করোনা আতঙ্ক ছড়ানোর পর গ্রামের পাশাপাশি শহরেরও ফিরেছেন তাঁরা। তার মধ্যে অনেকেরই যে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়নি তাও মানছেন তাঁরা।

৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজি ফরজুদ্দিন বা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিদ্যাসাগর সাউ বলছেন, “আমাদের নজরে এলে তাঁদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। কিন্ত সবাইকে চিহ্নিত করা গিয়েছে এমনটা নয়। সকলেরই এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত।”

একই আশঙ্কা বোলপুর, রামপুরহাট, সাঁইথিয়া নলহাটি শহরেও। দুবরাজপুর পুরসভার হাল বেশ খারাপ। পুরসভার মেয়াদ ফুরনোও জনসংযোগ কমার একটা কারণ বলে মানছেন অনেকে। কে কবে বাইরে থেকে ফিরেছেন তার কোনও তথ্যই নেই। স্বাস্থ্যকর্মী থাকলেও আশাকর্মী না থাকায় প্রতিটি পরিবেরের হিসেব রাখা, পুর এলাকায় সিভিক ভলান্টিয়ার থাকলেও প্রতিটি পরিবার ধরে খবর রাখা সত্যিই দুষ্কর।

ডাক্তারেরা মনে করাচ্ছেন এই প্রবণতা মারাত্মক হতে পারে। কারণ হতেই পারে ভাইরাস থাকলেও ১৪ দিন পর্যন্ত তেমন উপসর্গ দেখা দিল না। কিন্তু তা পরিজন ও আশপাশের লোকজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ল। তাই এ ক্ষেত্রে বাইরে থেকে ফেরা লোকজন ও তাঁদের পরিবারের সচেতনতার উপরেই জোর দিচ্ছেন তাঁরা।

তবে বিমানবন্দর থেকেই বা যাত্রীদের তথ্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আসছে না কেন সেই প্রশ্ন উঠেছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তথ্য পাওয়ায় ফাঁক ছিল। তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানোও হয়েছে। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলছেন, “আশাকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের সাহায্য নিয়ে তালিকা তৈরি হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন