লক-ডাউনের মাঝে সিউড়ির অস্থায়ী বাজারে এমনই ভিড় চোখে পড়ল বৃহস্পতিবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
করোনা-সংক্রমণ ঠেকাতে চলা লকডাউন সার্থক করার জন্য বাড়ি থেকে না বেরোনোর আবেদন বারবার করছেন মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তা ও চিকিসকেরা।বীরভূমের সদর-সহ বিভিন্ন পুর-শহরে মাইক লাগিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে লাগাতার। তাতেও কি শহরের মানুষের হুঁশ ফিরেছে? লকডাউন কি বাস্তবে সার্থক? সমাজের সচেতন মানুষদের মতে, না। সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই সিউড়ি, বোলপুর শহরের বিভিন্ন মড়ো চোখে পড়ছে জটলা। ইতিউতি চলছে আড্ডাও। বাজারে ভিড়ও বছরের অন্য দিনের মতোই। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের বিকল্প নেই, এ কথা বারবার প্রচার করা হলেও বহু ক্ষেত্রেই ভাঙা হচ্ছে শৃঙ্খলা। আর এ সব কারণেই প্রমাদ গুনছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর এবং পুলিশ-প্রশাসন।
সিউড়ির ছবি
বৃহস্পতিবার সকালে সিউড়ির টিনবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, মোড়ে মোড়ে কিছু মানুষের জমায়েত হয়েছে। সঙ্গে চলছে করোনা নিয়ে আলোচনা। একই ছবি এসপি মোড় ও বড়বাগান মোড়ে। বড়বাগান এবং হাসপাতাল মোড় সংলগ্ন এলাকায় তো চায়ের দোকানও খোলা! সেখানেও চায়ের চুমুকের সঙ্গে আড্ডায় মেতেছেন বেশ কয়েক জন। পারস্পরিক দূরত্ব মেনে চলার যে কথা বলছে ডাক্তার-মহল, তা মানা হচ্ছে না মোটেও। যদিও পরে পুলিশ গিয়ে দোকান বন্ধ করায়। জটলার ছবিটা আলাদা নয় বাসস্ট্যান্ড, আরটি স্কুল মোড়, মসজিদ মোড়ের মতো এলাকাতেও। প্রশ্ন উঠছে, সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে কী ভাবেই করোনার মতো মারণ-ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় করা সম্ভব।
বোলপুরের ছবি
সিউড়ি থেকে বিশেষ আলাদা নয় বোলপুরের অবস্থা। লকডাউনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পাড়ার মোড়ে মোড়ে, রাস্তার ধারে বসে আড্ডা দিচ্ছেন মানুষজন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বহু মানুষকে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে। শহরের চা ও পানের গুমটি দোকানও একে একে খুলতে শুরু করেছে। সেখানে আড্ডাও দিতে দেখা যাচ্ছে বহু মানুষকে। এ দিন শহরের চৌরাস্তা থেকে শুরু করে স্টেশন যাওয়ার রাস্তায় ছিল চোখে পড়ার মতো ভিড়। এমনকি, এ দিন রামনবমী উপলক্ষে শহরের একাধিক জায়গায় লকডাউনকে উপেক্ষা করেই পুজোয় মানুষজনকে ভিড় জমাতে দেখা গিয়েছে। অনেকেই আবার বিনা কাজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ছেন স্রেফ লকডাউন কেমন চলছে দেখতে। পথেঘাটে টোটোর দেখাও মিলছে যথেষ্ট।
সুযোগ পেলেই বাজারে
সিউড়ি-সাঁইথিয়া বাইপাসের বাজারে গিয়ে দেখা গেল, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কার্যত গায়ে গা লাগিয়ে বাজার করছেন মানুষজন। পরিচিত কাউকে দেখে দু’দণ্ড গল্পগাছাও হচ্ছে। “কী দিন এল বলুন তো! এ ভাবে কি বাঁচা যায়।“—বলেই আবার মন দিচ্ছেন আনাজ বা মাছ কেনায়। অথচ এই ভিড় ঠেকাতেই শহরজুড়ে পুলিশ অভিযান চালাছে। অভিযোগ, পুলিশ চলে যাওয়ার পরেই যে কে সেই। একই ভাবে বোলপুরের হাটতলার বাজার কিংবা মাছের বাজার এলাকায় এদিনও ভিড় ছিল। প্রশাসনের তরফ থেকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দোকানগুলিতে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য দাগ কেটে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, অধিকাংশই সেই নিয়ম না মেনে কেনাকাটা করছেন।
কী বলছেন নাগরিেকরা
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, লকডাউন ঘোষণার পরে পরেই পুলিশের যে সক্রিয়তা লক্ষ্য করা গিয়েছিল, তা কয়েক দিনে কিছুটা কমে যেতেই এই অবস্থা। মানুষ নিজে সচেতন না হলে কোনও দিনই লকডাউন সফল করা যাবে না। বোলপুরের
সুকুমার দাস, দিলীপ সরকার, শুভাশিস রায়রা বলছেন, “করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় বাড়িতে থাকা। রাস্তায় ঘোরাঘুরি না করা। তা সত্বেও কিছু মানুষ সেই নিয়ম লঙ্ঘন করেছন। এতে সংক্রমণ দ্রুত ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়ছে। তাই প্রশাসনকে আর একটু কঠোর হওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।’’
অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।