Durga Puja 2020

মণ্ডপে ভিড় রোখাই চ্যালেঞ্জ

আদালতের রায় যাতে ঠিক মতো মানা হয়, তা নিশ্চিত করতে শুরু হয়েছে প্রশাসনিক তৎপরতাও। আদালতের নির্দেশের পরে পরেই জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও প্রত্যেক পুজো কমিটিকে কী করতে হবে, তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

বাসুদেব ঘোষ 

বোলপুর শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২০ ০০:০১
Share:

ফাইল চিত্র।

দুর্গাপুজোর মণ্ডপ দর্শক-শূন্য রাখতে হবে বলে সোমবার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু, ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর পক্ষে ওই রায়ের পুনর্বিবেচনার যে আর্জি মঙ্গলবার জানানো হয়েছিল, তাতে শেষ পর্যন্ত একটা বিকল্প রাস্তা বের হবে বলে আশায় ছিলেন পুজো উদ্যোক্তারা। সেই আবেদন বুধবার খারিজ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসক মহলে স্বস্তির শ্বাস পড়লেও পুজো কর্মকর্তাদের মাথায় হাত। আদালত সেই রায় বহাল রাখায় সেই সম্ভবনাও কার্যত খারিজ হয়ে যায়। আগের দিনের রায় সামান্য শিথিল করে বড় পুজোর ক্ষেত্রে এক সঙ্গে ৪৫ জন ও ছোট পুজোর ক্ষেত্রে এক সঙ্গে ৩০ জনের বেশি ঢুকতে পারবেন না বলে হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে। অষ্টমীর পুজোর অঞ্জলি ও দশমীর সিঁদুর খেলাতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত।

Advertisement

এই অবস্থায় পুষ্পাঞ্জলি থেকে শুরু করে ঠাকুর দেখা বা সিঁদুরখেলা কী ভাবে হবে, সে নিয়ে বিকল্প ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে বীরভূমের পুজো কমিটিগুলি। আদালতের রায় যাতে ঠিক মতো মানা হয়, তা নিশ্চিত করতে শুরু হয়েছে প্রশাসনিক তৎপরতাও। আদালতের নির্দেশের পরে পরেই জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও প্রত্যেক পুজো কমিটিকে কী করতে হবে, তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ সকলকেই মানতে হবে। সেই মতো যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নেওয়া হচ্ছে।’’

চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞেরা বারবার বলছেন, একটা বছর বাড়িতে থেকে পুজোর আনন্দ উপভোগ করলে পরবর্তী দিনগুলি সুরক্ষিত থাকবে। পুজো কমিটিগুলির উচিত, আদালতের রায় মেনে বিকল্প পদ্ধতিতে জনতাকে পুজো দেখানোর বন্দোবস্ত করা। তবে, জো নিয়ে আদালতের নির্দেশ শহরাঞ্চলের পুজো কমিটিগুলি যতটা সম্ভব মেনে চললেও, গ্রামাঞ্চলের পুজোয় কতটা কী করা যাবে, তা নিয়ে সন্দিহান বিভিন্ন মহল।

Advertisement

ঘটনা হল, সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাট, দুবরাজপুরের বড় বাজেটের পুজো উদ্যোক্তাদের কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। কারণ বেশির ভাগ পুজো মণ্ডপই প্রস্তুতির শেষ পর্বে এমনকি কোনো কোনো পুজো মণ্ডপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও হয়ে গিয়েছে।

এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে তাঁরা ভেবেছিলেন, বুধবার আদালত রায় পুনর্বিবেচনা করে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বোলপুরের বড় বাজেটের পুজোগুলির অন্যতম ভুবনডাঙ্গা আদি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। যেহেতু রাস্তার একেবারে ধারে এই পুজো হয়ে থাকে, তাই নো-এন্ট্রি জ়োন করতে গেলে গোটা রাস্তাই বন্ধ করতে হবে। ক্লাবের সম্পাদক তথা বিদায়ী কাউন্সিলর সুকান্ত হাজরা বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মেনে আমরা যতটা পারব ব্যারিকেড দেওয়ার চেষ্টা করব।’’ ফি-বছর পুজোয় বিরাট ভিড় টানে বোলপুর অ্যাথলেটিক্স অ্যান্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন ক্লাবের পুজো। ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ অতনু ঘোষ বলেন, ‘‘হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে আমরা পুজো মণ্ডপের সামনে ব্যারিকেডের ব্যবস্থা করব।’’ বোলপুর দেবেন্দ্র গঞ্জ সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজোও রাস্তার ধারে প্যান্ডেল করে হয়। ভিড় কী ভাবে আটকাবেন সে নিয়ে সমস্যায় পড়েছে তারাও।

বড় বাজেটের পুজোগুলির চৌরঙ্গী ক্লাবের উদ্যোক্তা দেবাশিস ধীবর বলছেন, ‘‘এই রায় কিছুদিন আগে হলে ভাল হত। তা হলে অন্তত কিছুটা হলেও অপচয় কম হত।’’ সিউড়ি রবীন্দ্রপল্লী সর্বজনীনের উদ্যোক্তা গোপী দাসের কথায়, ‘‘ পুজো মণ্ডপ দর্শকদের জন্যই। তাঁরাই যদি ঢুকতে না পান, তাহলে আর কিসের পুজো?’’ আদালতের রায়ের অপেক্ষায় ছিল দুবরাজপুরের উত্তরাঞ্চল, দুবরাজপুর স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন, পথীকৃৎ-সহ বেশ কয়েকটি ক্লাব। এ দিন আদালতের নির্দেশের পরে পুজো উদ্যোক্তারা প্রত্যেকেই মণ্ডপ ঘেরার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন।

তবে, এর পরেও মণ্ডপের ভিতরে দর্শকদের প্রবেশ কতখানি আটকানো সম্ভব হবে, পুষ্পাঞ্জলি ও সিঁদুর খেলা কী ভাবে পুজো উদ্যোক্তারা আটকাবেন—সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন