যান-যন্ত্রণা মুক্ত হোক শহরের পথ

সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন পুরুলিয়ার পুরপ্রধান কে পি সিংহদেও। নাগরিকদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় উঠে এসেছে। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রশান্ত পাল। রইল বাছাই কিছু প্রশ্নোত্তর।রুলিয়া শহরে জলের মূল উৎস কংসাবতী নদী। সেখানে জলপ্রকল্পের কাজ চলছে। সাহেববাঁধ একটি বিকল্প উৎস। এ বছরে চূড়ান্ত জলাভাবের সময়েও সাহেববাঁধে জল ছিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৬ ০২:২৬
Share:

রাস্তার দু’পাশে দোকানের পসরা। বাকি পথটুকু গাড়ি, রিকশা, টোটোর দখলে। হাঁটাও দুষ্কর। পুরুলিয়ায় সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।

• পুরুলিয়ায় পানীয় জলের বড় আকাল। সাহেববাঁধের জল শহরে সরবরাহ করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সেই জল তো দূষিত! পুরসভার ঠিক কী পরিকল্পনা রয়েছে?

Advertisement

আবু সুফিয়ান, ৯ নম্বর ওয়ার্ড

পুরপ্রধান: পুরুলিয়া শহরে জলের মূল উৎস কংসাবতী নদী। সেখানে জলপ্রকল্পের কাজ চলছে। সাহেববাঁধ একটি বিকল্প উৎস। এ বছরে চূড়ান্ত জলাভাবের সময়েও সাহেববাঁধে জল ছিল। তাই ওই জল আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিশোধন করে সরবরাহ করা হবে। অতীতেও সাহেববাঁধের জল পরিস্রুত করে শহরে ব্যবহৃত হয়েছে। পুরসভা ফের সেই ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজে হাত দিয়েছে।

Advertisement

• শহরের অনেক এলাকাতেই কোনও ময়লা ফেলার জায়গা নেই। বাসিন্দারা রাস্তাতেই আবর্জনা ফেলেন। সে সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে দূষণ দিন দিন বাড়ছে। চাইবাসা রোডের উপর বড় হাটে ঢোকার মুখেও প্রচুর নোংরা জমে থাকে। নিয়মিত সাফাই হয় না। বাজার করতে আসা মানুষজন নাকাল হন। যাঁরা সারাক্ষণ ব্যবসার জন্য বাজারে থাকতে বাধ্য হন তাঁদের টেকাই দায় হয়ে পড়ে। পুরসভা স্থায়ী সমাধানের জন্য কী ভাবছে?

সোমেন রায়, ১ নম্বর ওয়ার্ড

শেখ আখতার, ২২ নম্বর ওয়ার্ড

সরোজ সহিস, ২১ নম্বর ওয়ার্ড

পুরপ্রধান: শহরের সমস্ত এলাকা থেকে যে রোজ আবর্জনা সাফাই হয় তা সত্যিই জোর দিয়ে বলা যায় না। সাফাইয়ের বিষয়টি পুরসভার কাছে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহর যত বাড়ছে আবর্জনার পরিমানও বেড়ে চলেছে। প্রথম থেকে কেউ এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের চিন্তাভাবনা না করায় সমস্যা বেড়েছে। আসলে শহরে প্রতিদিন জমা হওয়া বিপুর পরিমান বর্জ্য ফেলার মতো কোনও ডাম্পিং গ্রাউন্ড নেই। এতদিন যেসমস্ত জমিতে আবর্জনা ফেলা হত তা বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। তাঁদের আপত্তিতে এখন সেখানে আবর্জনা ফেলা যাচ্ছে না। প্রশাসনের কাছে পুরসভা জমি চেয়েছে। সেই জমি পেলেই পাঁচিল দিয়ে ঘিরে নিয়ে আবর্জনা ফেলা হবে। তার আগে দু’টি কম্প্যাক্টর যন্ত্র শহরে আনা হবে। সেগুলি শহরের রাস্তা থেকে আবর্জনা তুলে তাপ দিয়ে ছোট করে নেবে। দুর্গন্ধও কমে যাবে। খুব শীঘ্রই যন্ত্রগুলি নিয়ে আসা হবে। তার পরে সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে বলে আশা করি।

• নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। সিন্দার পট্টি-সহ শহরের বেশ কিছু এলাকায় অল্প বৃষ্টিতেই নর্দমা ছাপিয়ে জল রাস্তায় চলে আসে। বস্তি এলাকা থেকেও শহরে দূষণ ছড়াচ্ছে। পুরসভার কোনও পরিকল্পনা রয়েছে?

পাপিয়া মুখোপাধ্যায়, ১০ নম্বর ওয়ার্ড

মনোজ দে, ২ নম্বর ওয়ার্ড

পুরপ্রধান: আবর্জনা ফেলার সমস্যা পুরসভা মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আবর্জনা ফেলা নিয়ে প্রাথমিক সচেতনতাটুকু না গড়ে উঠলে বেহাল নিকাশির সমস্যা মেটানো খুবই মুশকিল। অনেকেই প্লাস্টিকের বর্জ্য যথেচ্ছ নর্দমায় ফেলে দিচ্ছেন। এর ফলে নর্দমা বুজে গিয়ে রাস্তায় জল উঠছে। আর বস্তি উন্নয়নে পুরসভা কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। চলতি বছরেই সেই কাজ শুরু হবে। তার পরে ওই এলাকাগুলিতে দূষণের সমস্যার অনেকটাই মিটে যাবে বলে আশা করা যায়।

• পুরুলিয়া শহরের বেশ কিছু গলিতে রাস্তার পিচ উঠে গিয়েছে। কোথাও কোথাও গর্ত তৈরি হয়েছে। বর্ষায় জল জমছে। বিষয়টি পুরসভার নজরে রয়েছে কি?

কৌশিক সিংহ, ৫ নম্বর ওয়ার্ড

পুরপ্রধান: মূল রাস্তার পাশাপাশি গলির রাস্তাগুলির দিকেও পুরসভার নজর রয়েছে। সমস্ত রাস্তা কংক্রিটের করে দেওয়া হবে। বেশ কিছু রাস্তা ইতিমধ্যেই ঢালাই করা হয়েছে। যে রাস্তাগুলি হয়নি, সেগুলিতেও দ্রুত কাজ শুরু হবে।

• শহরের প্রাণকেন্দ্রে কোর্ট মোড়, হাটের মোড়, স্টেট ব্যাঙ্কের সামনের রাস্তা, বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলা প্রশাসনিক ভবন যাওয়ার রাস্তা-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সংস্কার করেছে পুরসভা। অনেকেই ভেবেছিলেন, এর ফলে ওই রাস্তাগুলি বেআইনি দখলদারির হাত থেকেও মুক্তি পাবে। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই রাস্তার দু’পাশ চেনা চেহারায় ফিরে গিয়েছে। সমস্যা কাটেনি। পুরসভা কি এ ক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপ করবে?

কাশীনাথ নন্দী, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড

পুরপ্রধান: এ নিয়ে পথচারীদের সমস্যার বিষয়ে পুরসভা অবগত। বেআইনি দখলদারির বিষয়ে পুরসভার দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু রাস্তার পাশ যখন বেদখল হয়ে যায়, তখন তা রোখার জন্য এলাকার মানুষজনের এগিয়ে আসা দরকার। রাস্তা দখল যাতে না হয়, সে জন্য সবার সচেতনতা এবং সহযোগিতার প্রয়োজন। পুরসভা এ বারে ঠিক করেছে, প্রথমে ঘোষণা করে রাস্তা বেআইনি দখলমুক্ত করতে আবেদন করা হবে। সেই আবেদনে কাজ না হলে বাধ্য হয়ে দখল উচ্ছেদের কথা ভাবা হবে।

• শহরের উপর চাপ দিন দিন বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানজট। পুরসভা কোনও স্থায়ী সমাধানের কথা ভাবছে কি?

উত্তরা বিশ্বাস, ২১ নম্বর ওয়ার্ড

পুরপ্রধান: যানজট শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। কিন্তু পুরসভার একার পক্ষে এর সমাধান করা সম্ভব নয়। প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হবে। প্রশাসনিক উদ্যোগে পুরসভা সব রকম সহায়তা করবে।

• শহরের কিছু রাস্তায় গাড়ি চলাচল সম্প্রতি একমুখী করে দেওয়া হয়েছিল। তাতে সুফলও মিলছিল। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই ফের আগের নিয়মে ফিরে যাওয়া হল কেন?

কাশীনাথ নন্দী, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড

পুরপ্রধান: পুলিশ এই নিয়ম চালু করেছিল। এতে পুরসভার হাত নেই। প্রশাসনকে জানানো হবে।

• আগে শহরের রাস্তাঘাট এতটা ঘিঞ্জি ছিল না। কিন্তু দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে সব কিছু বদলে গিয়েছে। এখন দ্রুতগতিতে গাড়িঘোড়া, মোটরবাইক ছুটে চলেছে রাস্তা দিয়ে। এ দিকে, রাস্তা দখল হয়ে যাওয়ায় ফুটপাথ দিয়ে হাঁটারও জো নেই। বয়স্ক মানুষজনের সমস্যার দিকটি কি পুরসভা ভেবে দেখেছে?

রাজকুমার শর্মা, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড

অচিন্ত্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়, ২১ নম্বর ওয়ার্ড

পুরপ্রধান: শহরের প্রচুর মানুষ সকালে-বিকেলে সাহেব বাঁধের ধার দিয়ে হাঁটেন। ওই রাস্তাগুলিতে গাড়িঘোড়ার চাপ বাড়ায় ফুটপাথ তৈরি করা হয়েছে। বি টি সরকার রোডেও ফুটপাথ করা হয়েছে। কিন্তু সেই ফুটপাথে অনেকে গাড়ি এবং মোটরসাইকেল রাখেন বলে অভিযোগ এসেছে। সেই দখল হঠাতে পুরসভা পদক্ষেপ করবে।

শহরজুড়ে অনেক বড় বড় উঠছে। আগে পাড়ায় পাড়়ায় ফাঁকা জায়গা ছিল। সেখানে ছোটরা খেলতে পারত। এখন খোলা জায়গা খুঁজে পাওয়া ভার। পুরসভা তো পার্ক গড়তে পারে?

শ্রেষ্ঠা নন্দী, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড

পুরপ্রধান: পার্ক গড়ে তুললে শহরের সৌন্দর্যও অনেক বাড়বে। বিষয়টি নিয়ে আগেও ভাবনা চিন্তা হয়েছে। কিন্তু জমির অভাবে কাজ এগনো যায়নি। শহরের মধ্যে জমির খোঁজ চলছে। পাওয়া গেলেই পার্ক গড়ার কাজ শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন