আগুন লাগার পরে। নিজস্ব চিত্র
আগুনে পুড়ে গেল সিউড়ি শহরের আটটি দোকান। শনিবার রাত পৌনে বারোটা নাগাদ দু্র্ঘটনাটি ঘটে জেলা সংশোধনাগারের পিছনে সীমানা প্রাচীর লাগোয়া এলাকায়। এলাকাবাসীর মত, দমকলের দুটি ইঞ্জিন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও, অবৈধ দখলদারির জেরে জেলা সদরে কী বিপদ অপেক্ষা করে রয়েছে, তার একটা আঁচ দিয়ে গেল ওই অগ্নিকাণ্ড।
দমকল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় প্রচুর অস্থায়ী দোকান রয়েছে। টুপি বেল্ট, ঘড়ি, চপ্পল, মুড়ি, বই সহ নানা দোকান থাকলেও মূলত কাপড়ের বাজার বলেই ওই অস্থায়ী মার্কেটকে চেনেন সিউড়ি শহর ও শহরে কেনাকেটার জন্য আসা মানুষজন। এখন শীতের বিপুল সম্ভার নিয়ে চলছে রমরমা কারবার। সেই বাজারেই
শনিবার রাতের বেলায় আগুন লাগে। পুড়ে গিয়েছে মহম্মদ ইরফান, শেখ সিরাজউদ্দিন, ওয়াসিম খান শেখ ভিকি সহ আট জনের কাপড়ের দোকান। অস্থায়ী চালা, চেয়ার, টুল সহ নানা জিনিস পুড়ে গেলেও জামা কাপড় সে ভাবে মজুত ছিল না বলেই জানা গিয়েছে। এই এলাকায় অধিকাংশ বিক্রেতাই রাতে বাড়ি যাওয়ার সময় দোকান থেকে জিনিসপত্র বাড়ি নিয়ে যান।
তবে কী ভাবে আগুন লেগেছে, তা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বস্ত্র বিক্রেতা মহম্মদ ইরফান, শেখ সিরাজউদ্দিন, ওয়াসিম খানরা বলছেন, ‘‘দোকানের পিছনের দিকে একটি ট্রান্সফর্মার থেকে প্রায় দিনই আগুনের ফুলকি ঝরে। সম্ভবত সেখান থেকেই আগুন লেগেছিল।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অবৈধ ভাবে শতাধিক অস্থায়ী দোকান বসে যাওয়ায় বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কার্যালয় পর্যন্ত যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটাই কার্যত চুরি হয়ে গিয়েছে। ওই রাস্তার এক দিকে জেলা সংশোধনাগারের সীমানা প্রাচীর, মীনভবন, অন্য দিকে সরকারি আবাসন। একটু এগিয়ে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কার্যালয়, উল্টো দিকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়। মূল রাস্তা এড়িয়ে জেলা প্রশাসন ভবনের দিকের আসার বিকল্প রাস্তাও বটে।
অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ হলেও এই রাস্তায় দখলদারি আটকানো বা উচ্ছেদের কোনও চেষ্টা হয়নি প্রশাসন বা পুরসভার পক্ষ থেকে। এমনকি গোটা শহরে অবৈধ দখলদারি হটাতে নানা সময় চেষ্টা হলেও এই বাজারে হাত পড়েনি কখনও। বরং নিত্যদিন কলেবরে বাড়ছে ওই বাজার। আরও অভিযোগ, রাজনৈতিক মদত রয়েছে বলেই সেই চেষ্টা হয়নি।
বিষয়টি যে উদ্বেগজনক, তা মেনেছেন আইএনটিটিইউসি-র জেলা কোর কমিটির সদস্য রাজিবুল ইসলাম। তিনি বলছেন, ‘‘ওই বাজারে অগ্নিকাণ্ড সত্যিই ভয়ের। তেমন আগুন লাগলে আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে বিপদ হবেই। বিষয়টি পুরসভা ও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তুলব।’’ সিউড়ির পুরপ্রধান
উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘পুরো বাজারটাই অবৈধ ভাবে বসেছে সেটা ঠিক। প্রশাসনের সহযোগিতায় পুজোর পর থেকেই শহর জুড়ে দখলদারি উচ্ছেদের পরিকল্পনা ছিল। একটু দেরি হলেও এ বার সেই অভিযান হবে। সেই তালিকায় ওই বাজারও রয়েছে।’’
শহরবাসীর একাংশ জানাচ্ছেন, শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় উপর যে ভাবে একের পর এক দোকান ছাউনি টানিয়ে বসে পড়েছে, তাতে বড় যানবাহন দূরের কথা ছোট চার চাকা বা একটি টোটো কিংবা রিকশা ঢুকলেই সাধারণ মানুষের আর হাঁটার উপায় থাকে না। শনিবার আগুন লাগার পরে সেই আগুন নেভাতে আসা দমকলের ইঞ্জিন ঢুকতেও প্রবল অসুবিধা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কয়েকটি দোকানের অংশ ভেঙে ঢুকতে হয়েছিল ইঞ্জিন। দমকল সূত্রেও একই তথ্য মিলেছে।