Farmers

কম দামেই ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি

খাদ্য সরবরাহ এবং সমবায় দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ডিসেম্বর মাস থেকে জেলায় সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু হয়েছে।

Advertisement

শুভদীপ পাল 

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২১ ০৬:২১
Share:

সরকারি শিবিরে এ ভাবেই অপেক্ষা করতে হয় চাষিদের। ফাইল চিত্র

সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রিতে অনীহা দেখা যাচ্ছে চাষিদের। এক প্রকার বাধ্য হয়ে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কাছে বিক্রি করছেন চাষিরা। তাঁদের একাংশের দাবি, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সরল করলে এবং প্রত্যেক অঞ্চলে ধান ক্রয় কেন্দ্র গড়ে তুলতে পারলে হয়তো চাষিদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে।

Advertisement

খাদ্য সরবরাহ এবং সমবায় দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ডিসেম্বর মাস থেকে জেলায় সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তাদের থেকে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় ধান সংগ্রহ কেন্দ্র (সিপিসি), সেকেন্ড সিপিসি এবং অ্যাডিশনাল সিপিসি মিলিয়ে জেলার ১৯টি ব্লকে ২৫টি কেন্দ্র থেকে সহায়ক মূল্যে ধান কেনা হচ্ছে। এ ছাড়া ৬০টির বেশি কৃষি সমবায় কেন্দ্র থেকে সহায়ক মূল্যে ধান কেনা চলছে। খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ধান কেনার লক্ষ্য মাত্রা রয়েছে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। তার মধ্যে ২ তারিখ পর্যন্ত ধান কেনা হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ মেট্রিকটন।

কৃষকদের ধান বিক্রিতে এই অনীহা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। কৃষকদের একাংশ দাবি করছেন যে, সীমিত পরিমান ধান বহুদূর থেকে ধান ক্রয় কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে ঝক্কি পোহাতে হয়। তাছাড়া সরকারিভাবে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে অপেক্ষা করাও মুশকিল। চাষিদের কথায়, ‘‘সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে গেলে প্রথমে ধান বিক্রয় কেন্দ্রে জমির কাগজ নিয়ে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে রেজিস্ট্রেশন করাতে হয়। তারপর কেন্দ্র থেকে তারিখ দেওয়া হয়। সেই তারিখে ধান নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে হয় চাষিদের। তারপরেও হাতে হাতে টাকা মেলেনা। অপেক্ষার পর তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা দেয় সরকার।’’

Advertisement

এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াতে হয়রানি এড়াতেই অনেকে সরকারি কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে চান না। তাঁদের আরও দাবি, এই জেলার চাষিদের একটি বড় অংশ হল ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক শ্রেণির। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের টাকার প্রয়োজনীয়তা থাকে। তাই তাঁরা ধান বিক্রি করে দ্রুত হাতে টাকা পেতে চান। কিন্তু সরকারি কেন্দ্রে ধান বিক্রি করলে টাকা পেতে বেশ কিছুটা সময় লাগে বলে চাঁরা যেতে চান না। চাষিদের আরও দাবি, সরকারি কেন্দ্রে বিক্রির সময় কুইন্টাল প্রতি ৫ থেকে ৬ কেজি ‘বাটা’ অর্থাৎ নিম্নমানের ধান বাদ দেওয়া হয়।

সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রে কুইন্টাল প্রতি ধানের দাম দেওয়া হয় ১৮৬৮ টাকা। এছাড়া ২০ টাকা করে উৎসাহ ভাতা দেওয়ার কথা। সেখানে খোলা বাজারে কুইন্টাল প্রতি ১৩০০ থেকে ১৩৬০ টাকা দর পেলেও চাষিরা এই সব ঝামেলা এড়াতে ফড়েদের মাধ্যমে ধান বিক্রয় করছেন। জেলার মাড়গ্রাম থানা এলাকার চাষী রবীন্দ্রনাথ মার্জিত, নিখিল দালাল, ডালু মণ্ডল বলছেন, ‘‘ইচ্ছে থাকলেও আমাদের উপায় থাকছে না। কারণ সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশন করানো অনেক জটিল। বেশ কয়েকবার গিয়েও রেজিষ্ট্রেশন করানো যায় না। ফলে অনেক দেরি হয়ে যায়। তাছাড়া অতদূরে নিয়ে যাওয়াও সমস্যা। ধান নিয়ে যেতেও বেশ কিছু টাকা খরচ হয়।’’ তাই অঞ্চল ভিত্তিক ধান ক্রয় কেন্দ্র থাকলে সরকারি শিবিরে বিক্রি করার ক্ষেত্রে চাষিদের ইচ্ছে বাড়বে বলে চাষিদের অনেকের দাবি।

জেলা খাদ্য নিয়ামক তরুণ মণ্ডলের সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে সংশ্লিষ্ট দফতরের এক আধিকারিক জানান, ‘‘লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী যথেষ্ট ভাল ভাবেই ধান কেনা চলছে। কোনও অভিযোগ নেই। অভিযোগ পেলে যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন