পরীক্ষার আগে। নিজস্ব চিত্র
বাবা বলেছিলেন, টোটোয় চাপিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। রবিবার সেই বাবাকে হারিয়েছে মেয়েটি। ভেঙে পড়লেও বাবার স্বপ্ন সফল করতে মঙ্গলবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল পরভীন খাতুন।
পুরুলিয়া শহরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের নয়া বস্তির বাসিন্দা পরভীনের বাবা শেখ রাজু ছিলেন পেশায় গাড়ি চালক। রঘুনাথপুরের প্রবীণ বামপন্থী নেতা প্রদ্যোৎ সেনের গাড়ি চালাতেন তিনি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় জানান, পরবর্তী কালে প্রদ্যোৎবাবু পুরুলিয়ায় চলে এলে শেখ রাজুও তাঁর সঙ্গে চলে আসেন। সেই থেকেই তিনি জেলা সিপিএম কার্যালয়ের সর্বক্ষণের কর্মী।
গত শুক্রবার শেখ রাজুকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁর ভাই শেখ হাসিম জানান, দাদার খুব কাশি হচ্ছিল। শরীরেও অস্বস্তি হচ্ছিল। রবিবার ভোরে দাদার মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর খবরে শোকে ভেঙে পড়ে রাজুর একমাত্র সন্তান পরভীন। ়
রবিবার বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হতে হতে বিকেল গড়িয়ে যায়। বাবাই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। স্বামীকে হারিয়ে সাবিনা বিবিও শোকে পাথর। পরভীন ওই অবস্থাতেও ঠিক করে, হেরে গেলে চলবে না। কাকা হাসিম বলেন, ‘‘বাড়িতে এ রকম শোকের আবহ। তবু ও বলল পরীক্ষা দেবে।’’
মঙ্গলবার প্রথম ভাষা উর্দু পরীক্ষা দেওয়ার আগে বাবার ছবিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে কেঁদে ফেলে পরভীন। মাকে সান্ত্বনা দিয়ে কাকার সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্রের পথে রওনা হয়েছে। পরীক্ষা শেষে পরভীন বলে, ‘‘পরীক্ষা ভাল হয়েছে। বাবার স্বপ্ন সফল করতে আমাকে পরীক্ষা দিতেই হবে। হাসপাতালে গেলেও হাত ধরে বলেছিল, ‘তোকে আসতে হবে না। তই পড়াশোনা করল। তোকে এমএম পাশ করতে হবে। বাবার স্বপ্ন সফল করার তাগিদ থেকেই আমি পরীক্ষায় বসেছি।’’
শহরের নেতাজি উচ্চ বিদ্যালয়ে সিট পড়েছিল পরভীনের। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুবল মণ্ডলের কথায়, ‘‘ওকে ডেকে জানতে চাইলাম, আলাদা পরীক্ষা দেবে কিনা। ও বলল, সবার সঙ্গেই পরীক্ষা দেবে। মানসিক দৃঢ়তা রয়েছে ছাত্রীটির।’’
পরভীন পুরুলিয়ার পুরপ্রধান সামিমদাদ খানের ওয়ার্ডের বাসিন্দা। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘ওর বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়েছি। ওই অবস্থায় পরীক্ষা দিয়েছে। ওর মনের জোরের প্রশংসা না করে পারছি না। ওর লেখাপড়ার জন্য সব রকম সহযোগিতা আমরা করব।’’ পরভীনের পড়াশোনায় সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রদীপবাবুও।
আজ, বুধবার বাবার পারলৌকিক কাজ। পরের দিনই ইংরেজি পরীক্ষা। কিন্তু, পরভীনের লক্ষস্থির। এমএ পাশ তাকে করতেই হবে!