মিলন: পরস্পরকে আলিঙ্গন করছেন প্রবীণরা। —নিজস্ব চিত্র।
কেউ হিন্দু, কেউ বা মুসলিম। পরস্পরকে বুকে জড়িয়ে জানালেন বিজয়ার শুভেচ্ছা। কেউ বা জানালেন মহরমের সম্ভাষণ। এ দিন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই মেলবন্ধনটি দেখা গেল কীর্ণাহারের স্নেহলতা পাবলিক স্কুলে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ৫ বছর ধরে এলাকার প্রবীণ-প্রবীণাদের নিয়ে ওই স্কুলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয় বিশ্ব প্রবীণ দিবস। এ বার বিজয়া এবং মহরম একই দিনে পড়েছে। তাই এ দিন ওই সম্প্রীতির অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন উভয় সম্প্রদায়ের শতাধিক প্রবীণ প্রবীণা।
সেই অনুষ্ঠানেই গড়ে ওঠে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতাবরণ। সরডাঙ্গার ৬৮ বছরের কামালউদ্দিন সেখ, কীর্ণাহার পূর্বপট্টির ৬৫ বছরের সুকুল সেখদের বুকে জড়িয়ে ধরলেন ভাটরার ৭২ বছরের ত্রিলোচন পাল, জামনার ৬৭ বছরের মানিক মুখোপাধ্যায়রা। একে অন্যকে জানালেন বিজয়ার শুভেচ্ছা আর মহরমের শুভ কামনা। হাতে হাত রেখে নষ্টালজিক হয়ে পড়লেন তাঁরা।
নুরুল হোদা, সুকুল সেখরা বললেন, ‘‘ছোটবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে পুজো মণ্ডপে ঘুরেছি। বিজয়ায় মিষ্টিও খেয়েছি। মনে হল ছেলেবেলার সেই দিনটাকেই আবার ফিরে পেলাম।’’ একই অভিব্যক্তি প্রফুল্ল দাস বৈরাগ্য, অঞ্জলি মণ্ডলদেরও। তাঁরা জানান, তাঁরাও ছোটবেলায় মহরমের তাজিয়ার পিছনে পিছনে ঘুরে লাঠিখেলা দেখেছেন।
ছেলেবেলা ধরা পড়ল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও। সম্ভাষণ শেষে কেউ করলেন গান, কেউ বা করলেন স্বরচিত কবিতা পাঠ। সবশেষে পাশাপাশি বসে নাড়ু মিষ্টি খেতে খেতে স্মৃতি চারণায় মেতে উঠলেন পার্বতী রায়, গণপতি ঘোষ, আবু লায়েশ মহীউদ্দিন, সুকুমার দাস, অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়রা। তাঁরা জানান, এই ভাবে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে তাঁদের সেই স্কুল জীবনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। স্কুলে কোনও অনুষ্ঠান থাকলে যেমন মনের মধ্যে একটা উত্তেজনা থাকত, প্রতিবছর এই অনুষ্ঠানের জন্য সেই রকমই উত্তেজনা অনুভব করছেন।
আয়োজক সংস্থার কর্ণধার মিঠু পাল বলেন, ‘‘অন্যান্য বার দিনটি সাধারণত বিশ্ব প্রবীণ দিবস হিসাবে পালিত হয়। কিন্তু এবারে প্রবীণ দিবসেই বিজয়া এবং মহরমেরও অনুষ্ঠান। তাই প্রবীণ দিবসকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দিন হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’’