নিজের চোখে: পুরুষ মেডিসিন বিভাগ পরিদর্শনে উমাশঙ্কর এস। শনিবার দুপুরে। ছবি: শুভ্র মিত্র
তিনি আগেও বিভিন্ন হাসপাতালে হঠাৎ হাজির হয়েছেন। শহরে আসছেন শুনে অনেকেই আঁচ করেছিলেন, কিছু একটা ঘটতে পারে। সেই মতো সাজ সাজ রবও পড়েছিল। শনিবার দুপুরে বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস যখন বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সিঁড়ি দিয়ে উঠছেন, তখনও চলছে ঝাঁট দেওয়া। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। দিনের শেষে গ্রেফতার হয়েছেন এক অস্থায়ী সাফাইকর্মী। এক চিকিৎসককে শোকজ করার নির্দেশ হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে চার অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার এবং খোদ সুপারের। তালিকা আরও দীর্ঘ।
শনিবার শহরের একটি বিএড কলেজে সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে যোগ দিতে এসেছিলেন ডিএম। তার পরে বিষ্ণুপুর পর্যটন মেলা নিয়ে একটি বৈঠকও করেন মহকুমাশাসকের অফিসে। সেখান থেকে মহকুমাশাসক মানস মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে সটান হাজির হন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। ঘড়ির কাঁটায় তখন ৩টে। হাসপাতালে ঢুকেই ডিএম জানতে চান, অ্যালাইজা টেস্টের যন্ত্র রয়েছে কি না? সিএমওএইচ রমেন্দ্রনাথ প্রামাণিক জানান, ২০১৫ সাল থেকে এসে পড়ে রয়েছে। কেন? প্রশিক্ষিত কর্মী নেই। ডিএম বলেন, ‘‘সাত দিন তো লাগে প্রশিক্ষণ দিতে। দ্রুত সেটা করুন।’’
এর পরেই তিনি যান দোতলায়। পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে। ঢুকতে গিয়েই বাধা! এক সাফাই কর্মীর বলেন, ‘‘স্যর আর আসতে হবে না, এখানে সব ঠিকঠাক চলছে।’’ এ দিকে সেই কর্মীর নিজের মুখ থেকই মদের গন্ধ ভেসে আসছে। ডিএমের নির্দেশে মহকুমাশাসকের দেহরক্ষীরা রাহুল সরকার নামে ওই অস্থায়ী সাফাইকর্মীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাকে গ্রেফতার করা হয়। রুজু হয় গোলমাল পাকানোর মামলা।
পুরুষ মেডিসিন বিভাগের মেঝেতে রোগীরা শুয়েছিলেন। করিডরেই ছোট বেডের ব্যবস্থা করতে বলেন ডিএম। ওয়ার্ডের রোগীদের জিজ্ঞাসা করেন, রক্ত পরীক্ষা হাসপাতালেই হচ্ছে কি না? তাঁরা জানান, হচ্ছে। ওষুধ কোথা থেকে কিনতে হচ্ছে? এক দিনমজুর মহিলা জেলাশাসককে জানান, তাঁকে শনিবারই ৩১০ টাকার ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। ডিএম প্রেসক্রিপশন চেয়ে দেখেন। সিএমওএইচকে নির্দেশ দেন, ওই ডাক্তারকে শোকজ করার জন্য। জানান, বাঁকুড়ায় তদন্ত কমিশনের সামনে হাজির হতে হবে তাঁকে। সিএমওএইচকে বলেন ওষুধের দাম বাবদ টাকা মহিলাকে দিয়ে দিতে।
পরবর্তী গন্তব্য ব্লাড ব্যাঙ্ক। জেলা হাসপাতাল আর সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতালের মাঝে। ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে কাঁচা নালায় দেখেন, বদ্ধ নোংরা জল। হাসপাতাল চত্বরে আবর্জনা নিয়ে অভিযোগ ওঠে প্রায়ই। এ দিন ডিএম নিজের চোখেই অবস্থাটা দেখতে পান। চার অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার এবং সুপারকে ১ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন তিনি।
ব্লাড ব্যাঙ্কে ঢুকে ডিএম দেখেন, শুধু একজন মেডিক্যাল অফিসার রয়েছেন। কোনও কর্মী নেই। ল্যাব টেকনিশিয়ানও নেই। এ দিকে, তখন বাজে ৪টে। ডিএম রোস্টার দেখতে চান। নানা প্রশ্ন করেন মেডিক্যাল অফিসার রামপ্রসাদ মণ্ডলকে। কিন্তু উত্তর পাননি।
ক্ষুব্ধ ডিএম সিএমওএইচ-এর সঙ্গে রোস্টার নিয়ে বসেন। বিস্তর অসঙ্গতি দেখতে পান। মহকুমাশাসককে রোস্টার রাখতে নির্দেশ দেন। জানান, গত এক মাসে ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা কে কী কাজ করেছেন সেটা এসডিওকে বিশদে বলে আসতে হবে। না হলে ৩ মাসের মাইনে কাটা হবে।
বেরনোর সময়ে সিএমওএইচের কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করেন জেলাশাসক। বলেন, ‘‘এ ভাবে হাসপাতাল চলতে পারে না। দ্রুত ব্যবস্থা নিন।’’
দিনের শেষে সিএমওএইচ বলেন, ‘‘মোট ৩০০টা বেড। ভর্তি আছেন ৫০০ জন। কর্মচারী নেই। সমস্যাগুলো সামলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করব।’’