২৩ বছর আগের জোড়া খুনে  কারাদণ্ড

কী ঘটেছিল সে দিন?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:০২
Share:

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বাদল ঘোষ ও সৃষ্টিধর ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

তেইশ বছর আগের একটি জোড়া খুনের ঘটনায় দু’জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল। শনিবার বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক (১) মনোজ্যোতি ভট্টাচার্যের এজলাসে এই রায়দান হয়।

Advertisement

সরকার পক্ষের আইনজীবী অরুণ চট্টোপাধ্যায় জানান, ১৯৯৭ সালের ৯ ডিসেম্বর ইন্দাস থানার ভূরবাঁদি গ্রামে একটি সংঘর্ষে খুন হন স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল দিগর (৫০) ও অভিরাম ধাঁড়া (৩০)। ওই ঘটনায় দুই মূল অভিযুক্ত বাদল ঘোষ ও সৃষ্টিধর ঘোষকে দোষী সাব্যস্ত করে এ দিন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কী ঘটেছিল সে দিন?

Advertisement

অরুণবাবু জানান, নিহতের এলাকায় বিজেপি কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। খুনে অভিযুক্তেরা সিপিএম করতেন। ভূরবাঁদি গ্রামের তৎকালীন বিজেপি নেতা বাসুদেব দিগরের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিবাদ ছিল বাদল ও সৃষ্টিধরদের। বাসুদেববাবুর একটি মামলার প্রেক্ষিতে ওই জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করেছিলেন বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক। বাসুদেববাবুকে মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল বাদল, সৃষ্টিধর-সহ কয়েকজন। কিন্তু বাসুদেববাবু মামলা তোলেননি। ৯ ডিসেম্বর এ নিয়ে বিবাদ চরম পর্যায়ে ওঠে। ওই দিন বিকেলে আসামীরা দল বেঁধে অস্ত্র নিয়ে বাসুদেবের পাড়ায় হামলা চালায়। সেই সময় গোপালবাবু প্রথমে প্রতিবাদ করতে এগিয়ে গেলে তাঁকে মারধর করা হয়। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে মারধর খান অভিরামবাবু। পরে তাঁকে বাদলের বাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে ফের মারধর করা হয়।

হামলাকারীদের নজর এড়িয়ে বাসুদেববাবু কোনও রকমে ইন্দাস থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। স্থানীয় বাসিন্দারাই জখম অবস্থায় গোপালবাবুকে তুলে নিয়ে গিয়ে ইন্দাস ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করেন। পুলিশ অভিরামকে উদ্ধার করে ইন্দাস ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে

নিয়ে যায়। অভিরামবাবু সংজ্ঞাহীন ছিলেন। গোপালবাবুর জবানবন্দি নেয় পুলিশ। তারপর দু’জনকেই বর্ধমান মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ওই রাতেই মৃত্যু হয় অভিরামবাবুর। গোপালবাবু মারা যান দু’দিন পরে। অরুণবাবু জানান, ঘটনার তিন বছর পরে ২০১০ সালের ১২ মার্চ এই মামলার চার্জশিট বিষ্ণুপুর আদালতে জমা করে পুলিশ। ততদিনে অভিযুক্তেরা জামিনে মুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন।

মামলাটি ২০০৭ সালে বাঁকুড়া আদালতে বিচারের জন্য আসে। ২০১০ সাল থেকে মামলাটির শুনানি শুরু হয়। অভিযোগকারী বাসুদেববাবু বাদল ও সৃষ্টধর-সহ ২৬ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। অভিযুক্তদের কেউ কেউ মারা গিয়েছেন। যোগ্য প্রমাণের অভাবে অনেকে ছাড়া পেয়ে যান। তবে বাদল ও সৃষ্টিধরের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত হয়েছে। অরুণবাবু বলেন, “বিচারক খুনের দায়ে দু’জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছ’মাস জেলের নির্দেশ দিয়েছেন।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র বলেন, “গ্রাম্য বিবাদকে কেন্দ্র করেই ওই ঘটনাটি ঘটেছিল। সেটিকে রাজনৈতিক রং দেওয়া হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন