গোলমালের শঙ্কা, চিহ্নিত হাজার জন

বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ১১:২৩
Share:

ভোটের আগে শান্তি-শৃঙখলা বজায় রাখতে গোলমাল পাকাতে পারেন এমন অভিযোগ তুলে বাঁকুড়া জেলার কয়েক হাজার ব্যক্তিকে চিহ্নিত করল জেলা পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় নোটিসও পাঠানো হল। অভিযুক্তদের মধ্যে একটা বড় অংশই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা যাচ্ছে। অভিযুক্তদের হাজিরা দিতে হচ্ছে মহকুমাশাসকের দফতরে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ভবিষ্যতে তাঁরা কোনও গোলমাল করবেন না বলে মুচলেকা দিতে হচ্ছে (বন্ড)।

Advertisement

বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কারও বিরুদ্ধে অতীতে কোনও গোলমালে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলে কিংবা কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে গণ্ডগোল পাকানোর সন্দেহ থাকলে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১০৭, ১০৯ ও ১১০ ধারায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নোটিস পাঠানো হয়। সাধারণত নির্বাচনের আগে এই বিষয়ে বাড়তি জোর গেওয়া হয়।

Advertisement

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মার্চ মাসে এখনও পর্যন্ত বাঁকুড়া মহকুমায় ৫৪৩ জন, বিষ্ণুপুর মহকুমায় ৪৪২ জন ও খাতড়া মহকুমায় ৪১০ জন ১০৭ ধারায় গোলমাল করবেন না বলে মুচলেকা দিয়েছেন। এ ছাড়া ১০৯ ধারায় বাঁকুড়া মহকুমায় মুচলেকা দিয়েছেন ২২ জন, বিষ্ণুপুর ও খাতড়া মহকুমায় ওই সংখ্যা যথাক্রমে ২৬ ও ৮ জন। এছাড়া ১১০ ধারায় বাঁকুড়া মহকুমায় ৩ জন ও বিষ্ণুপুরে ২ জন ব্যক্তি মুচলেকা দেন। জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, “ফৌজদারি মামলায় নোটিস পাঠানোর প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে।”

বিরোধীদের অভিযোগ, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাঁকুড়া জেলায় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বাধায় বিষ্ণুপুর মহকুমায় পুরোপুরি ও বাঁকুড়া মহকুমার কিছু এলাকায় মনোনয়ন জমা করতে পারেননি বিরোধীরা। মনোনয়ন আটকাতে প্রশাসনিক অফিসের সামনেও তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ ওঠে। রানিবাঁধে খুন হন এক বিজেপি কর্মী। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য মনোনয়নে বাধা দেওয়ার অভিযোগ মানতে চাননি।

লোকসভা ভোট নিয়ে অবশ্য কোনও রকম ঝুঁকি নিতে নারাজ প্রশাসন। পুলিশ সক্রিয় হয়েছে বলে দাবি করলেও তা নিয়ে সংশয়ী বিরোধী দলগুলি। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতির অভিযোগ, “অনেক ক্ষেত্রেই দেখছি সিভিক ভলেন্টিয়ারদের দিয়ে আমাদের কিছু নিরীহ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করিয়ে ১০৭ ধারা দেওয়া হচ্ছে। তাই পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।’’ বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্রের দাবি, “তৃণমূলের যে মুখগুলি পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাস চালিয়েছিল, পুলিশ তাদের চেনে। তাদের বিরুদ্ধে ১০৭ ধারা আরোপ করা হয়েছে কি না, কমিশনের কাছে জানতে চাইব।” যদিও জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন, “পুলিশ তো আমাদের দলেরও কিছু কর্মীকে ১০৭ ধারায় নোটিস ধরিয়েছে। আমরা গণতন্ত্র মেনে চলি। পুলিশের নোটিস পেয়ে সহযোগিতাই করা হচ্ছে।’’ পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ খারিজ করে পুলিশ সুপার অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘নিয়ম মেনেই সব করা হচ্ছে।’’

এ দিকে ভোট ঘোষণার পর থেকেই জেলায় বিস্ফোরক ও বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে প্রচুর। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত ডিসেম্বর মাস থেকে জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ২৪টি। যার মধ্যে ১৬টি আগ্নেয়াস্ত্র ভোট ঘোষণা হওয়ার পরে উদ্ধার হয়েছে। বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন ১৮ জন। জেলায় বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে প্রায় ২৭ টন। পুলিশ জানিয়েছে, বেআইনি অস্ত্র ও বিস্ফোরকের বিরুদ্ধে অভিযান চলবেই।

পুলিশের এই সক্রিয়তা দেখে সাধারণ মানুষের বক্তব্য, ‘‘এমন সক্রিয়তা বছরভর কেন দেখি না! তাহলে অনেক অপরাধ কমে যেত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন