বিষ্ণুপুর স্টেশনে হামলা ও স্টেশন ম্যানেজার-সহ রেলকর্মীদের মারধরের ঘটনার দু’দিন পরেও কোনও এফআইআর করল না রেল কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার বিষ্ণুপুর স্টেশনে আদ্রা রেল ডিভিশনের কয়েক জন আধিকারিক এসে স্টেশন ম্যানেজার-সহ আক্রান্ত কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন। আদ্রা বিভাগের সিনিয়র ডিসিএম ভাস্কর বলেন, “বিভাগীয় তদন্ত চলছে। এখনও এফআইআর করার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।”
এ দিকে বুধবার রাতের ওই হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদ্রা শাখার বিভিন্ন স্টেশন ম্যানেজারদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
বুধবার রাতে বিষ্ণুপুর স্টেশন সংলগ্ন রেলগেটের কাছে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় সুশান্ত মণ্ডল (৪২) নামের এক সিগন্যালম্যানের। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়। উত্তেজিত জনতা পাথর ছুঁড়তে ছুঁড়তে স্টেশনে এসে তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ। তাদের ভয়ে অফিস থেকে পালিয়ে স্টেশনের অন্ধকারে লুকিয়ে প্রাণে বাঁচেন স্টেশন ম্যানেজার-সহ রেলকর্মীরা। খবর পেয়ে স্টেশনে পুলিশ এলে তাণ্ডবকারীরা পালিয়ে যায়। এরপরেও অবশ্য রেহাই পাননি রেলকর্মীরা। বাঁকুড়ার বিভিন্ন রেলগেটের জনা কুড়ি সিগন্যালম্যান স্টেশনে এসে বিষ্ণুপুরের স্টেশন ম্যানেজার অঞ্জনকুমার মণ্ডল-সহ দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার রাজু সাউ ও অর্জুন অধিকারীকে মারধর করে বলে অভিযোগ। প্রায় দেড় ঘণ্টা বিষ্ণুপুর স্টেশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।
এ দিন অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিষ্ণুপুরের স্টেশন ম্যানেজার অঞ্জনবাবু। তিনি শুধু বলেন, “বিভাগীয় তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে আমি আর কোনও মন্তব্য করতে চাই না।” তবে স্টেশন ম্যানেজারের উপর এই হামলার ঘটনার জেরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে আদ্রা শাখার বিভিন্ন স্টেশন ম্যানেজারদের মধ্যেই। অনেকেই বলছেন, “স্টেশন ম্যানেজারদের নিরাপত্তা বলে কিছু যে নেই, তা এই ঘটনায় প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।’’ এক স্টেশন ম্যানেজারের কথায়, “রেলের যে কোনও ঘটনাতেই যাত্রীদের ক্ষোভ গিয়ে আছড়ে পড়ে আমাদের উপর। আমাদেরই ঘেরাও করে বিক্ষোভ করা হয় আবার আমাদেরই কর্তাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। কর্তৃপক্ষের এ বার স্টেশন ম্যানেজারদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।”
সূত্রের খবর, বিষ্ণুপুরের ঘটনাটিকে সামনে রেখে এ বার নিজেদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জোরাল করতে একজোট হওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্টেশন ম্যানেজাররা। আজ শনিবার এ নিয়ে বিভিন্ন স্টেশনের ম্যানেজাররা বিষ্ণুপুর স্টেশনে এই সংক্রান্ত একটি বৈঠক করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উপর চাপ তৈরি করতে স্টেশন ম্যানেজারদের সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার ব্যাপারে ভাবছেন তাঁদের অনেকেই।