জলের দরে ইলিশ, পাতে ব্রাত্য মাংস

মরসুমের গোড়ায় বাজারে ইলিশ এলেও দাম কেজিতে হাজার টাকার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করেছে। ফলে মধ্যবিত্তের নাগালে কবে দাম নামে, সে জন্য অনেকে অপেক্ষার দিন গুনছিলেন। বর্ষা ছন্দে ফিরতেই ইলিশের আমদানি বেড়ে গিয়েছে। তরতর করে নেমে গিয়েছে দামও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:০০
Share:

ছুটির-দিনে: বাঁকুড়ার চকবাজারে কেনাকাটা। নিজস্ব চিত্র

দরের তেজে অনেকে এত দিন ‘নেব নেব’ করেও শেষ পর্যন্ত নিতেন না। কিন্তু এ বার সাধ্যের মধ্যে পেয়ে পেটপুরেই ইলিশের স্বাদ নিচ্ছেন বাঁকুড়াবাসী। দিন কয়েক হয়েছে বাজারে দাম পড়েছে, আর তাতেই মধ্যবিত্তের রবিবারের পাত থেকে মাংসকে সরিয়ে মধ্যমণি হয়ে বসেছে ইলিশই। বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে ছুটির দিনে ইলিশ কেনার হুড়োহুড়ি চোখে পড়ল।

Advertisement

মরসুমের গোড়ায় বাজারে ইলিশ এলেও দাম কেজিতে হাজার টাকার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করেছে। ফলে মধ্যবিত্তের নাগালে কবে দাম নামে, সে জন্য অনেকে অপেক্ষার দিন গুনছিলেন। বর্ষা ছন্দে ফিরতেই ইলিশের আমদানি বেড়ে গিয়েছে। তরতর করে নেমে গিয়েছে দামও।

বাজার ঘুরে ঘুরে রূপালি শস্য হাতে নিয়ে পরখ করে গৃহস্থ মনের সুখে কিনছেন। বাঁকুড়ার চকবাজারে এ দিন ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে। ৯০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের ইলিশ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তার চেয়েও বড় মাপের ইলিশ এক হাজার বা বারোশো টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।

Advertisement

বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, দিন সাতেক আগেও ইলিশের দাম দ্বিগুণ যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দর পড়েছে। আর তাতেই ইলিশ কিনতে হুটোপুটি ক্রেতাদের মধ্যে। ভিড়ের ঠেলা সামলাতে হিমসিম অবস্থা বিক্রেতাদের। অন্য দিকে, মাংস বিক্রেতাদের কার্যত মাছি তাড়ানোর অবস্থা ছিল।

বাজারে আসা লোকজন রসিকতা করে বলছেন, ‘‘পুজোর মাসে জামা-কাপড়ের দোকানের থেকেও বেশি ভিড় দেখছি ইলিশ কিনতে।’’ হবে নাই বা কেন? বাঁকুড়ার জুনবেদিয়ার বাসিন্দা জহরকুমার কুণ্ডু বলেন, ‘‘ইলিশের দাম তো কমছিলই না। তাও লোভে পড়ে মাঝে মধ্যে অল্প কিনে নিতে যেতাম। দুধের স্বাদ কি ঘোলে মেটে! তবে এখন দাম কমতে জমিয়ে ইলিশ খাওয়া শুরু করেছি।’’

বাঁকুড়া শহরের ক্রেতারাই শুধু নয়, কম দামে ভালো ইলিশ কিনতে শহর লাগোয়া গ্রামগুলি থেকেও এখানে ছুটে আসছেন খাদ্য রসিকেরা। বাঁকুড়ার পোয়াবাগানের বাসিন্দা বিশ্বরূপ কর্মকার বলেন, ‘‘গ্রামের বাজারে পছন্দসই ইলিশ পাচ্ছি না। তাই রবিবারের স্পেশাল বাজার করতে বাঁকুড়া শহরেই ছুটে এলাম ইলিশের টানে।’’ কাটজুড়িডাঙার বাসিন্দা অনুপ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘রবিবারের দিনটা মাংসের জন্যই বরাদ্দ থাকে। তবে বাড়ির সকলের ইচ্ছে হয়েছে ইলিশ খাবার। দামও কমেছে। এই সুযোগ ছাড়া যায় নাকি।’’

দাম কমতেই এই ক’দিনে ইলিশের বিক্রিও বেড়ে গিয়েছে কয়েক গুণ। বাঁকুড়ার চকবাজারের মাছ ব্যবসায়ী শ্যামসুন্দর ধীবর বলেন, ‘‘দৈনিক ৫০ কেজি ইলিশ বিক্রি করতে নাভিশ্বাস উঠত। আর এখন তিন কুইন্টাল করে ইলিশ বেরিয়ে যাচ্ছে। ক্রেতাদের সামলাতে হিমসিম দশা।’’ একই কথা চকবাজারের মাছ ব্যবসায়ী মানা ধীবর, বাসুদেব ধীবরদেরও।

ইলিশের চাহিদা একই রকম বেড়ে গিয়েছে জেলার আরেক পুরশহর বিষ্ণুপুরের বাজারেও। বিষ্ণুপুরের চকবাজারের মাছ বিক্রেতা সুভাষ কোটাল, গোপাল ধীবররা জানাচ্ছেন, ইলিশের দাম বেশি থাকায় কিছু দিন আগেও বাজারে কাতলার চাহিদা ছিল তুঙ্গে। এখন ইলিশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাতলার দামও পড়েছে। বিষ্ণুপুরের বধূ নির্মলা রক্ষিত নিজেই এ দিন চকবাজারে এসেছিলেন পছন্দসই ইলিশ কিনতে। তিনি বলেন, ‘‘ইলিশ মাছের দাম কমেছে শুনে অন্যের উপরে ভরসা না করে নিজেই বাজারে এসেছি বেছে মাছ কিনব বলে। জলের দরে ইলিশ তো আর রোজ মেলে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন