খয়রাশোলের ব্লক সভাপতি দীপক ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
আততায়ীর গুলিতে খয়রাশোলে ব্লক তৃণমূল সভাপতি দীপক ঘোষের মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবার ও অনুগামীদের একাংশ ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন খয়রাশোলের একটি থানার ওসি-র বিরুদ্ধে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সোমবার দুপুরে নেতার মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সরানো হল কাঁকরতলা থানার ওসি পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়কে। তাঁকে আপাতত ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে খবর।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পার্থসারথিবাবুর পরিবর্তে দায়িত্বে এসেছেন পার্থ ঘোষ নামে ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার এক আধিকারিক। যিনি আগে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে (ডিইবি) ছিলেন। রবিবার দুপুরে দুষ্কতীদের হামলার শিকার হন দীপকবাবু। এখনও অবধি পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি নিহতের পরিবারের তরফে। অথচ দীপক-খুনের জেরে পরিবার ও অনুগামীদের ক্ষোভেই ওসি-কে সরানো হল বলে মনে করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বীরভূমের পুলিশ সুপার কুণাল আগরওয়ালের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। যদিও তৃণমূলের অন্দরের খবর, দীপকবাবু খুনের ঘটনায় জেলার শীর্ষ নেতৃত্ব চিন্তিত ছিলেন। তাঁরাই জেলা পুলিশের কর্তাদের সেটা জানান। আপাতত ক্ষোভ প্রশমন করতেই পুলিশের ওই সিদ্ধান্ত। জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর বক্তব্যেও সেই ইঙ্গিত মিলেছে। তিনি বলেছেন, ‘‘এটা পুরোপুরি জেলা পুলিশের সিদ্ধান্ত। প্রশাসনের উপরে আমাদের ভরসা রয়েছে। তবে, এটাও ঠিক দীপকের মৃত্যুর পরে ওই পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে একটা ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল।’’
নিহত ব্লক সভাপতি দীপকবাবুর সঙ্গে কাঁকরতলা থানার সদ্য প্রাক্তন ওসি পার্থসারথিবাবুর সম্পর্ক মসৃণ ছিল না। তৃণমূল সূত্রের খবর, দু’জনের সংঘাত চলছে অনেক আগে থেকেই। তা আরও বাড়ে দীপকবাবুর বিরোধী গোষ্ঠী বলে পরিচিত উজ্জ্বল হক কাদেরীকে ব্লকের কার্যকরী সভাপতি করে দেওয়ার পর। দীপকবাবুর অনুগামীদের একাংশের দাবি, বিরোধী শিবিরকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেছিলেন ওসি।
এমনই অবস্থায় গত ২৮ জুলাই বাবুইজোড়ে একটি প্রকাশ্য সভায় দীপকবাবু হুঁশিয়ারি দেন, ‘নিরপেক্ষ’ না হলে ওসি-র ‘উর্দি খুলে নেব’! সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে সেদিন কাঁকরতলার ওসির উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন— ‘‘আমার ছেলেরা আপনার থানায় গিয়ে বঞ্চিত হলে আপনার কোট-প্যান্ট আমি খুলে নেব। যদি আমার এলাকায় আর কোনও বডি (খুন) পড়ে তা হলে আপনার চাকরিই আমি খেয়ে নেব!’’ প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘পুলিশের উর্দি খুলে নেওয়ার কথা বলা অন্যায়। তবে ওখানকার ওসি-র ভূমিকাও ঠিক নয়।’’
প্রয়াত দীপকবাবুর পরিজন ও অনুগামীদের তরফে ওসি-র বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলা হয়েছে মৌখিক ভাবে। সোমবার দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে দাঁড়িয়ে দীপকবাবুর ভাইপো বিশ্বজিৎ দাবি করেন, কাঁকরতলার থানার ওসি এলাকায় অশান্তির জন্য দায়ী। তিনি বলেন, ‘‘ওই ওসিকে দ্রুত অপসারণের জন্য পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।’’ দীপক-অনুগামীদের তরফেও জেলার সভাধিপতি এবং দুবরাজপুরের বিধায়ক নরেশ বাউড়িকে ওসি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়। সোমবার রাতে ওসি-কে সরানোর পরে বিশ্বজিতের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আগে সরালে এমন হত না।’’
ঘটনাক্রম নিয়ে মুখ খুলতে চাননি ওসি পার্থসারথিবাবু। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করেছেন, শাসকদলের এক জন নেতা কোন শিবিরের, সেটা চেয়ারে বসে দেখা ঠিক নয়। অন্যায় করলে শিবির না দেখে আইনগত পদক্ষেপ করাই উচিত। সেটাই তিনি করেছেন।