পঞ্চায়েতের সঞ্চালক নিয়োগ ঘিরে ফের সাঁইথিয়ায় প্রকাশ্যে তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’। স্থানীয় সূত্রে খবর, দু’পক্ষের বিবাদের জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে গিয়েছে সঞ্চালক নির্বাচনের কাজ। এর ফলে উন্নয়নমূলক কাজও থমকে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাঁইথিয়ার মাঠপলশা পঞ্চায়েতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় দলের জেলা কমিটির সদস্য সাধন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ব্লক সভাপতি সাবের আলি খানের ‘বিবাদ’ দীর্ঘদিনের। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে প্রার্থীপদ নিয়ে তা চরমে ওঠে। জেলা কমিটির রফাসূত্র মেনে ১৬টি আসনের মধ্যে দু’পক্ষ সমান সংখ্যক আসনে প্রার্থী দেয়। বিরোধী শিবির কোনও প্রার্থী দিতে না পারায় ওই এলাকায় অবশ্য ভোটই হয়নি। নির্বাচনের পরে জেলা কমিটির নির্দেশে ব্লক সভাপতির অনুগামী হিসেবে পরিচিত অভিজিৎ সাহাকে প্রধান এবং সাধনবাবুর অনুগামী হিসাবে পরিচিত মহম্মদ ইউনুসকে নিয়ে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠিত হয়। কিন্তু গণ্ডগোল বাধে উপসমিতির সঞ্চালক নির্বাচন নিয়ে।
নিয়ম অনুযায়ী জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতির মতোই পঞ্চায়েতেও নারী ও শিশু, কৃষি, জনস্বাস্থ্য এবং শিল্প ও পরিকাঠামো বিষয়ক চারটি উপসমিতি গঠিত হয়। জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষের মতো পঞ্চায়েতের উপসমিতিতেও এক জন করে সঞ্চালক নির্বাচন করা হয়। প্রধান, উপপ্রধান এবং দু’জন করে সদস্য নিয়ে ওই উপসমিতি গঠন করার নিয়ম। দু’জন সদস্যের মধ্যে যে কোনও এক জন সঞ্চালক নির্বাচিত হন। সেই অনুযায়ী ইতিপূর্বেই উভয় পক্ষের ১ জন করে সদস্য নিয়ে চারটি উপসমিতি গঠন করা হয়। কিন্তু দুই পক্ষের বিরোধে সঞ্চালক নির্বাচন থমকে যায়। দলের অন্দরমহলের খবর, বুধবার ছিল সঞ্চালক নির্বাচনের দিন। সেই অনুযায়ী ব্লক প্রতিনিধি হিসেবে পঞ্চায়েতে পৌঁছন মৃত্যুঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। কিন্তু সঞ্চালক হিসেবে প্রধানের কাছে পৌঁছয় ব্লক সভাপতি মনোনীত ৪ সদস্যের নাম। তাঁদেরই সঞ্চালক হিসেবে নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। তার জেরে উপ-প্রধান সহ সাধনবাবুর অনুগামী সদস্যরা পঞ্চায়েত ছেড়ে চলে যান। থমকে যায় সঞ্চালক নির্বাচনের কাজ।
এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক কাজ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও উন্নয়নমূলক কাজের প্রস্তাব উপসমিতি গ্রহণ করে। তা পঞ্চায়েতের সাধারণ সভায় অনুমোদনের পরে রূপায়িত হয়। সঞ্চালক নির্বাচন আটকে যাওয়ায় সেই প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ।
ব্লক সভাপতি সাবের আলি খান অবশ্য বলেছেন, ‘‘সঞ্চালক নির্বাচনের বিষয়টি ব্লক সভাপতির এক্তিয়ারভুক্ত বলেই আমি মনে করি। সে জন্যই পঞ্চায়েত সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে ৪ জনের নাম পাঠিয়েছিলাম।’’ অন্য দিকে সাধনবাবু জানিয়েছেন, ‘‘রফাসূত্র মেনে উপপ্রধানের সুপারিশ মতো দু’জন সঞ্চালক নির্বাচিত হওয়ার কথা। তা স্বত্ত্বেও কেন এমন হল বলতে পারব না।’’ সাঁইথিয়ার বিডিও সোমনাথ দে জানান, উপসমিতির সমস্ত সদস্য উপস্থিত না থাকায় সঞ্চালক নির্বাচন করা যায়নি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নির্দেশমতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।