পড়ানোয় ফাঁকি, স্কুলে পড়ল তালা

পরে খবর পেয়ে স্কুলে পুলিশ আসে। দুপুরে আসেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) দফতরের অধিকারিকেরা। তাঁদেরও ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়তে হয়। পরে তাঁদের কাছে গ্রামবাসী স্কুলে পড়ানোর মানের উন্নতি করা-সহ ১৫টি দাবি জানান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আড়শা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৭ ০৬:২০
Share:

অপেক্ষায়: বিক্ষোভে সকাল থেকে বন্ধ পড়াশোনা। রাতে ছাড়া পেলেন শিক্ষকেরা। আড়শায়। নিজস্ব চিত্র

শিক্ষকদের পড়ানোর মান ও স্কুলের পরিকাঠামো নিয়ে অভিযোগ তুলে শিক্ষা বাঁচাও কমিটি গড়ে আন্দোলনে নামলেন আড়শা এলাকার বাসিন্দারা। সোমবার দিনভর স্কুলের দরজায় তালা ঝুলিয়ে শিক্ষকদের বাইরে ঘেরাও করে রাখলেন তাঁরা। যোগ দেয় পড়ুয়ারাও। সন্ধ্যা পর্যন্ত স্কুলে বিক্ষোভ চলে।

Advertisement

তাঁদের অভিযোগ, জঙ্গলমহলের এই স্কুল আশপাশের বহু গ্রামের ভরসা। কিন্তু লেখাপড়াই দিনদিন এখানে গৌন হয়ে পড়ছে। শিক্ষকদের একাংশ পড়ানোয় সে ভাবে মনযোগী নন। পড়ুয়াদের অভিযোগ, কিছু শিক্ষক দেরিতে ক্লাসে এসে খবরের কাগজ নয়তো নিজেদের মোবাইল ফোন নিয়েই সময় কাটান। পড়া নিয়ে কিছু জানতে গেলে শিক্ষকেরা পরে বোঝাবেন বলে এড়িয়ে যান। এ জন্য সিলেবাসও শেষ হয় না।

স্কুলে মিড-ডে মিলের মান থেকে কিছু ক্লাসে ব্ল্যাকবোর্ড না থাকা, পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের মাটিতে বসানো, ছাত্রাবাসে তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ না থাকা নিয়েও অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

বিক্ষোভকারীদের তরফে সুষেণ চট্টোপাধ্যায়, পুলকেশ কুমারদের অভিযোগ, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ সমস্যাগুলি জেনেও সমাধানের চেষ্টা করছেন না। এ ভাবে কী করে স্কুল চলতে পারে? আমরা চাই এলাকার পড়ুয়াদের স্বার্থে স্কুলে পঠনপাঠনের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসুক।’’

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের দরজায় শিক্ষা বাঁচাও কমিটির ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়ে সেখানে কী রকম অব্যবস্থা চলছে তা মাইকে বলছেন কমিটির সদস্যেরা। শিক্ষকদের ঘিরে রয়েছেন গ্রামবাসী ও পড়ুয়ারা। প্রধান শিক্ষক অমরনাথ বিশ্বাসও স্বীকার করেন, ‘‘কিছু শিক্ষক সম্পর্কে অভিযোগ পেয়ে আমি তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি।’’ পরিচালন সমিতির সভাপতি ত্রৈলোক্য কুমারও বলেন, ‘‘সমস্যা নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করেছি। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককেও জানিয়েছি। কিছুই হয়নি। আমরা কী করব?’’

পরে খবর পেয়ে স্কুলে পুলিশ আসে। দুপুরে আসেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) দফতরের অধিকারিকেরা। তাঁদেরও ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়তে হয়। পরে তাঁদের কাছে গ্রামবাসী স্কুলে পড়ানোর মানের উন্নতি করা-সহ ১৫টি দাবি জানান। খোলা হয় স্কুলের তালাও। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষকদের ছাড়া হয়নি।

জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অলোক মহাপাত্র গিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনার পরে রাত আটটা নাগাদ শিক্ষকেরা ছাড়া পান।

অলোকবাবু বলেন, ‘‘শিক্ষকদের নিয়মানুবর্তি করতে প্রধান শিক্ষককে বিজ্ঞপ্তি দিতে বলছি। তাতে কাজ না হলে আমরা পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেব। অন্যান্য দাবিগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

জঙ্গলমহলের একটি স্কুলের বিরুদ্ধে এলাকার বাসিন্দারা এমন অভিযোগে সরব হওয়ায় উদ্বিগ্ন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘আড়শা উচ্চ বিদ্যালয় সম্পর্কে অভিযোগের কথা শুনেছি। দেখছি কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন