বরাদ্দ থেকে দিতে রাজি রাজ্য

রঘুনাথপুরে কাটল জলপ্রকল্পের জট

বৈঠকেই পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সচিবকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই, বৃহস্পতিবার রাজ্যের শিল্প উন্নয়ন নিগম চিঠি দিয়েছে ডিভিসি-কে।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০১:০৮
Share:

এই করগালি ঘাট থেকেই জল নেওয়া হবে। —নিজস্ব চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের পরে গতি এল রঘুনাথপুর পুরশহরের নতুন জলপ্রকল্পে। দামোদর নদের জল ব্যবহার করে রঘুনাথপুরে এই নতুন জলপ্রকল্প তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছিল প্রশাসন ও পুরসভা। কিন্তু ডিভিসি কর্তৃপক্ষ রাজ্যের অনুমতি ছাড়া দামোদরের জল পুরসভাকে দিতে রাজি ছিল না। সম্প্রতি পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানান রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

বৈঠকেই পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সচিবকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই, বৃহস্পতিবার রাজ্যের শিল্প উন্নয়ন নিগম চিঠি দিয়েছে ডিভিসি-কে। জানানো হয়েছে, রাজ্যের জন্য বরাদ্দ জল থেকে ডিভিসি যদি দৈনিক পনেরো মিলিয়ন লিটার রঘুনাথপুরের জলপ্রকল্পের জন্য দেয়, তাহলে তাঁদের আপত্তি নেই। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘রঘুনাথপুরের নতুন জলপ্রকল্প গড়ার ক্ষেত্রে আর কোনও সমস্যা নেই। আমরা দ্রুত কাজ শুরু করতে চাইছি।”

সূত্রের খবর, রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করছে। বড় জলপ্রকল্প হবে রঘুনাথপুরে। মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) দেবময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নতুন প্রকল্প থেকে রঘুনাথপুর পুরশহরের পাশাপাশি আরও পাঁচটি গ্রামে জল সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে জল দেওয়া হবে রঘুনাথপুরের শিল্পতালুকেও।”

Advertisement

রঘুনাথপুরে বর্তমানে জল সরবরাহ করা হয় জনস্বাস্থ্য দফতরের (পিএইচই) লক্ষ্মণপুরের ইন্দো জার্মান জলপ্রকল্প থেকে। কিন্তু চাহিদা মত জল পুরশহর পায় না বলে দীর্ঘ দিনের অভিযোগ। পুরসভার দাবি, চুক্তি অনুযায়ী রোজ দু’মিলিয়ন লিটার জল সরবরাহ করার কথা। কিন্তু আসলে মেলে এক মিলিয়ন লিটার। গরমের সময়ে সেটা আরও কমে যায়। এ ছাড়া রঘুনাথপুরে ইন্দো জার্মান প্রকল্পের ওভার হেড ট্যাঙ্ক থেকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, যুব আবাস, মোটেল আর কটেজেও জল দেওয়া হয়। ফলে চাহিদা আরও বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহ বাড়েনি।

এই পরিস্থিতিতে জল সরবরাহে পুরোপুরি স্বনির্ভর হতে নতুন প্রকল্প গড়তে উদ্যোগী হয়েছিল পুরসভা। প্রশাসন সূত্রের খবর, ভাবনাটা মূলত মহকুমাশাসকের। পুরসভাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গত বছর নতুন জলপ্রকল্প তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগী হন। প্রথমে স্থির হয়েছিল, নিতুড়িয়া ব্লকের দামোদর থেকে জল নেওয়া হবে। কিন্তু নিতুড়িয়া থেকে রঘুনাথপুরে দূরত্ব অনেকটাই। তাই ঠিক হয়, দামোদরের রঘুনাথপুর ২ ব্লকের করগালি ঘাট থেকে জল আনা হবে।

পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের আধিকারিক, পুরসভার চেয়ারম্যান ও ভূমি দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে কয়েক বার এলাকা পরিদর্শনের পরে চূড়ান্ত ডিপিআর (ডিটেল প্রোজেক্ট রিপোর্ট) তৈরি করা হয়। পাঠানো হয় রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন প্রকল্পে জল আনতে করগালি ঘাট থেকে রঘুনাথপুর পর্যন্ত প্রায় উনিশ কিলোমিটার পাইপ লাইন পাতা হবে। রঘুনাথপুর থেকে তিন-চার কিলোমিটার দূরে রঘুনাথপুর ১ ব্লক এলাকার রক্ষতপুর গ্রামের কাছে এক একর সরকারি জমিতে তৈরি করা হবে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট আর একটি নতুন রিজার্ভার। পরিশোধনের পরে জল সরবরাহ করা হবে রঘুনাথপুর পুরশহর এবং পাঁচটি গ্রামে।

এখন দৈনিক পনেরো মিলিয়ন লিটার জলের বন্দোবস্ত হওয়ায় আশার আলো দেখছে প্রশাসন। মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রঘুনাথপুর পুরশহর এবং পঞ্চায়েত এলাকার জন্য তিন-চার মিলিয়ন লিটার জল পর্যাপ্ত। বাকিটা আমরা চাহিদা মতো রঘুনাথপুরের শিল্পতালুকে সরবরাহ করতে পারব।”

বস্তুত, শিল্পতালুকের জন্যও এই প্রকল্প কাজে আসবে বলে শিল্প উন্নয়ন নিগম রাজ্যের জন্য বরাদ্দ থেকে জল দেওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছে বলে প্রশাসনের অনেকে মনে করছেন। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের পরেই রাজ্য পুর ও নগরোন্নয় দফতরের সচিব ওঙ্কার সিংহ মিনা মহকুমাশাক (রঘুনাথপুর), পুরপ্রধান ও দফতরের পদস্থ কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। রঘুনাথপুরের জল প্রকল্প থেকে শিল্পতালুকে জল সরবরাহ করার বিষয়ে সেখানে একপ্রস্ত আলোচনা হয়। মহকুমাশাসক জানান, দামোদর রঘুনাথপুরের প্রকল্পের জন্য জল বরাদ্দ করার চেষ্টা দীর্ঘ দিন ধরেই চলছিল।

নতুন জলপ্রকল্প হলে রঘুনাথপুরের জল সঙ্কট পুরোপুরি মিটে যাবে বলে মনে করছে পুরসভা। কমবেশি তিরিশ হাজার মানুষের বসবাস রঘুনাথপুর শহরে। বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহের পরিকাঠামো ইতিমধ্যেই বিআরজিএফ তহবিল থেকে তৈরি করা হয়েছে। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘নতুন প্রকল্প শুরু হওয়ার পরে রঘুনাথপুরের ছ’হাজার পরিবারের প্রতিটি ঘরে জল সংযোগ দেওয়া হবে। পর্যটন কেন্দ্রে ও শিল্পতালুকেও কোনও সমস্যা হবে না।”

নতুন প্রকল্পের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন মিলেছে। অর্থ বরাদ্দ করছে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। ডিভিসি প্রাথমিক সম্মতি জানিয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই দরপত্র আহ্বান করে প্রকল্প তৈরির কাজ মাস দুয়েকের মধ্যে তাঁরা শুরু করে দেবেন বলে জানিয়েছেন পুরপ্রধান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন