বৈঠকে জেলাশাসক। নিজস্ব চিত্র
পুরসভার সাফাই কর্মী-সহ ডেঙ্গি মোকাবিলায় যুক্ত থাকা কর্মীদের সবার ছুটি বাতিল করল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। রবিবার জেলা প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও পুরুলিয়া পুরসভার প্রতিনিধিদের বৈঠকে এই মর্মে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চলতি মরসুমে জেলায় প্রথম ডেঙ্গি ধরা পড়ে পুরুলিয়া পুরএলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। তারপর শহরে আরও দু’জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে, যাঁদের এক জনকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জেলায় এখনও পর্যন্ত ১৮ জনের দেহে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে রবিবার জেলাশাসক পুরুলিয়া পুরসভার শুধু পুরপ্রধান বা উপপুরপ্রধানকেই নয়, কাউন্সিলর, স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের ডেকে পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝান। বৈঠকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের সুপার ও জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্তারাও ছিলেন।
জানা গিয়েছে, বৈঠকে জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় পরিস্থিতির বিচারে পুরসভাকে আরও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার জন্য নির্দেশ দেন। যেহেতু জল জমে থাকলেই ডেঙ্গির মশার লার্ভা জন্মায়, তাই জমা জল সাফাইয়ের বিষয়ে ও সচেতনতা প্রচারে আরও বেশি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। জেলাশাসক জানতে চান, পুরসভার কাছে কতজন সাফাই কর্মী রয়েছে? সাতশোর বেশি সাফাই কর্মী রয়েছে জেনে তিনি প্রশ্ন তোলেন— তাহলে সাফাই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন?
বৈঠকের পর জেলাশাসক বলেন, ‘‘পুরসভার সাফাই কর্মী-সহ ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের ছুটি আপাতত বাতিল করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই নির্দেশ পুরসভাকে জানানো হয়েছে।’’ তিনি জানান, পুরসভায় সাতশোর বেশি সাফাই কর্মী রয়েছেন। তাঁদের সবাইকে কাজে লাগিয়ে পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। বুধবারের মধ্যে সমস্ত হাইড্রেন সাফাই করতে হবে। এ ছাড়া মশার লার্ভা মারার যে স্প্রে মেশিনগুলি শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাজ করছে, তার সংখ্যা আরও বাড়ানোর নির্দেশ দেন জেলাশাসক। তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত কাউন্সিলরকে বলেছি আপনাদের নিজেদের এলাকায় নামতে হবে।’’ বৈঠকে হাজির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মূলত কী ভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা হবে এবং সচেতনতার প্রচার করা হবে, তা নিয়ে কথা হয়েছে।’’
তবে পুরপ্রধান সামিমদাদ খান দাবি করেছেন, ‘‘আমরা অনেক আগে থেকে সতর্ক ছিলাম বলেই পুরুলিয়া শহরে এখনও সে ভাবে ডেঙ্গি থাবা বসাতে পারেনি। তবে সাবধানের মার নেই। জেলাশাসকের কথা মতো আমরা দ্রুত শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে জমা জল বের করার কাজ করব।’’ তিনি জানান, জেলাশাসক দু’বেলা সাফাই করতে বললেও, বাস্তবে তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এক বেলাতেই নিবিড় ভাবে সাফাইয়ের কাজ হবে।
উপপুরপ্রধান বৈদ্যনাথ মণ্ডলের আশ্বাস, ‘‘আমাদের লার্ভা মারার স্প্রে মেশিন আটটি রয়েছে। তার মধ্যে সাতটি সচল রয়েছে। জেলাশাসক প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য এই মেশিন কিনতে বলেছেন। আমরা শীঘ্রই মেশিন আনানোর ব্যবস্থা করছি।’’