ভর্তুকির টাকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে সমবায় সমিতির দুই আধিকারিককে গ্রেফতার করল পুলিশ। সাঁইথিয়ার কুনুরি সমবায়ের শনিবারের ঘটনা। ধৃতদের নাম অশোক সাহা ও দেবাশিস ভট্টাচার্য। অশোকবাবু সমবায়ের সম্পাদক আর দেবাশিসবাবু ম্যানেজার। পুলিশ ধৃতদের বিরুদ্ধে ৪২০, ৪০৯, ৪০৬, ১২০বি ধারায় মামলা দায়ের করেছে। রবিবার ধৃতদের সিউড়ি আদালতে তোলা হলে জেল হেফাজত হয়।
সাঁইথিয়া ব্লক কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, কৃষিতে ব্যবহৃত পাম্পসেটের জন্য সরকার ১০ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দেয়। তার জন্য কৃষি দফতরে কেসিসি (কিসান ক্রেডিট কার্ড) ও সংশ্লিষ্ট পাম্প বিক্রেতার কোটেশন জমা দিতে হয়। কুনুরি এলাকার ৭৫ জন কৃষক স্থানীয় সমবায় থেকে কেসিসি এবং সিউড়ির এক সংস্থার থেকে কোটেশন নেয়। তা ব্লক কৃষি দফতরে জমাও দেন। সেই মতো দফতর কৃষকদের ভর্তুকির ১০ হাজার টাকার চেক দিয়ে দেয়। নিয়ম হল এরপরে কৃষকরা ভর্তুকির চেক সহ বাকি টাকা সমবায়ে জমা দেবেন। তারপর সমবায় কোটেশন দেওয়া সংস্থাকে সংশ্লিষ্ট চাষিদের নামে ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) দেবে। এবং ওই সংস্থা চাষিদের কৃষি সামগ্রী ডেলিভারি দেওয়ার পর সমবায়ের থেকে টাকা বা চেক পাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ।
কেমন?
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যে সব কৃষকরা কৃষি দফতর থেকে ভর্তুকির ১০ হাজার টাকার চেক পেয়েছিলেন, তাঁরা সমবায়ে সেই চেক জমা দিয়ে টাকা নিয়ে নিয়েছেন। অর্থাৎ, বরাত পাওয়া সংস্থার পরিবর্তে ভর্তুকির টাকা নিয়ে নিয়েছেন কৃষকেরা। এরপরে গোটা ঘটনা পুলিশকে জানায় বরাত পাওয়া সংস্থা। কৃষি দফতরের এক কর্তার দাবি, ‘‘সমবায় কর্তাদের যোগসাজস ছাড়া এমনটা হতে পারে না।’’ এ দিকে অভিযোগ পেয়ে সমবায়
সিউড়ির ওই কৃষি সামগ্রি বিক্রির সংস্থা সিউড়ি আদালতে অভিযোগ করে যে, কুনুরি সমবায় সংস্থার কেসিসি দেখিয়ে কুনুরি এলাকার ৭৫ জন কৃষক তাঁদের কাছ থেকে পাম্পের কোটেশন নেয়। এবং নিয়মানুযায়ী ওই সমবায়ের পাম্প নেওয়ার কথা থাকলেও কৃষকদের সাথে যোগসাজশ করে সমবায় কোনও পাম্পসেট নেয়নি। আদালতে অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৮ মার্চ চারটি ধারায় মামলা হয়। তারপরেই শনিবার বিকেলে অশোক সাহা ও দেবাশিস ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করা হয়। এত দিন পরে কেন? পুলিশ জানিয়েছে ধৃতদের সন্ধানে খোঁজ চলছিল। অশোকবাবুর দাদা নিখিল সাহা ও দেবাশিস বাবুর বাবা বঙ্কিমবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘মিথ্যা মামলা। চক্রান্ত করে ওদের দু’জনকে ফাঁসানো হয়েছে।’’
ব্লক কৃষি আধিকারিক (এডিও) রাজীব হাজরা বলেন, ‘‘পাম্প না কেনার অভিযোগ পেয়ে ওই সমবায়ের বিরুদ্ধে এক সময় তদন্ত হয়েছিল। তদন্ত রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারই মধ্যে ওই সংস্থা আদালতে মামলা করে। বিষয়টি বিচারাধীন হওয়ায় এ ব্যাপারে কৃষি দফতর আর কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেনি।’’