—প্রতীকী চিত্র।
বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ঝালদা পুরসভার। ত্রিফলা আলো কেনা নিয়ে এ বার তৃণমূল পরিচালিত পুরসভাকেই কাঠগড়ায় তুললেন দলের ঝালদা শহর নেতৃত্ব। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ত্রিফলা আলো লাগানো হলেও পুরসভা বিধি মেনে সেই আলো কেনা হয়নি বলে অভিযোগ তুলে জেলাশাসককে চিঠি দিলেন তৃণমূলের ঝালদা শহর কমিটির সভাপতি দেবাশিস সেন।
ঝালদা পুরসভার অন্দরে দলীয় কাউন্সিলরদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টি নতুন নয়। পুরপ্রধান সুরেশ অগ্রবালের বিরুদ্ধে দলের কাউন্সিলরদের একাংশ বিরোধীদের সঙ্গে অনাস্থা এনেছিলেন গত মে মাসে। প্রশাসন এই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে অনাস্থা বৈঠকের দিনও ঠিক করে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে দলীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে অনাস্থা ঠেকানো গেলেও পুরপ্রধানকে দু’মাসের জন্য ছুটিতে যেতে হয়। পুরপ্রধান ছুটি কাটিয়ে ফিরলেও পুরসভার অন্দরে এখনও দুই পক্ষের ফিসফিসানি অব্যাহত।
এ বার অবশ্য আর কাউন্সিলরেরা নন, পুরসভাকে কাঠগড়ায় তুলেছেন খোদ শাসক দলের শহর কমিটির সভাপতিই। দেবাশিসবাবুর দাবি, গত জানুয়ারি মাসে প্রথমে সুরেশবাবু একশো ত্রিফলা ও দু’টি হাইমাস্ট আলো কিনলেন। পরবর্তীকালে সুরেশবাবু যখন ছুটিতে ছিলেন, তখন উপপুরপ্রধান কাঞ্চন পাঠক আরও দু’শো ত্রিফলা ও তিনটি হাইমাস্ট আলো কিনেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘দু’টি ক্ষেত্রেই এই আলোগুলি কেনার জন্য পুরসভা দরপত্র আহ্বান করেনি। এটা কী ভাবে সম্ভব? পুরসভাকে তো কেনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মানতে হবে। এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। তাই আমি জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছি।’’
জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘ঝালদার অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুরসভার কাছ থেকে টেন্ডারের কপি চাওয়া হয়েছে।’’ কিন্তু দু’টি ক্ষেত্রেই যে টেন্ডার হয়নি, তা স্পষ্ট পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধানের বক্তব্যেই।
পুরপ্রধান দাবি করেছেন, ‘‘গত জানুয়ারি মাসে ত্রিফলা আলোগুলি কিনতে হয়েছিল পরিস্থিতির বিচারে। কারণ তখন ঝালদায় একটি স্কুলের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ঝালদায় এসেছিলেন। সে সময় দ্রুত আলোগুলি ঝালদার রাস্তায় লাগানোর প্রয়োজন ছিল। তখন দরপত্র আহ্বান করার সময় ছিল না। তবে পুরসভায় আলোচনা সাপেক্ষেই আলোগুলি কেনা হয়েছিল।’’ আর পরবর্তীকালে তাঁর আমলে কেনা আলোগুলির বিষয়ে উপপুরপ্রধানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পুরসভায় আলোচনা করেই স্বচ্ছতার সঙ্গেই আলোগুলি কেনা হয়েছিল। তা ছাড়া ঝালদা পুরশহরে ঘুরলেই দেখা যাবে আলোগুলি লাগানো হয়েছে কি না।’’ দেবাশিসবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘পুরসভায় আলোচনা করে কেনা হলেই কি সরকারি বিধি মানা হয়ে যায়?’’
তবে দলের একাংশের বক্তব্য, শহর সভাপতির পুরসভা পরিচালনায় কোনও বিষয় নিয়ে মতামত থাকতেই পারে। কিন্তু তা তিনি দলের অন্দরে জানালেই পারতেন। এতে তো দলেরই ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘ঝালদার পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যে দলের অন্দরে জানিয়েও কোনও লাভ হতো না। তাই বাধ্য হয়েই আমি প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি।’’ তাঁর দাবি, কর্মীরা চাইছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করুন। তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন ঝালদা শহর তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদীপ কর্মকারও। তিনি বলেন, ‘‘দেবাশিসবাবু স্বচ্ছতার প্রশ্নেই এই ঘটনার তদন্ত চেয়েছেন। তদন্ত হতেই পারে।’’