গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানতে নারাজ নেতারা

নানুরে খুনে ধৃত তৃণমূল কর্মী

তৃণমূল নেতা খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে শাসকদলেরই এক কর্মীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বাকি অভিযুক্তদের অধিকাংশও এলাকায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থক হিসাবে পরিচিত। তাই নানুরের তৃণমূল নেতা শামসুল হোদাকে খুনের পিছনে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্বটিই সামনে চলে এসেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

 নানুর শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২০
Share:

তৃণমূল নেতা খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে শাসকদলেরই এক কর্মীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বাকি অভিযুক্তদের অধিকাংশও এলাকায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থক হিসাবে পরিচিত। তাই নানুরের তৃণমূল নেতা শামসুল হোদাকে খুনের পিছনে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্বটিই সামনে চলে এসেছে। স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার সকালে সাওতা গ্রামে নিজের বাড়ির সামনে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন তৃণমূলের ব্লক সদস্য শামসুল হোদা ওরফে ফুলু। দু’টি মোটরবাইকে এসে চার দুষ্কৃতী তাঁকে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে খুন করে চম্পট দেয় বলে অভিযোগ। ওই দিন রাতেই নিহতের ভাই জান-এ-আলম শেখ নানুর থানায় ২৬ জনের বিরুদ্ধে খুনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ রাতেই ঝন্টু শেখ নামে লাগোয়া ফতেপুর গ্রামের এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। শনিবার বোলপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হলে এসিজেএম রাজেশ গুহরায় ধৃতকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। সরকারি আইনজীবী ফিরোজকুমার পাল বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মূলত খুন, আগ্নেয়াস্ত্র মজুত এবং ব্যবহারের মামলা দায়ের করা হয়েছে।’’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঝন্টুকে গ্রেফতারের ঘটনায় নানুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই আরও এক বার প্রকাশ্যে চলে এল। কারণ, দল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শামসুলদের সঙ্গে ঝন্টুদের এলাকা দখলের লড়াই দীর্ঘ দিনের। শামসুল একসময় আরএসপি-র ব্লক কমিটির সদস্য ছিলেন। অন্য দিকে, সিপিএমের প্রভাবশালী কর্মী হিসাবে পরিচিত ছিলেন ঝন্টু। সে সময় গ্রাম দখলকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষ লেগেই থাকত। ২০০৭ সালে সদলবলে তৃণমূলে যোগ দেন শামসুল। প্রায় একই সময়ে তৃণমূলে নাম লেখান ঝন্টুও। শামসুল বর্তমানে তৃণমূলের ব্লক কমিটির সদস্য ছিলেন। আর ঝন্টু গ্রাম কমিটির সদস্য। একই দলের লোক হয়েও দু’জনের মধ্যে বিরোধ কমেনি বলেই বাসিন্দাদের একাংশের দাবি। তবে, নানুরের প্রাক্তন যুব তৃণমূল নেতা কাজল শেখের দাপটে এত দিন তা মাথাচাড়া দিতে পারেনি। কারণ, একসময় দু’পক্ষই কাজল অনুগামী হিসাবে পরিচিত ছিলেন।

Advertisement

দলীয় সূত্রের খবর, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে অবশ্য দু’পক্ষই নানুরের সদ্য প্রাক্তন বিধায়ক তথা দলের বর্তমান জেলা যুব সভাপতি গদাধর হাজরার গোষ্ঠীতে নাম লেখান। বিধানসভা ভোটের পরে কোণঠাসা হয়ে পড়ায় এলাকায় কাজলের নিয়ন্ত্রণ কমে যায়। সেই সুযোগে এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে ফের দু’পক্ষের বিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে বলে মনে করছে পুলিশ। শামসুলের ভাই জান-এ-আলমের অভিযোগ, ‘‘দাদার প্রভাবে ঝন্টুরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। তাই দাদার উপর ওদের প্রবল আক্রোশ ছিল। গ্রামছাড়া সিপিএম দুষ্কৃতীদের নিয়ে ওরাই দাদাকে খুন করেছে।’’

দ্বন্দ্বের কথা উড়িয়ে গদাধর অবশ্য এ দিনও দাবি করেছেন খুনের ঘটনায় তাঁর দলের কেউ জড়িত নেই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এখন সবাই তৃণমূল। তাই খোঁজ না নিয়ে ধৃত বা অভিযুক্তদের রাজনৈতিক পরিচয় কী, তা বলতে পারব না। খুনের পিছনে কারা, তা পুলিশই তদন্ত করে বলতে পারবে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ধৃতকে জেরা করে খুনের বিষয়ে তথ্য বের করার চেষ্টা হবে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজেও তল্লাশি শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন