ফল প্রকাশ হতেই নানা জল্পনা। কেউ বলছেন কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। কেউ বা বলছেন আরও ভাল ফল করা উচিত ছিল। কেউ বা আগের বারের তৃণমূল পরিচালিত বোর্ডের থেকে যা হয়েছে তাতেই সন্তুষ্ট। সব মিলিয়ে রামপুরহাট পুরসভার এ বারে তৃণমূলের ফলাফল নিয়ে শহর জুড়ে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ২০০০ সালে প্রথম দলীয় কাউন্সিলার ছিল ১ জন। পনেরো বছরের ব্যবধানে বাড়তে বাড়তে সেই সংখ্যাটা ১০ এ পৌঁছেছে। এবং ১০ এ পৌঁছানোর পর একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রাপ্তি। রামপুরহাট পুরসভার ৬৫ বছর বয়সে এককভাবে তৃণমূল এবারেই প্রথম ক্ষমতা দখল করতে চলেছে। এটা পুরসভায় ইতিহাস হয়ে থাকবে।
ঘটনা হল, ইতিহাসই হোক আর নজির— জেলার চার পুরসভার মধ্যে রামপুরহাটেই তৃণমূলের ফল খারাপ হয়েছে সব থেকে বেশি। তুলনামূলক ভাবে বোলপুর, সিউড়ি ও সাঁইথিয়ার ফলাফলের চেয়ে ঢের পিছনে পড়ে মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই এলাকা। তৃণমূলেরই এক নেতার দাবি, ‘‘পরিসংখ্যন বলছে, সারা রাজ্যের ফল দেখলেও রামপুরহাটে দলের ফল খারাপ হয়েছে!’’
তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রামপুরহাট শহরে আমরা আরোও দু’ তিনটি ওয়ার্ড আশা করেছিলাম। কিন্তু সব আশাই তো মানুষের পূরণ হয় না!’’ শুধু কোর কমিটি নয়, এ আক্ষেপ জেলার শীর্ষ নেতাদেরও।
জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল অবশ্য প্রথমে ভোট প্রচার দাবি করেছিলেন, ‘‘১৮ শূন্য ফল করতে পারলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে রামপুরহাটের উন্নয়নের জন্য বেশি করে টাকা নিয়ে আসতে পারব।’’ ভোট পরবর্তী ফলাফল বের হওয়ার আগে তাঁর দাবি ছিল, রামপুরহাটে তৃণমূল ১৬-১৭ টা আসন পাবে। কিন্তু বাস্তবে তৃণমূল সর্বসাকুল্যে পেল ১০ টি আসন। যা একক ভাবে বোর্ড গড়ার পক্ষে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা।
এখন কী বলছেন অনুব্রত? ‘‘রামপুরহাটের ১০ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে আমরা যথেষ্ট আশাবাদী ছিলাম। ওই ওয়ার্ডটা হাতছাড়া হওয়াতে খারাপ লাগছে। তবে আর যাই হোক রামপুরহাটে আমরা স্বাধীন ভাবে বোর্ড গঠন করতে পেরেছি। এটাই খুশির খবর।’’
কিন্তু ভোটের হার? সভাপতি এড়িয়ে যান উত্তর।
কিন্তু স্থানীয় নেতৃত্বরা বলছেন, প্রার্থী নিয়ে সঠিক বিবেচনা না হওয়ার জন্য তৃণমূলকে ১০ এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ড নিজেদের জেতা আসন হারতে হয়েছে। আর ২ এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিরোধীদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূল দলের যতটা না ভূমিকা আছে তার থেকে ঐ দুটি ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর দের ঔদ্ধত্য মূলক আচরণ তাদের কে হারিয়ে দিয়েছে । আবার ১২ এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিরোধীদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে দলের রণ কৌশলের সঙ্গে প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ইমেজ এবং ইনফ্লুয়েন্স অনেকাংশে কাজ করেছে বলে অনেক তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন।
আবার রামপুরহাট পুরসভার এবারের রেজাল্ট অনেকাংশে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রভাব ফেললে সেটা খুব একটা তৃণমূলের ভালো হবে না বলে মনে করছেন অনেক তৃণমূল নেতৃত্ব । অথচ রামপুরহাট শহরই কিন্তু গতবার বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় কে ভালো ব্যবধান বাড়াতে সাহায্য করেছিল ।
রামপুরহাটের তিনবারের বিধায়ক তথা মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, ‘‘রামপুরহাট পুরসভা একক ভাবে সংখ্যা দল গরিষ্ঠতা পেয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমূলক কাজের প্রতি মানুষ যে আস্থা রেখেছেন, তার জন্য তাঁদের ধন্যবাদ। কয়েকটি ওয়ার্ডে দলের হার নিয়ে আমরা তদন্ত করব, বিশ্লেষণ করে দেখব ভোটের হার নিয়েও।’’