পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের পড়ুয়াদের জন্য বিশ্বভারতীর স্নাতক স্তরে যে ভাবে আসন সংরক্ষণ করা হচ্ছে, তা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আইনের বিরোধী। এক প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যসভায় এ কথা জানিয়ে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বলেন, “সংরক্ষণের প্রশ্নে ভারত সরকারের যে নিয়ম রয়েছে তাই মেনে চলতে হবে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে।”
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, এ বিষয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত সরকারি ভাবে জানানো হলে আসন সংরক্ষণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করা হবে। উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত বলেন, “রবীন্দ্রনাথের সর্বাঙ্গীন শিক্ষাভাবনার কথা মনে রেখে পাঠভবন এবং শিক্ষাসত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সঙ্গে সমন্বিত রাখার প্রয়াসে ভর্তির বিষয়টি ফের ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করব।”
উপাচার্য জানান, স্নাতক স্তরের ১৬০০ আসনের মধ্যে মাত্র ১৬০টি আসন এখন নির্দিষ্ট থাকে শিক্ষাসত্র এবং পাঠভবনের পড়ুয়াদের জন্য। তিনি বলেন, “বিশ্বভারতী যে হেতু কেন্দ্রীয় অনুদান পায়, তাই কেন্দ্রীয় সরকার নির্দিষ্ট সংরক্ষণের ব্যবস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশ মানতে আমরা বাধ্য। তবু আমাদের তরফ থেকে বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ রাখা হবে।” একই সঙ্গে উপাচার্য জানিয়েছেন, এ বছর স্নাতকস্তরে ভর্তি হবে জুলাই মাসে। তার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় ভর্তির নিয়মে কোনও রদবদল এ বছরে আর করা যাবে না।
দীর্ঘ দিন ধরেই বিশ্বভারতীতে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের পড়ুয়ারা স্নাতক স্তরে আসন সংরক্ষণের সুবিধে পেতেন। সেই ব্যবস্থা তুলে দিয়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পড়ুয়া ভতির উদ্যোগ নিয়েছিলেন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত। গত নভেম্বরে এ বিষয়ে শিক্ষা কমিটিতে প্রস্তাব আনার পরেই ছাত্র-অভিভাবক এবং শিক্ষক ও কর্মীদের একাংশের ধর্না-বিক্ষোভ শুরু হয়। জানুয়ারির শেষ থেকে দু’সপ্তাহ কর্মবিরতি চলে। ৬ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যকে তাঁর বাসভবনে ঘেরাও করা হয়। লাগাতার অচলাবস্থার জেরে পিছু হটতে হয় বিশ্বভারতীকে। ভর্তির বিষয়ে বহাল থাকে আগের ব্যবস্থাই। স্মৃতির বক্তব্যের পরে ফের অনিশ্চয়তা দেখা দিল।
কী বলছেন আন্দোলনকারীরা? জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির পক্ষে কিশোর ভট্টাচার্য ও আনন্দদুলাল মিত্র বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চিন্তাধারা বিশ্বভারতীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এর সুষ্ঠু সমাধান করবেন বলে আশা রাখি।”
উপাচার্য জানিয়েছেন, বিশ্বভারতীর লাগাতার আন্দোলন নিয়ে মেঘালয়ের এক কংগ্রেস সাংসদের একটি প্রশ্ন কেন্দ্রীয় মানব উন্নয়ন মন্ত্রক পাঠায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছে। তাতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ যে উত্তর পাঠান তার ভিত্তিতেই মন্ত্রী রাজ্যসভায় এ কথা জানিয়েছেন।