ট্রেজারির দেওয়া চেক ভর্তি চিঠি হারিয়েছে ডাকঘর। তাই মাসের প্রায় অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও এখনও পেনশন পেলেন না অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীরা। পরিস্থিতি সামলে উঠে কবে তাঁরা পেনশনের টাকা পাবেন তার সঠিক জবাব নেই জেলা প্রশাসনের কাছেও। শালতোড়া ব্লকের ঘটনা।
বাঁকুড়া ট্রেজারি সূত্রে খবর, স্কুল শিক্ষক-সহ রাজ্য সরকারের পেনশন ভুক্ত অন্তত ২০০ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর প্রায় ২৪ লক্ষ টাকার চেক ও নামের তালিকা ‘স্পিড পোস্ট’-র মাধ্যমে শালতোড়ার ইউবিআই ব্যাঙ্কে পাঠানো হয়েছিল গত ২১ জানুয়ারি। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত সেই চেক ও তালিকা ব্যাঙ্কে পৌঁছয়নি।
তাহলে সেই চিঠি গেল কোথায়? বাঁকুড়া জেলা মুখ্য ডাকঘরের সিনিয়র পোস্ট মাস্টার স্বপন কর বলেন, “গত ২১ জানুয়ারি ওই চিঠি শালতোড়ার ডাকঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।” এ দিকে শালতোড়ার ডাকঘরে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি নিজেকে সেখানকার অস্থায়ী পোস্ট মাস্টার হিসেবে জানিয়ে বলেন, “আমি এখানের কাজকর্ম কিছুই জানি না। যিনি দায়িত্বে থাকেন ব্যক্তিগত কারণে তিনি ছুটি নিয়েছেন। ট্রেজারির একটা চিঠি এসেছে বলে শুনেছি। তবে সেই চিঠি কোথায় আছে আমি বলতে পারব না।”
শালতোড়া ইউবিআই কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ট্রেজারি পেনশনভোগীদের পাওনা টাকা ও নামের তালিকা তাদের কাছে পাঠায়। সেই টাকা অ্যাকাউন্টে জমা করার পরে পেনশনভোগীরা তা তুলতে পারেন। কিন্তু চলতি মাসে এখনও সেই টাকা বা তালিকা ব্যাঙ্কে এসে পৌঁছয়নি।
এ দিকে পেনশন না পেয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে শালতোড়ার প্রাক্তন সরকারি কর্মীদের মধ্যে। অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক শালতোড়ার বাসিন্দা প্রভাস দাসের বিস্ময়, “এত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে পোস্ট অফিস ভুল করে কী করে! এই ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তা না হলে ভবিষ্যতেও এই রকম কর্মীর দায়িত্বজ্ঞানহীনতার খেসারত আমাদের দিতে হবে।” শালতোড়ার মুরলু গ্রামের আর এক অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক প্রফুল্ল পরমাণিক বলেন, “পেনশনের উপরেই আমাদের ভরসা। এ মাসে তা না পাওয়ায় সেটাও এই মাসে পেলাম না, খুব বিপাকে পড়ে গিয়েছি।”
তাহলে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা কি এ বার পেনশন পাবেন না? এই প্রশ্নের উত্তরে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, প্রক্রিয়াটি জটিল। ডাকঘরকে আগে থানায় চেক হারানোর অভিযোগ করতে হবে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ট্রেজারিকে একটি রিপোর্ট দেবে। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই ফের চেক দেওয়া সম্ভব। তাঁর কথায়, “প্রায় ২৪ লক্ষ টাকার ব্যাপার। চাইলেই নতুন করে চেক লিখে দেওয়া যায় না।” চলতি মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ হয়ে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা পেনশন পাবেন বলে কোনও আশ্বাস দিতে পারেননি তিনি।
জেলা সিনিয়র পোস্ট মাস্টার স্বপনবাবু অবশ্য ঘটনাটি খতিয়ে দেখে দ্রুত পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “শালতোড়া ডাকঘরে ট্রেজারির চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও কী করে এই ঘটনা ঘটল তা আমরা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।”