রাজ্যে ১০০০টি পঞ্চায়েতকে ‘নির্মল’ ঘোষণা করা হলেও, তার কতগুলি প্রকৃত অর্থে নির্মল তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেন খোদ এনআরজিএসের রাজ্য কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার। রবিবার তিনি বাঁকুড়া ১ ব্লকের আদিবাসী প্রধান হরেকৃষ্ণপুর গ্রামে শৌচাগার ব্যবহারের সচেতনতার একটি অনুষ্ঠানে এসে এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “রাজ্যের প্রায় ৩,৩৪০ পঞ্চায়েতের মধ্যে অন্তত ১০০০ পঞ্চায়েতকে নির্মল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আদপে সেগুলি শুধু কাগজে কলমেই নির্মল হয়েছে। বাড়িতে শৌচালয় থাকলেও এখনও ওই সব পঞ্চায়েতের মানুষ খোলা মাঠেই শৌচকর্ম করতে যান।” তিনি জানান, “নদিয়া, বর্ধমানে অধিকাংশ বাড়িতেই শৌচালয় রয়েছে। কিন্তু অনেকেই তা ব্যবহার না করে মাঠেই যান। এ ভাবে গ্রাম নির্মল হতে পারে না।” সরকারি আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা ক’টা শৌচালয় গড়লেন তা গুনতে যাবেন না। বরং গুনবেন ক’টা গ্রামকে প্রকৃত অর্থে নির্মল করতে পারলেন।”
মাস দুয়েক আগে হরেকৃষ্ণপুর গ্রামে এসে তিনি খোলা মাঠে চকের গুঁড়ো ও রঙ দিয়ে গ্রামের মানচিত্র এঁকেছিলেন। সেখানে গ্রামবাসীরা যেখানে শৌচকর্ম করেন, সেই জায়গা থেকে কী ভাবে মাছি, বিভিন্ন পোকা ও মানুষের পায়ের মাধ্যমে জীবানু ভাতের থালা পর্যন্ত আসছে তা বুঝিয়ে ছিলেন। এই সব জীবানু থেকে গ্রামের শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের কী ক্ষতি হতে পারে সেই দিকটিও তিনি তুলে ধরেছিলেন। বস্তুত গত অক্টোবর থেকেই এই গ্রামকে ‘নির্মল গ্রাম’ করার লক্ষ নেয় জেলা প্রশাসন। সম্প্রতি গ্রামের ৭২টি আদিবাসী পরিবারে শৌচালয় তৈরি করে দেওয়া হয়। গ্রামবাসীরা মাঠে শৌচকর্ম ত্যাগ করবেন বলে আধিকারিকদের সামনে পানের পাতা হাতে নিয়ে শপথ নিয়েছেন। তবে শুধু শপথেই থেমে থাকতে নারাজ আধিকারিকেরা। তাই এ দিন শৌচালয় ব্যবহার করার বিষয়ে তাঁরা সচেতন করেছেন।
মাস দুয়েক আগে তাঁর বোঝানোতে গ্রামবাসীরা যে সচেতন হয়েছেন, এ দিন তার প্রমাণও পেলেন দিব্যেন্দুবাবু। গ্রামবাসী হরিদাস টুডু, সহদেব টুডুরা বলেন, “মাঠে শৌচকর্ম করলে আখেরে আমাদেরই ক্ষতি, এতদিনে তা বুঝেছি। আমরা শৌচালয় ব্যবহার করব।” গ্রামের বধূ কমলি টুডু, চৈতালি টুডুরা বলছেন, “খোলা মাঠে শৌচকর্ম করলে জল দূষিত হয়। সেই জল পান করে মানুষ থেকে গবাদি পশুও ক্ষতি। শৌচালয়ে আমাদের সম্ভ্রমও রক্ষা পাবে। আমরা শৌচালয় ব্যবহার করব।” এই অনুষ্ঠানে ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) পার্থ ঘোষ, বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, এনআরইজিএসের জেলা প্রকল্প আধিকারিক বাবুলাল মাহাতো, বাঁকুড়া ১ বিডিও সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। সব দেখে দিব্যেন্দুবাবু জানিয়ে গেলেন, এই গ্রাম ‘নির্মল গ্রাম’ হিসেবে ঘোষণা হওয়ার দিকে এক পা এগিয়ে গেল।